আউশ ধান উৎপাদনে সেরাদের তালিকায় চুয়াডাঙ্গা

আউশ ধান চাষ ও গড় ফলনে সারা দেশের মধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। দেশের মধ্যে সেরাদের তালিকায় এসেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার নাম। ব্যয় সাশ্রয়ী ও বৃষ্টি নির্ভর এই ধানচাষ করে এ বছর জেলার কৃষকরা খুশি। ফলন হয়েছে বাম্পার। কৃষকরা বাজারমূল্যও পাচ্ছেন ভাল। এর পাশাপাশি আউশ চাষাবাদও বেড়েছে। বিগত ছয় বছরে জেলায় আবাদ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। জেলার প্রেক্ষাপটে নানামুখি সুবিধা থাকায় আউশ ধান চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চুয়াডাঙ্গা জেলায় আউশ ধানের আবাদ ছিল ২১ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭৩ হেক্টর জমিতে। যা ছয় বছর আগের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া আলমডাঙ্গায় সাত হাজার ৭৮৫, দামুড়হুদায় ১০ হাজার ৫৮৪ ও জীবননগরে নয় হাজার ১১৯ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলা সমতলভূমি এবং মাঝারি উচু প্রকৃতির। এখানকার আবহাওয়া বৃষ্টি নির্ভর আউশ ধান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগি। এছাড়া আউশ মৌসুমে ভূগর্ভস্ত পানি দিতে না হওয়ায় খরচও কম। স্বল্প সময়ে চাষ করা যায় এবং ক্ষেত থেকে আউশ ধান কেটে নেওয়ার পরপরই কৃষকরা সেই জমিতে আগাম সবজি আবাদ করতে পারেন। এসব সুবিধার জন্য এখানকার কৃষকরা আউশ চাষে বেশি আগ্রহী। গত বছরের চেয়ে এ বছর আউশের আবাদ বেড়েছে চার হাজার ৭৭৩ হেক্টর জমিতে।

দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গার কৃষক জমির আলী বলেন, তিনি ব্রি-ধান ৪৮ আবাদ করেছিলেন। ফলন ভাল হয়েছে। এবার বৃষ্টি হয়েছে ভাল। এজন্য আলাদাভাবে সেচ দিতে হয়নি। খরচ হয়েছে কম। ধানের পাশাপাশি এ বছর বিচালির দামও ভালো আছে। এতে ভাল লাভ হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক খায়রুল ইসলাম বলেন, তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছিলেন। মোট খরচ হয়েছিল ২৭-২৮ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি প্রায় ১৮ মণ ধান পেয়েছেন তিনি। বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ এক হাজার ১০ টাকায়। সাথে বিচালিও পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এ বছর লাভ হয়েছে বিঘা প্রতি ১০-১২ হাজার টাকা।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, এ বছর ইটভাটার পতিত জমিতেও আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। সঙ্গত কারণেই জেলায় আউশ আবাদ বেড়ে গেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর জানান, বোরো ও আমনের চেয়ে কম সময়ে আউশ ধান ঘরে তোলা যায়। শস্য বিন্যাস অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গায় আউশ রোপন দেরিতে হয়। আউশের পরই শুরু হয় আগাম সবজি।

তাছাড়া কৃষককে চাষাবাদের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে আউশ বীজ। ৫০ ভাগ ভর্তুকি মূল্যে ধান কাটা মেশিন দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই আউশ চাষে কৃষকের লাভ। তার পাশাপাশি সরকারি এসব সহায়তা কৃষকের জন্য আরো সুবিধা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী হাসান জানান, সারাদেশের মধ্যে আউশের গড় আবাদ ও ফলনে চুয়াডাঙ্গা জেলা আছে সেরাদের তালিকায়। দেশে আউশের গড় ফলন (চাউলে) প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৮ টন।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় তা ৩ দশমিক ৪৭ টন। এমনিতেই চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্যে উদ্বৃত্ত। তারপরও এ বছর জেলায় শুধু আউশ ধানই উৎপাদন হয়েছে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার টন বেশি।