অনলাইন জুয়ার হোতা ময়না মেম্বরের সাব এজেন্ট শিমুল গ্রেফতার

অনলাইন জুয়ার দূর্গ মুজিবনগরের কোমরপুরে অভিযান চালিয়ে মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ময়না মেম্বারের সাব এজেন্ট জিহাদ আলী ওরফে শিমুল (১৯) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার রাত ১২ টার দিকে মুজিবনগর থানার ওসি মেহেদী রাসেল ও মেহেরপুর সাইবার ক্রাইম অপরাধ বিভাগের এস আই এস এম মনিরুজ্জামান মিলনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম কোমরপুর গ্রামে জিহাদ আলীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত জিহাদ আলী গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে। তাকে ২৫ আগস্টের বদরুদ্দোজা ওরফে রয়েলের ১১ নম্বর মামলার আসামি দেখানো হয়েছে।

শিমুল একাধারে ময়না মেম্বরের পাশাপাশি মেহেরপুরিয়ান সপের মালিক মাসুদ, রুবেল, নাসির শাহ ও মহাজনপুরের হেলালের সাব এজেন্ট হিসেবেও কাজ করতো।

গতকাল শনিবার বিকালে মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক এস এম শরিয়ত উল্লাহ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করেন। জিহাদ আলী প্রথমে ময়না মেম্বার, মাসুদ ও রুবেলের সাব এজেন্ট পরিচালনা করতো এবং পরে গোপালপুরের নাসির শাহ এবং মহাজনপুরের হেলালের সাব এজেন্ট হিসেবে মাসিক বেতনে কাজ করতো বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
এদিকে পুলিশ জানায়, জিহাদ আলী ওরফে শিমুলের কাছে থেকে একটি রেডমি নোট টেন এস ব্যাণ্ডের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। যে মোবাইলে ০১৮৩২-৫৩০৯১৫ ও ০১৯৮৮-২৩২৯৯৫ নম্বরের দুটি সিম ছিলো। মোবাইলে অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারী রেড্ডি অ্যাপসে সাব এজেন্ট ৮৪৪২ এ ৮লাখ ৬৮৮৫৯ টাকা ব্যালেন্স ছিলো। অনলাইন জুয়ার চ্যানেল ফাজনাত নগদ এ ৬ লাখ ৬৮ হাজার৬৩৬ টাকা, ফাজনাত উপায় এ ৮লাখ ৭হাজার ৯০৩ টাকা ব্যালেন্স পাওয়া যায়। এসময় আসামী শিমুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে জানায়, সে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন জুয়ার চ্যানেল মালিক কোমরপুর গ্রামের আনছার মেম্বারের ছেলে বর্তমান মেম্বও ময়নদ্দিন ওরফে ময়না মেম্বার, বলিয়ারপুর গ্রামের মুনসুর আলীর ছেলে মো: মাসুদ, কোমরপুর গ্রামের আনারুলের ছেলে রুবেলের চ্যানেলের সাব এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো। পরবর্তিতে পুলিশের অভিযান শুরু হলে তাদের কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিতে গোপালপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে নাসির শাহ ও মহাজনপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার বাটুলের ছেলে হেলালের ওয়ান এক্স বেটের সাব এজেন্ট হিসেবে বেতনভুক্ত হয়ে কাজ করতো এবং মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতন পেতো। বর্তমানে ওয়ান এক্স বেটের ফাজনাত বিকাশ, ফাজনাত উপায় ও ফাজনাত নগদ নামে তিনটি অনলাইন জুয়ার সাব এজেন্ট পরিচালনা করছিলো।

পুুলিশ আরো জানায়, জিহাদ আলী ব্যবহৃত সাব এজেন্টের সিমগুলো ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, রংপুরসহ কয়েকটি জেলার নাম দিয়ে বিকাশ/উপায়/নগদ এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে অনলাইন জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতিত অবৈধ ই ট্রানজেকশনের মাধ্যমে রাশিয়ান অনলাইন জুয়া সাইট ওয়ান এক্স বেট ও মেলবেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোটি কোটি টাকা পাচার করছেন অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতরা। আর এ কাজে সহযোগীতা করছেন মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় এর সাথে সেলস প্রতিনিধিরা। তারা মোটা টাকার বিনিময়ে জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে অনলাইন জুয়ার এজেন্টের এজেন্ট সিম সরবরাহ করছেন।

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর, মহাজনপুর, গোপালপুর, সদরের টুঙ্গী, মেহেরপুর শহর, গাংনীর গাড়াডোবসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে অনলাইন জুয়ার দূর্গ গড়ে উঠেছে। এসব দূর্গে পুলিশ হানা দিয়ে এ পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের অভিযানের পাশাপাশি মেহেরপুর প্রতিদিনও ধারাবাহিকভাবে অনলাইন জুয়ার আদ্যপান্ত নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আসছে। ফলে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতরা একরকম কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন, অনেকেই রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা থেকে দুই শতাধিক এজেন্ট অনলাইন জুয়া সাইটের মাধ্যমে রাশিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছেন শত শত কোটি টাকা। আর এই অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত মেহেরপুরের সরকার দলীয় কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, মুজিবনগরের প্রভাবশালী একজনপ্রতিনিধি, একজন ইউপি সদস্য, সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতা, স্কুল ও কলেজের কয়েকজন শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেনীর প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তি।

কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং কয়েকজন সাংবাদিক নিয়মিত মাসোহারা নিতেন অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতদের কাছে থেকে। তাদের মাসোহারা দিয়ে দেদারছে জুয়া খেলে কোটিপতি বনে গিয়েছেন এসব এজেন্টরা। আর পথে বসছেন হাজার হাজার তরুণসহ জুয়া খেলার জড়িত ব্যক্তিরা। মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানীতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সামাজিক মর্যাদার কারণে ক্ষতিগ্রস্থদের নাম পরিচয় দেওয়া হলো না। তবে মেহেরপুর প্রতিদিনে ধারাবাহিকভাবে এসকল অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ হলে মাসোহারা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যারা মাসোহারা নিতেন তাদেরও দুর্দিন যাচ্ছে। কোন রাজনৈতিক নেতা, কোন সাংবাদিক কতটাকা মাসোহারা নিয়েছেন তা মেহেরপুর প্রতিদিনের বিভিন্ন সংবাদে উঠে এসেছে। ক্রমান্বয়ে আরো উঠে আসবে।

অনলাইন জুয়ার সকল সংবাদ পড়ুন নিচের লিঙ্কগুলোতে

অনলাইন জুয়ার আরেক হোতা রাজন স্বর্ণকার আটক

এবার মেহেরপুর শহর থেকে আটক অনলাইন জুয়ার আরও চার এজেন্ট

মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরো চার হোতা আটক

মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরেক মাস্টারমাইণ্ড সজিব আটক

অনলাইন জুয়ার শীর্ষ এজেন্ট শামিম কারাগারে

মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরও এক মাস্টার এজেন্ট পলাশ

অনলাইন জুয়ার এজেন্ট শামিমকে নিম্ম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

মেহেরপুরের অনলাইন জুয়ার শীর্ষ এজেন্ট শামিম অধরা

মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরেক এজেন্ট সাদ্দাম আটক

অনলাইন জুয়ার হোতা নুরুল ও জামানকে শোকজ

ধরাছোঁয়ার বাইরে অনলাইন জুয়ার অন্যতম চার হোতা মুকুল-জামান-নুরুল-মাদার

মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার মাস্টারমাইণ্ড প্রসেনজিৎ সহযোগীসহ আটক

মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার দূর্গে হানা