আপডেট: গাংনীতে চাকরি না পেয়ে টাকা ফেরতের দাবিতে অনশন

১৫ লক্ষ টাকা দিয়েও চাকরী পাননি গৃহবধু মৌমিতা খাতুন পলি। গাংনী পৌরসভায় সহকারি কর আদায়কারি পদে চাকরীর জন্য মেয়র আশরাফুল ইসলামের কাছে টাকা দেন তিনি। তিন বছর অস্থায়ীভাবে কাজ করানোর পরও তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য অনশনে বসেছেন ওই গৃহবধু।

বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনারে অনশন শুরু করেন তিনি। পরে রাতে ওসির আশ্বস্তায় অনশন ভাঙেন পলি। তবে পৌর মেয়র জানান, চাকরীর জন্য নয়, জমি ক্রয়ের জন্য টাকা দিয়েছিলেন গৃহবধুর স্বামী।

গাংনী পৌর সভার শিশিরপাড়া গ্রামের শাহাবুদ্দিনের মেয়ে অনশনকারি মৌমিতা খাতুন জানান, তিন বছর যাবৎ গাংনী পৌরসভায় সহকারী কর আদায়কারী হিসেবে অস্থায়ীভাবে চাকুরী করেছি। চাকুরি স্থায়ীকরণের জন্য পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলামকে ১৫ লক্ষ টাকা দেয়া হয়। উক্ত পদে চুড়ান্ত নিয়োগের জন্য ১৯/০৫/২০১৮ ইং তারিখে তৎকালীন সময়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র নবীর উদ্দিনের স্বাক্ষরিত একটি নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন। কিন্তু ওই পদে পলিকে নিয়োগ না দিয়ে মেহেরপুরের একটি মেয়েকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

চাকরী না পাওয়ায় মেয়রকে দেয়া ১৫ লক্ষ টাকা ফেরত চাইলে তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানী ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পলি অভিযোগ কওে আরো জানান, মেয়র আশরাফুলের হাতে ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা প্রদান করার পর তিনি একটি মামলায় জেল হাজতে যান। পরে জেলগেটে দেখা করার পর তিনি তার স্ত্রী জেলা পরিষদের সংরক্ষিত মাহিলা সদস্য শাহানা ইসলাম শান্তনা’র ব্যাংক হিসেবে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা করি।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম জানান, আমি মৌমিতা খাতুন পলিকে চাকুরী দেওয়া বলে কোন টাকা গ্রহণ করিনি। তবে সে অস্থায়ীভাবে সহকারী কর আদায় কারী হিসেবে কিছুদিন পৌর সভায় কাজ করেছিল। তবে পৌরসভার কাছে তার কোন দেনা পাওনা নাই।

তিনি আরো বলেন, পলি যে টাকার বিষয়ে বলতে চাচ্ছে সেটা হলো তার স্বামী মোমিন শিশিরপাড়া গ্রামে আমার দেড় বিঘা জমি কেনার জন্য আমাকে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। সে জমি পলি’র পিতা বর্তমানে চাষাবাদ করছে। পলি আমাকে জানায়, জমি তারা কিনবে না তবে টাকা যেন তার হাতে ফেরত দেওয়া হয়। আমি টাকা নিয়েছি পলির স্বামী মোমিনের নিকট থেকে তাই মমিনের হাতে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এ জন্যই মৌমিতা খাতুন আমার মান ক্ষুন্ন করার জন্য চেষ্টা করছে।

বিকালে অনশনকারি মৌমিতা খাতুন পলির অনশনের বিষয়ে যুক্তি খণ্ডন করে গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, মৌমিতা খাতুন পলির পিতা শিশিরপাড়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন ওরফে বাহুদুর আমার অত্যন্ত আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তার বাড়ির সামনে হাফিজুলের বাড়ির সামনে আমার ৪০ শতাংশ জমি আছে। আমার উক্ত জমির ৫ কাঠা বিক্রি করার জন্য দামাদামি করি। উক্ত ৫ কাঠা জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৫ লাখ টাকা।

জমি বিক্রি করার জন্য মৌমিতা খাতুন পলির কথিত স্বামী মোমিন টাকা দিয়েছিলেন। চাকরির জন্য নয়। মোমিনকে সাথে নিয়ে স্বামী পরিচয়ে আমার সাথে জমির দামাদামি করেন। মোমিন আমার স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্টে তিনটি রশিদের মাধ্যমে ৮লাখ ১০ হাজার টাকা জমা করেন। বাদবাকি টাকা তিনি জমি রেজিস্ট্রির সময় পরিশোধ করার কথা বলেন। কিন্তু মোমিনের সাথে মৌমিতা খাতুন পলির বনাবনিত না হওয়ায় তাকে ছেড়ে চলে যায়। পরে মৌমিতার স্বামী মোমিন জমি ক্রয় করবেনা বলে আমার সাথে টাকা ফিরিয়ে নিয়ে নেয়।

মেয়র আশরাফুল ইসলাম, আরও বলেন, মোমিনের জমাকৃত টাকা আমি মোমিনকে ফেরত দিয়েছি। মোমিন এসে বলুক তবে আমি টাকা দেব। এছাড়া মোমিন টাকা নিয়ে আমাকে লিখিত দিয়ে গেছেন। আমার দেড় বিঘা জমি মৌমিতার বাবাকে আবাদ করার জন্য বিনা খরচায় আবাদ করে খেতে দিয়েছি। আমার জমিটাও তারা অন্যের কাছে বন্দোক রেখেছেন।

মৌমিতা খাতুন পলির অনশনের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম গাংনী উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে এলাকাবাসীদেও উপস্থিতিদের বিভিন্ন যৌতিকতা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন আমাকে রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত করতে প্রতিপক্ষরা এমন ইন্ধন জুগিয়েছেন।

প্রতিপক্ষরা যে প্রকার ইন্ধনই দিয়ে থাকুক না কেনো তা ফলপ্রসূ হবেনা কারণ টাকা দিয়েছেন তার স্বামী মোমিনুল ইসলাম মোমিন।

এ সময় গাংনী পৌর ২ নং ওয়ার্ড় কাউন্সিলর মিজানুর রহমান বলেন, আমি তাদের প্রতিবেশি ও একজন জন-প্রতিনিধি টাকা পয়সার ব্যাপারে আমাকে জানায়নি। অন্যেও মুখ থেকে শুনেছি তবে মৌমিতা খাতুন পৌর সভায় কাজ করতেন এবিষয়টি আমি জানি।

গাংনী থানার ওসি মোঃ ওবাইদুর রহমান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গাংনী উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে অনশনকারিদের অভিযোগ সুরাহা করার আশ্বাস দেন এবং তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়রের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করবেন বলে অনশন ভঙ্গ করার অনুরোধ জানান।

সেই সাথে এলাকাবাসীরাও তাদের অনশন ভঙ্গ করতে অনুরোধ জানান। তবুও অনশন কারিরা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থায় রয়েছেন। টাকা না দিলে তারা অনশন ভঙ্গ করবেননা বলে জানান।