অনিয়মের পটু সাব-রেজিস্টার মামুন বাবর

সময় মত অফিসে না আসা, দুর্নীতিতে ডুবে থাকা ও চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সাব-রেজিস্টার মামুন বাবরকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী।

সময় মত অফিসে না এলে প্রয়োজনে সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে ঢোকার সব পথ বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। সোমবার বিকেল পর্যন্ত মামুন বাবর অফিসে না আসায় উপজেলার সর্বোচ্চ এই দুই কর্মকর্তা সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।

আলমডাঙ্গার কোথাও আত্মগোপনে থাকা মামুন বাবর অবশেষে ৫ টা ৫০ মিনিটে কার্যালয়ে ঢোকেন। এ সময় উপজেলার দূরদূরান্ত গ্রাম থেকে জমি কেনা-বেচায় আসা শত শত নারী-পুরুষ দিনভর অভুক্ত থেকে সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন।

সাব রেজিস্ট্রার মামুন বাবর দিনভর অফিসে আসেননি এই সংবাদ পেয়ে দুপুরের পর থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। অফিস থেকে কেউ একজন মামুন বাবরকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। ভয়ে তিনি আলমডাঙ্গায় কারো বাড়িতে আত্মগোপনে চলে যান। বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসার এলাকা ছাড়লে ৫ টা ৫০ মিনিটে মামুন বাবর অফিসে ঢোকেন। এ সময় উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে জমি কেনা-বেচায় আসা শত শত নারী-পুরুষ তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপার বাসিন্দা মামুন বাবর আলমডাঙ্গায় সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। তিনি সপ্তাহে তিনদিন প্রতি সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার ঝিনাইদহ থেকে আলমডাঙ্গায় এসে দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র জানায়, সাব-রেজিস্টার মামুন বাবরের অফিসে আসার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। তিনি কোন কোন দিন আসেন দুপুরে আবার কোন কোন দিন আসেন বিকেলে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তার স্বেচ্ছাচারিতার কাছে অফিসের বেশীরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী অসহায় হয়ে থাকেন। হাতে গোনা কয়েকজনকে সাথে নিয়ে তিনি দলিল লেখকদের ওপর রীতিমত স্টিমরোলার চালান।

সূত্র জানায়, বছর দুয়েক আগে চরম স্বেচ্চাচারিতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাড়িয়ে দলিল লেখকরা মামুন বাবরের অপসারনের দাবিতে একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এতে অচালাবস্থা দেখা দেয় সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। কিন্ত মামুন বাবরের ক্ষমতার হাত দীর্ঘ হওয়ায় তাকে কেউ টলাতে পারেনি। তিনি জেকে বসেন অফিসে। এরপর থেকে তার স্বেচ্ছাচারিতা শতগুন বেড়ে যায়। তিনি অফিসের কয়েকজন অনুগতকে সাথে নিয়ে বিরাগভাজনদের ওপর স্টিমরোলার চালাতে থাকেন। কোনদিন অফিসে আসেন আবার কোনদিন অফিসে আসেন না। গ্রাম থেকে আসা শত শত নারী-পুরুষ দিনভর অপেক্ষা করে করে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যান। তিনি কারও কাছে জবাবদিহি করতে রাজি নন। মামুন বাবরের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে শহরময় আলোচনা হতে থাকে। মামুন বাবরের অদৃশ্য শক্তির কাছে সবাই নত স্বীকার করতে থাকে। দিনের পর দিন চলতে থাকে এভাবেই।

সূত্র মতে, যারা একটু সোচ্চার হতে পারেন তাদেরকে তিনি টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ফেলেন। কেউ আর সোচ্চার হন না। এক পর্যায়ে আলমডাঙ্গার মানুষ মামুন বাবরের কাছে একেবারে জিম্মি হয়ে পড়েন।

সবশেষে মামুন বাবরের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন। বছর খানেক আগে তাঁর হুমকি-ধামকিতে কয়েকদিন নিয়ম মত অফিস করলেও সেই রেওয়াজ আর ধরে রাখেন নি মামুন বাবর। আবার আগের মত স্বেচছাচারিতা শুরু করেন। অবশেষে সোমবার মামুন বাবরের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিরোধে মাঠে নামেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসার। বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে না আসায় উপজেলার সর্বোচ্চ দুই কর্মকর্তা মামুন বাবরকে আল্টিমেটাম দিতে বাধ্য হন। সময় মত অফিসে না এলে তাকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের যত ক্ষমতা থাকে খাকুক। তাকে সরকারী নিয়ম মেনে অফিসে আসতে হবে। না এলে তার বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তার জন্য উপজেলার গেইট বন্ধ করে দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী বলেন, সময় মত অফিসে না এলে আইনানুযায়ী সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।