অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যদিয়ে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সাধারণসভা সম্পন্ন

অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এবারের কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সাধারণসভা।
স্বরণকালের রেকর্ড ভেঙ্গে এবার নির্ধারিত সময়ের চাইতে সভার কার্যক্রম শুরু হয় ২ ঘন্টা বিলম্বে। সকাল ১০ টায় যে সভা শুরু হওয়ার কথা সে সভা বিলম্বে দুপুর ১২ টায় সভা শুরু করে রাত ৮টার মধ্যেই করা হয়েছে শেষ। এবারের সভায় শুরু থেকে ছিল উত্তেজনা ও নেতাদের কথায় ছিল তিক্ততার বিষ। কথার তীরে ঘায়েল করতে বক্তব্যে একে অপরকে করেন ধবল ধোলাই। সভার প্রথম পর্ব শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি, চেয়ার ভাংচুর ও স্বপন নামের এক শ্রমিক রক্তাক্ত জখম সহ সভাস্থলে কয়েক দফা হাতাহাতির মধ্য দিয়ে এবারের দ্বি-বার্ষিক সাধারণসভা হয়েছে শেষ।

রোববার সকাল ১০টার স্থলে দুপুর ১২ টার দিকে কেরুজ ইমারত বিভাগের সামনে আয়োজন করা হয় শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সাধারণসভা। সাধারন সভাকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত সভা চত্বর ছিল শুনশান। সাধারন সভাকে কেন্দ্র করে সাকাল ৯টার পর থেকে শ্রমিক সংগঠন গুলো দলবদ্ধ হয়ে দলেদলে মিছিল সহকারে নেতারা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে হাজির হন সভাস্থলে। দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয় আলোচনাপর্ব। পবিত্র কোরআন তেলওয়াত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়।

এ সভার উদ্বোধন করেন কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সহ শ্রমিক নের্তৃবৃন্দ। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ ৫ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট প্রতিবেদন পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ।

২০২১ সালের আয় দেখানো হয়েছে ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৮৯ টাকা ৮৮ পয়সা। ওই বছরেই ব্যয় করা হয়েছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা। অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৯ টাকা ৮৮ পয়সা। ২০২২ সালে আয় হয়েছে ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ১১৮ টাকা ৮৮ পয়সা এবং ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫১৭ টাকা ৪৫ পয়সা। ফলে ২ বছরের আয়-ব্যয় হিসাবে অবশিষ্ট টাকার পরিমাণ ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৬০১ টাকা ৪৩ পয়সা।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন, সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, সাধারন সম্পাদক পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীন নফর। অনুষ্ঠানে বর্তমান পরিষদের সহ-সভাপতি ও সহ-সম্পাদক পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থাপনায় উপস্থিত থেকে আরও বক্তব্য রাখেন, সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী রেজাউল করিম, মফিজুল ইসলাম, এসএম কবির, বর্তমান পরিষদের সহ-সম্পাদক খবির উদ্দিন, হাফিজুল ইসলাম, সদস্যপ্রার্থী বর্তমান পরিষদের সদস্য মজিবর রহমান, নুরুল ইসলাম, ইদ্রিস আলী, সাইফ উদ্দিন সুমন, ডাবলু, আব্বাস আলী, হারিজুল ইসলাম, সাহেব আলী শিকদার, জাহিদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম সুমন, প্রমুখ।

সভায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব ব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) ফিদাহ হাসান বাদশা, উপব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) আল আমিন , গ্যারেজ ইঞ্জিনিয়ার আবু সাঈদ ও সহব্যবস্থাপক (ভূমি) জহির উদ্দিনকে।

গত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১ মাস ৫ দিন আগে। সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হলো ১২ দিন আগে। কেরুজ নির্বাচন মানেই মহোৎসব। এ নির্বাচন গোটা জেলাবাসীকে জানান দেয়। গোটা মৌসুম জুড়ে নির্বাচনী বাতাস থাকে গরম। নির্বাচনকে ঘিরে কেরুজ আঙিনা ভোটার ও বহিরাগতদের পদচারণায় এখন মুখরিত। প্রার্থীদের দৌড়-ঝাপ-ভোটারদের দলে ভেড়ানোর কায়দা-কৌশল অবলম্বনে থাকে না কোন কমতি। ভোটারদের মন গলাতে বানের পানির মতো খরচ করা হয়ে থাকে টাকা। দীর্ঘদিনের এ ধারাবাহিকতা কমতি থাকবে না এবারের নির্বাচনেও। ভোটের বাকি মাত্র ১২ দিন। নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী আলোচনা, প্রচারণা, দৌড়-ঝাপ, সংগঠন অফিসগুলোতে ভোটারদের আনা-গোনা, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সংগঠন কার্যালয়গুলো কর্মী-সমাবেশের পাশিপাশি হচ্ছে ভুড়ি ভোজনের আয়োজন। সেই সাথে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মুহুমুহু স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠছে কেরুজ ক্যাম্পাস এলাকা। আর সন্ধা নামার পরপরই প্রার্থীরা ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে স্লোগান তুলে দিচ্ছে মহড়া। দেখানো হচ্ছে দল ভারির শো-ডাউন। নেপথ্যে রয়েছে বহু রহস্য। অনেকেই মন্তব্য করে বলেছে, কি মধু আছে এতে। কেরুতে নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রধান হাতিয়ার কি মদ বিক্রয় কেন্দ্রেরগুলোর এজেন্টরা? শ্রমিক নেতাদের সংগঠন কার্যালয়গুলো সারাবছর জনমানবহীন থাকলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমজমাট অবস্থায় পরিণত হওয়ার নেপথ্যের রহস্যই বা কি? তবে সাধারন সভাকে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার সকাল থেকেই সংগঠনগুলো ছিলো কর্মী, সমর্থক, ভোটার ও বহিরাগতদের ভীড়। প্রত্যেক সংগঠন থেকে বিশাল র‌্যালি সহকারে সভাস্থলে যোগদান করা হয়।

এ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন, ফিরোজ আহমেদ সবুজ সংগঠনের কর্ণধর বর্তমান পরিষদের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ, তৈয়ব সংগঠনের কর্ণধর সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী। সাধারণ সম্পাদক পদে মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন মাসুদ সংগঠনের কর্ণধর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, মনিরুল ইসলাম প্রিন্স সংগঠনের কর্ণধর সাবেক সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স ও জয়নাল আবেদীন নফর সংগঠনের কর্ণধর সাধারন সম্পাদক পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীন নফর।

আসন্ন এ নির্বাচনে পরিবর্তন আসছে পরিষদের সদস্য সংখ্যায়। তথ্যনুযায়ী কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের বর্তমান পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা ১৩ জন। বছর দুয়েক আগে ২৫ সদস্যের কমিটির পরিবর্তন করে তা ১৩ সদস্যে করা হলেও তা পরিবর্তন করা হয়েছে সম্প্রতি। শ্রম অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পরিবর্তন করে ফের ২৫ সদস্যের কমিটি নির্ধারন করা হয়েছে।

ফলে এবারের নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবে প্রার্থীরা। কেরুজ চিনিকলে এক সময় দেড় হাজারের বেশি শ্রমিক ছিল। সে সময় শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ছিল। যখন শ্রমিক কমে গেল তখন কেরুজ শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নে এক জন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও ৯ জন সদস্য করে ১৩ জন বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ১লা সেপ্টেম্বর-২২ শ্রম আইন বিধি মোতাবেক ১৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বলা হয়েছে কোন প্রতিষ্ঠানে ৮০১ থেকে ১৫’শ জন কর্মকর্তা কর্মচারী থাকলে শ্রমিকদের স্বার্থে সভাপতি ১ জন, সহ-সভাপতি ২ জন, সাধারণ সম্পাদক ১ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ২ জন, কোষাধ্যক্ষ ১ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১ জন, প্রচার সম্পাদক ১ জন দপ্তর সম্পাদক ১ জন ও সদস্য ১৫ জন করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের কমিটি গঠন যাবে। সে লক্ষে আয়োজিত গেট মিটিং সভায় উপস্থিত নের্তৃবৃন্দ সহ সকলে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের মতামত প্রকাশ করেন। সে মোতাবেক এবারের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির পরিবর্তে ২৫ সদস্যর কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হবে। সে অনুযায়ী ২৫ পদের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে পুরাতনের পাশাপাশি নতুন মুখের দেখা মিলেছে।

গত নির্বাচনে দর্শনা কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১০৮৮। দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন মিলের শ্রমিক-কর্মচারী কেরুজ চিনিকলে যোগদান করেছে ২৭০ জন। ফলে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩৫৮ জনে দাঁড়ালেও চুরান্তভাবে কমবে। গত ২ বছরে বহু ভোটার অবসর গ্রহণ ও মৃত্যুজনিত কারনে কমেছে। ফলে এবার সম্ভাব্য ১৩০০ ভোটার হতে পারে।

গত ২০২১ সালের ৮ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের নের্তৃবৃন্দ এবার ১ মাস ৫ দিন আগেই নির্বাচনের দিন নির্ধারন করে ২২ জানুয়ারি নিয়ম মাফিক সাধারণ সভা এবং ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ইতমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সাধারন সভার ও শুধুমাত্র আর বাকী থাকলো ভোট গ্রহণের দিন। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন মূলত বড় পদ ২টি। তা হচ্ছে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদই মুল পদ হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান ক্যাবিনেটের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ ও সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী। এবারের নির্বাচনে সহ-সভাপতি ও সহ- সাধারন সম্পাদক পদে প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে কয়েকটি পদ। এছাড়া সহ-সভাপতি ও যুগ্মসম্পাদকসহ সদস্য পদে অসংখ্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।