অনিয়মই যার কাছে নিয়ম

চুয়াডাঙ্গা ফাযিল মাদরাসার সহকারি শিক্ষক (কৃষি) ওয়াহেদ মো. রাশেদীন আমিন প্রতিষ্ঠানের পাবলিক পরীক্ষায় অবৈধ অর্থ আদায়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে নানা অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তিনি প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার কারণে সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছেন। অভিযুক্ত রাশেদীন আমিন সাংবাদিক পরিচয়ে অনেকের সাথেই প্রতারণা করেছেন বলেও শহরে গুঞ্জন রয়েছে। ওই শিক্ষকই সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠান (চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদরাসা, বিটিভি ও বাসস) উত্তোলন করেন বেতন-ভাতা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাশেদীন আমিন চুয়াডাঙ্গা ফাযিল মাদরাসায় যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ওই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় তিনি অসদূপায় অবলম্বন করে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার কথা বলে অর্থ আদায় করে থাকেন।

এসব কারণে অনেক শিক্ষার্থী অভিমান করে পরবর্তিতে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষার্থী বলেন, চুয়াডাঙ্গা ফাযিল মাদরাসায় যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা হলেই পরীক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের কৃষি শিক্ষকের দ্বারা নানাভাবে শোষিত হতে থাকে। তারা বলেন, তিনি পরীক্ষার হলে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলে এবং কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট আসবে না বলে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন।

এছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষায় বাড়তি নম্বর দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কৌশল করে অর্থ আদায় করে থাকেন। কয়েক বছর আগে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী চুয়াডাঙ্গা ফাযিল মাদরাসার ৯ জন মেধাবি পরীক্ষার্থীর নিকট নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার উত্তরপত্র সেট কোড পরির্তন করে তাদের পাশ করার পথ রুদ্ধ করে দেন। তাদের অপরাধ ছিল ওয়াহেদ মো: রাশেদীন আমিনের চাহিদা মত টাকা দিতে না পারা।

এসব অভিযোগ অবগত হয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে তাকে (ওয়াহেদ মো. রাশেদীন আমিন) সকল পাবলিক পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে লিখিত নির্দেশ দেন। যার স্মারক নং-ইআবি/ফাজিল পরীক্ষা/২০১৮/৮০৮ তারিখ-০৮.১০.২০১৮খ্রিঃ।
চুয়াডাঙ্গা ফাযিল মাদরাসার অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কৃষি শিক্ষক রাশেদীন আমিন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস নেন না।

তিনি সকালে মাদারাসায় এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার পর তার গোত্রের কয়েক শিক্ষককে নিয়ে গল্প-গুজবে মত্ত হয়ে পড়েন। প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাহিক সমাবেশে তার অনুপস্থিতি নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রায় দিনই তিনি নানা অজুহাতে ২/৩ পিরিয়ড পরে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ তাকে কিছু বলতে সাহস পান না।

জাতীয় দিবসগুলোতে দূর দূরান্তের শিক্ষকরা মাদরাসায় আসলেও তিনি নিজ ক্ষমতা বলে মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকেন। মাদরাসায় চাকুরী করার পাশা-পাশি বাসস ও বিটিভি’র ভয় দেখিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় নিয়োগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শহরের একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে রাশেদীন আমিনের দু-জন নারী নিকট আতœীয় ইয়ার ফোনের মাধ্যমে নকল করে পরীক্ষা দেওয়ার অপরাধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের দু-জনকে ৭ দিনের শাস্তি প্রদান করেন। সেই শাস্তি মওকুফ করার জন্য অপকৌশল অবলম্বন করে রাশেদীন আমিন সেই দু-জন অবিবাহিত নারীকে আদালতের কাছে গর্ভবতী বলে উপস্থাপন করেন।

রাশেদীন আমীন বাংলাদেশ সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠান (চুয়াডাঙ্গা ফাযিল মাদরাসা, বিটিভি ও বাসস) থেকে কিভাবে বেতন-ভাতা ভোগ করেন সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সে সময় দুদক কুষ্টিয়া অফিস তাকে তলব করেন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে জবাব দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তলব করা চিঠির স্মারক নং- ৯৯৯, তাং- ১৯-০৯-১৮ ইং।

শোনা যাচ্ছে, দুদকের পত্রে তার অর্জিত সম্পদের যথাযথ বিবরণ ও অর্জনের উৎস ব্যাখ্যাসহ দুদক কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাশেদীন আমিন তার অর্থ আয়ের উৎস হিসেবে মৎস্য খামারের কথা উল্লেক করলেও স্থানীয় মৎস্য বিভাগ তার কোনো মৎস্য খামার নেই বলে জানান।

এসব বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মীর মো. জান্নাত আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি কাউকেই মানেন না। তাকে আমরা কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। একজন মাত্র শিক্ষক রাশেদীন আমিনের কারনেই মাদরাসার শিক্ষকদের মধ্যে নানা মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি দু-একটি পাবলিক পরীক্ষায় রাশেদীন আমিন দায়িত্ব পালনের নামে অনৈতিক অর্থ আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি ফাযিল-২০১৯ পরীক্ষায় দায়িত্বরত দুই শিক্ষক আবুল হাশেম ও আতিয়ার রহমানকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করেন।

এসব বিষয়ে ওই দুই শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, উক্ত সংবাদে আমাদের (মো. আবুল হাশেম ও মহাম্মদ আতিয়ার রহমান) নাম ব্যবহার করে জোরপূর্বক ফাযিল পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করার অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। যা আদৌ সত্য নয়। ফাযিল পরীক্ষা-২০১৯ (১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষ) পরিচালনার জন্য যে সময় কমিটি গঠন করা হয় সে সময় আমি অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলাম।

যে কারণে জেলা প্রশাসন ও ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের মাধ্যমে পরীক্ষা পরিচালনার অনুমোদন দেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির পত্রের স্মারক নং-০৫.৪৪.১৮০০.১০৪.৫৫.০১৫.১৯-৩৪৬ তারিখ-০৩.০৯.২০১৯খ্রিঃ।

প্রকৃতপক্ষে অত্র মাদরাসায় যেসব বোর্ড/বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে সেসব পরীক্ষায় অত্র মাদরাসার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ সহকারি শিক্ষক (কৃষি) ওয়াহেদ মো. রাশেদীন আমিনের সহযোগিতায় কেন্দ্র ফি’র টাকা তছরুপ করেন বলে পূর্ব থেকে অভিযোগ আছে। মাদরাসার অন্য কেউ পরীক্ষা পরিচালনা করলে তাদের অর্থ তছরুপের বিষয়টি সামনে চলে আসতে পারে, এ আশংকায় উল্লেখিত অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ এবং ওই সহকারি শিক্ষক অনুমোদিত কমিটি বানচাল করতে নানা মহলে ধর্ণা দেন।

এতেও ফল না হওয়ায় প্রকাশিত সংবাদের সাংবাদিকের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তারা আরো বলেন, সংবাদের একাংশে উল্লেখ করা হয়েছে যে ‘ইসলামী আরবি বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র সচিব আবুল হাশেম ও সহকারি কেন্দ্র সচিব আতিয়ার রহমানকে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বলেন।’ যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এ ধরনের কেউ আমাদের কাছে কোনো বার্তা দেননি।

বরং রাশেদীন আমিনের সহযোগিতায় অত্র মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মো. খালেদ সাইফুল্লাহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে একই প্রতিষ্ঠানে (চুয়াডাঙ্গা ফাযিল মাদরাসা) থাকা অবস্থায় স্ব-বেতনে তিনবার হজ্জ পালন করেন। অভিযোগ রয়েছে মাদরাসার উপাধ্যক্ষ হজ্জ পালনের নামে মোয়াল্লেম (হাজীদের গাইড/লাইন ম্যান) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এতে তিনি মোটা অংকের অর্থ লাভ করেন। এসব বিষয় সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানে এবং মাদরাসা পরিচালনা কমিটির মধ্যে সমালোচনার জন্ম দেয় ।

উপাধ্যক্ষের এ অপকর্মকে আড়াল করতে একটি মহল নানা নীলনকশা প্রণয়ন করতে থাকে।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি