
আজ ২৩ অক্টোবর, মেহেরপুরবাসির জন্য একটি ভয়াল দিন। ১৯৯৭ সালের আজকের এই দিনে এই জেলাবাসি হারিয়েছেন তাদের ৫ জন সূর্য সন্তানকে।
১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর রাতে সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান সপ্তম জাতীয় রোভার মুট ও নবম এশিয়া প্যাসিফিকে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে মেহেরপুরের একটি রোভার দল একটি ভাড়া বাসে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রোভারদের বহন করা বাসটি (২৩ অক্টোবর) ভোরে মানিকগঞ্জের ধামরাই এলাকায় পৌছায়। ঠিক তখন ফজরের নামাজের সময় হয়েছে। সবাই তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে ২০ ফিট গভীর খাদে পড়ে যায়। এতে নিহত হন ৫ রোভার। সেদিনের সেই ভয়াল বাস দুর্ঘটনায় নিহত হন মেহেরপুর শহরের স্টেডিয়ামপাড়ার জাভেদ ওসমান, মুর্খাজী পাড়ার মাসুম, মনিরুল, সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের মাহফুজ রহমান ও মুজিবনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম।
বাসের রোভার মুটে যাওয়া গাঁড়াডোব গ্রামের (বর্তমানে সুইডেন প্রবাসী) সাংবাদিক আইনুল হক স্মুতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, সেদিনের সেই ভয়াল শব্দ এখনো আমার কানে বেঁজে ওঠে। আজও আমার বুকে কম্পন তৈরী করে। ভাবতেই আবারো আতংকে হারিয়ে যায় সেই রাতের কথা। তখনো আমরা সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখনো বুঝতে পারিনি কি ঘটেছে। বিপরীত দিক থেকে অপর একটি বাসের সাথে বাড়ি খেয়ে আমাদের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ২০ ফিট গভীর খাদে পড়ে যায়। তখনো আমার জ্ঞান ছিলনা। জ্ঞান ফিরেই শুধু বাঁচাও বাঁচাও শব্দ। বাসের মধ্যে শুধু রক্তের বন্যা। আমার সামনে ও পিছনের ছিটেই মরে পড়ে আছে কয়েকটি লাশ। আমার পা ভেঙ্গে আটকে আছে সিটের সাথে। কি ভয়ঙ্কর অবস্থা আমি বোঝাতে পারবোনা। এখন আমি প্রবাসে আছি। মৃত্যুর যন্ত্রণা কি আমি সেদিন আলিঙ্গণ করেছি। পরে সেখানকার ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় জনগণ আমাদের বাঁচাতে ছুটে এসেছিলেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
রবিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে শহীদ ৫ রোভার সদস্যের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে কবর জিয়ারত শেষে কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলের জেলা স্কাউট ভবনের সামনে রোভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে মেহেরপুর জেলা রোভার।
এদিকে মাসুম মনিরুল এর পরিবারের পক্ষে থেকে থানা পাড়া বাইতুল ফাতাহ জামে মসজিদ ও মসজিদ সংলগ্ন দারুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসায় মিলাদ ও দোয়া করা হয়।

								
				
