
আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটবে ৫ দিনের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের। তাই, মণ্ডপে মণ্ডপে এখন বাজছে বিদায়ের ঘণ্টা। আজ সকালে হবে দশমীর বিহিত পূজা। পূজা শেষে হবে দর্পণ ও বিসর্জন। এদিন দেবী মর্ত্য ছেড়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের অসুরিক প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের তথ্যমতে, এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি পূজামণ্ডপ হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে মণ্ডপ হয়েছে ২৫৯টি। বিজয়া দশমীতে সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর থেকে শুরু হবে দেশব্যাপী প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। প্রত্যেকে নিজ নিজ জেলায় দেবী বিসর্জন করবেন। রাজধানীর অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হবে বুড়িগঙ্গায়।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী বাসুদেব ধর বলেন, দুর্গা মায়ের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। কৈলাশে ফিরে যাবেন মা দুর্গা। আবার আমাদের অপেক্ষা শুরু হবে আগামী বছরের পূজার জন্য। এবারের পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা নিরাপদে পূজা উদ্যাপন করতে পেরেছেন। এজন্য আমরা সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, বিজয়া দশমীতে বিসর্জন শোভাযাত্রা যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় সেজন্য পৃথক নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা সুন্দরভাবে শেষ হবে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে গতকাল ঢাকেশ্বরী ও রমনা কালী মন্দিরে দুর্গাপূজা পরিদর্শন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ও সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবিও দুর্গাপূজার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। বিজিবি সীমান্তবর্তী ২ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাজধানীসহ সারা দেশের অন্যান্য বড় বড় পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় দায়িত্বও পালন করছে। তিনি জানান, যার যার ধর্মীয় উৎসব সবাই যাতে নির্বিঘ্নে উদ্যাপন করতে পারে, সে লক্ষ্যে বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে। আর একটা দিন বাকি আছে, বাকি সময়টুকুতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারের দুর্গাপূজা সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিজিবি মহাপরিচালক। বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, গত ২৪শে সেপ্টেম্বর থেকে বিজিবি’র ৪৩০ প্লাটুন সদস্য রাজধানীসহ সারা দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ২৪টি বেজ ক্যাম্প স্থাপন করে মোট ২ হাজার ৮৭০টি পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবি নিয়ন্ত্রণাধীন ২ হাজার ৮৭০টি পূজামণ্ডপের মধ্যে সীমান্তবর্তী (সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে ও পার্বত্য অঞ্চলের ১৫টি পূজামণ্ডপসহ) রয়েছে ১ হাজার ৪১৭টি এবং সীমান্তবর্তী এলাকার বাইরে রয়েছে ১ হাজার ৪৫৩টি মণ্ডপ।