অদ্বৈতবাদ ধর্মের প্রবক্তা মেহেরপুরের স্বামী নিগামানন্দ

নিজস্ব ধর্মের প্রবক্তা স্বরস্বতি নিগামানন্দের অনুসারীদের পদচারনায় মুখরিত থাকে কুতুবপুরের বিশাল মন্দির। শুধু বাংলাদেশ নয়, পার্শ্ববর্তি দেশ ভারত ও নেপাল থেকেও প্রচুর পরিমান ভক্ত প্রতি বছর আসেন তাদের দেবতার এই প্রিয় তীর্থধামে। বছরের শ্রাবণের ঝুলন তীথিতে বসে ধর্মীয় সভা।

ধর্মীয় সভাতে হিন্দু, মুসলিম, খ্রষ্ট ধর্মের প্রবক্তারা এখানে আসেন। দিনভর চলে ধর্মীয় জ্ঞান গর্ব আলোচনা। এসব ধর্মীয় গুরুদের পদচারনায়ও স্বরব হয়ে ওঠে পুরোধাম। এভাবেই দেবতার বিষয়ে বর্ণনা করেন নিগামানন্দ কমিটির সভাপতি স্বামী অলকানন্দ স্বরস্বতি।

সদগুরু পরিব্রাজকাচার্য শ্রী স্বামী নিগামানন্দ স্বরস্বতি পরমহংসদেবের সেবায়েতের দায়ীত্ব পালনকারী স্বামী অলকানন্দ স্বরস্বতি আরো জানালেন আমরা যারা স্বামী নিগামানন্দ স্বরস্বতির ধর্ম অদ্বৈতবাদে বিশ্বাস করি তারা বিয়ে করতে পারিনা। বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালন করলে তারা এ ধর্ম থেকে অযোগ্য বিবেচিত হবে। তাদের বের করে দেয়া হয়।
স্বামী অলকানন্দ স্বরস্বতি বলেন, স্বামী নিগামামনন্দের মেহেরপুরের মুজিবনগরের দারিয়াপুর গ্রামে তার মাতুলালয়ে। তারপর সে পিত্রালয় কুতুবপুরেই মারা যান।

নিজস্ব ধর্মের প্রবক্তা স্বরস্বতি নিগামানন্দের অনুষারীরা কখনোই বিয়েতে বিশ্বাস করেনা। বিয়ে করলে সে অদ্বৈতবাদ ধর্ম থেকেই বাদ পড়বে।

স্বরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১৩৩২ সালে কুতুবপুরে নির্মিত এই বিশাল মন্দিরে এলাকার হিন্দু ধর্মীয় লোকজন উপাসানলয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন।

বিশাল আকারের এই মন্দিরের উপরীভাগে রয়েছে কারুকার্যে ভূষিত অপূর্ব নির্মাণ শৈলী। মন্দিরের অপর প্রান্তে নির্মাণ হচ্ছে ৪ তলা বিশিষ্ট ভক্ত নিবাস। নিগামানন্দের নামে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি থাকলেও সেটি দখল হয়ে বর্তমানে মাত্র ৭৪ শতক জমি রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, কুতুবপুরে দেবতার আশ্রমের পাশেই ছিলো একটি দাতব্য চিকিৎসালয়। সেখানে তৎকালিন সময়ে এমবিএস চিকিৎসক দিয়ে এলাকার গরীব রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হতো। এখন কালের পরিক্রমায় সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাড়িয়ে আছে চিকিৎসালয়টি।

এছাড়া দেবতার নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১২ টি আশ্রম রয়েছে। এছাড়া রয়েছে স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত এই গুরু মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের ভূবন মহন চট্টোপধ্যয় এবং মা মানিক সুন্দরীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবন শেষে কিছুদিন চাকুরীও করেছেন। পরে চাকুরী ছেড়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন তীর্থস্থানে ঘুরেছেন। গভীর জ্ঞান নিয়ে ফিরে আসেন কুতুবপুরের পিত্রালয়ে। ১৩৩২ সালে কুতুবপুরে একটি বিশাল মন্দির নির্মাণ করে উপাসানলয় হিসেবে। সারা বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল, নেপাল ও শ্রীলংকা থেকে প্রতিবছর প্রচুর ভক্ত আসেন।

মন্দিরের সেবায়েত শ্রী লক্ষিকান্ত ব্রমচারী জানান, দেশের বিভিন্ন আশ্রমে প্রায় ৪৫ জন সেবায়েত এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও শুধু মাত্র ধর্মীয় অনূভূতির কারনে বিয়ে না করে এ ধর্ম পালন করছেন।