অনলাইন জুয়ার আরও তথ্য মিলল মুজিবনগরের চার এজেন্টের কাছে

তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে অনলাইন জুয়ার আদ্যপ্রান্ত তথ্য দিলেন মেহেরপুর শহরের এবি ক্যাফে থেকে আটক ৪ অনলাইন জুয়াড়ী। তারা হলেন, অনলাইন জুয়ার এজেন্ট- মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের সাইদুর ইসলাম (২২), জাহাঙ্গীর আলম (২৫),রফিকুল ইসলাম (৪১) এবং সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের সুমন খন্দকার (৩৬)।

জুয়া মামলার তদন্ত অফিসার মেহেরপুর সাইবারক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের প্রধান উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান গত ২৯/১১/২০২২ তারিখে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত গত ৩০/১১/২০২২ তারিখে শুনানী শেষে তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমাণ্ডে  অনলাইন জুয়ার আরেক হোতা গোপালপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে স্বপন (২৮) এর কথা স্বীকার করেছে। স্বপন অনলাইন জুয়া চ্যানেল ক্রয়-বিক্রয়ের হোতা হিসেবে কাজ করে।

আদালতের আদেশ পাওয়ার পর আসামি রাজু আহম্মেদ ওরফে রাজন (২০) ও সজীব আহম্মেদ (২৫) কে ৩ দিনের রিমান্ড নেওয়া হয়। রিমান্ডে তারা জুয়া খেলার আদ্যপ্রান্ত নিয়ে নানা তথ্য প্রদান করেন। সে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, অনলাইন জুয়ার মাস্টারমাইন্ড বদরুদ্দোজা ওরফে রয়েল ও প্রসেনজিৎ হালদার তার অনলাইন জুয়ার ব্যবসায়ীক পার্টনার। অনলাইন জুয়ার তিনটি চ্যানেলের মালিক সে। তার একটি চ্যানেল রাজন নগদ মেলবেট প্রসেনজিত হালদার চালাতেন। কিন্তু প্রসেনজিত হালদার গ্রেফতারের পর পলাতক সাহেবপুর গ্রামের কাইজার আলীর ছেলে রতন মিয়া (৩০) গোপনে চালাচ্ছে। তার অপর চ্যানেলটি লোকা নগদ লাইনবেট পুলিশের অনবরত অভিযানে ফলে তার অন্য সাব এজেন্ট সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের বখতিয়ার খালেদ বুলবুল(৩০) এর নিকট ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। তিন নং চ্যানেল সিআর-৭ মেলবেট রকেট আর্ণব আহমেদ ওরফে মোমিন (২৭) এর কাছে আছে। এছাড়া সে জানায় তার অনলাইন জুয়া কারবারে ব্যবহৃত সিমকার্ডগুলো গ্রেফতারকৃত সজীব আহম্মেদের সহযোগীদের দিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে।

রাজন আরো বলেন, অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অবৈধ ই ট্রানজেকশনের জন্য চারটি গ্রুপকে একত্রিত হয়ে হয়। প্রথম গ্রুপের সদস্যরা রাশিয়ান সাইন ১এক্্রবেট এবং মেলবেট এজেন্ট হওয়ার জন্য কাজ করে। দ্বিতীয় গ্রুপটি প্রথম গ্রুপ এজেন্ট হওয়ার প্রাপ্ত চ্যানেল ডলার বা ই মানি সংগ্রহের কাজ করে। তৃতীয় গ্রুপ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট সিম কার্ড সংগ্রহের কাজ করে। চতুর্থ গ্রুপ জুয়া পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ ই ট্রানজেকশন করে। এই সব গ্রুপগুলো একে অপরের পরিপুরুক হিসেবে কাজ করে। এজেন্ট হওয়ার জন্য রাশিয়ান সাইন ১এক্্রবেট এবং মেলবেট এর এডমিন গ্রুপের সাথে মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়।

যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তাদের ভেরিফাইড মেইলে এজেন্টশীপ হওয়ার জন্য মেইল করে। তাদের মেইল করার জন্যও একটি ফরমেট আছে। এজেন্টশীপের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র সংবলিত ছবি এজেন্টের বর্তমান ছবি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ছবি ও ভিডিও দিতে হয়। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মীদের নাম ঠিকানাসহ ছবি ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবসায়ীক ব্যাংক এস্টেমেন্ট এর স্ক্যান করা কপিসহ আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র পাঠাতে হয়। এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এজেন্টশীপ দেওয়ার বিষয় সন্তোষজনক মনে হলে তারা তাদের বাংলাদেশের প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুমতি দেন। তাদের রাশিয়ান সাইন ১এক্্রবেট এবং মেলবেট এর বাংলাদেশের প্রতিনিধির একটি লিংক দেন।

পরে বাংলাদেশের প্রতিনিধির সাথে টেলিগ্রামে কথা বলে তাদের সম্মতিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধির সাথে কথোপকথনের স্কিন শর্ট তাদের টেলিগ্রামে পাঠাতে হয়। পরে তাদের বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেন। এই ইউজার এবং পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে রেড্ডি নামক এ্যাপলিকেশন এবং মেনেজমেন্ট.আইও ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা হয়। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পর প্রয়োজন হয় ব্যালেন্স প্রবেশ করানো এবং অবৈধ ই ট্রানজেকশনের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং সিমকার্ড। সে কয়েকজন এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে এই অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছে।

রিমান্ডের অপর আসামি সজিব খান বলেন, সে গ্রেফতারকৃত বদরুদ্দোজা ওরফে রয়েল ও পলাতক নাসির শাহ (২৮) এর সাথে ব্যবসায়ীক পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সে অনলাইন চ্যানেল চালানোর পাশাপাশি অবৈধ এজেন্ট সিমকার্ড সংগ্রহের কাজ করে। এলাকা এবং রাজশাহী থেকে এজেন্ট সিম কার্ড সংগ্রহ করে বলে স্বীকার করে সে। এসব এজেন্ট সিমকার্ড দিয়েই অনলাইন জুয়ার অবৈধ ই ট্রানজেক্শন করে। বেশ কিছু অবৈধ এজেন্ট সিমকার্ড ও তার মালিকের নাম ঠিকানাও জানিয়েছে সে। সজীব খান জানিয়েছে, একটি অবৈধ এজেন্ট সিমকার্ডের মালিককে মাসিক ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়।

তদন্ত অফিসার মনিরুজজামান তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, দুই আসামি রিমান্ডে ১৬১ ধারায় জবানবন্দী দিলেও ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি শহরের কাথুলী সড়কের এবি ক্যাফে রেস্টুরেন্ট অভিযান চালিয়ে মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের সাইদুর ইসলাম (২২), জাহাঙ্গীর আলম (২৫),রফিকুল ইসলাম (৪১) এবং সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের সুমন খন্দকার (৩৬)আটক করা হয়।
এসময় তাদের কাছে থেকে ৫টি মোবাইল ফোন, অনলাইন জুয়ার সাইট পরিচালিত ২টি নগদ ও বিকাশের এজেন্ট সিম, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং ১০টি সিম উদ্ধার করেছে পুলিশ।

অনলাইন জুয়ার আরও সংবাদ

মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার দূর্গে হানা