আমি গর্বিত আমি মেহেরপুরের

এই কর্মময় যান্ত্রিক জীবনে চলার পথে কত মানুষের ভালোবাসা, সাহস ও পরামর্শে জীবন আলোকিত হয়, তা গভীর ভাবে উপলব্ধি করার ক্ষমতা আজকের দিনে আমাদের অনেকের থাকে না। মানুষ তার শেকড়, পরিবার ও সমাজ এমনকি নিজের কাছে থেকেও ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, ভুলে যায় নিজ পরিচয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে কেনো জানি তার বিপরীতটা হয়েছে। প্রায় একযুগ হয়ে গেলো দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এসেছি । কখনো কাজের প্রয়োজনে বা একান্ত ব্যক্তিগত প্রশান্তির জন্য বহুদেশ ঘুরেছি কিন্তু আমার দেশের মতো আমার মেহেরপুরের মতো এতোটা শান্তি আমি উপলব্ধি করতে পারিনি। এতটো অনুপ্রেরণা আমি আর কোথা থেকে পাইনি ।

আমি যতোটা গর্বিত বাংলাদেশী হয়ে ততোটা গর্বিত মেহেরপুরের হয়ে যদিও বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তের ছোট্ট একটি জেলা আমাদের মেহেরপুর। তবে এ জেলার রয়েছে প্রায় ২ হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য। রয়েছে রাজনৈতিক গুরুত্ব। আমি খুব অহংকার করে বলতে পারি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ঘটনায় মেহেরপুরের মুজিবনগর সূতিকাগারের ভূমিকা পালন করেছে। আমার এ জেলার ইতিহাস হয়েছে অত্যন্ত দীপ্ত গৌরবোজ্জ্বল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মেহেরপুর জেলায় মুজিবনগরের বিশাল আম্রকাননের ছায়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং মেহেরপুরের মুজিবনগরকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করে। আর সেই দিনই বঙ্গবন্ধুর নাম অনুসারে এই জায়গার পূর্বনাম বৈদ্যনাথতলা পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় মুজিবনগর।

প্রাচীন আমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে নানান স্থাপনা।তাছাড়া সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংস্কৃতিক সব মিলিয়ে ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদের আদলে এখানকার বসতিগুলো গড়ে উঠেছে ভৈরব, কাজলা, ছেউটি, মাথাভাঙ্গা প্রভৃতি নদীর উভয় তীরে অপেক্ষাকৃত উচূঁ জায়গায় এবং আধুনিককালে সড়কপথের দুধারে। এ ছাড়া বিল বা হাওড় অঞ্চলে পুঞ্জিভূত বা গুচ্ছ বসতিও দেখা যায়। আবাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে শহর ও ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে ৮৪% এবং গ্রামীণ জনপদে ৪২% পাকা ও সেমিপাকা আবাসন লক্ষ্য করা যায় ।

বাংলারেশের দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান গুলোর মধ্যে ও আমাদের মেহেরপুর অনেকটা পরিচিত তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, মেহেরপুর শহীদ স্মৃতিসৌধ, মেহেরপুর শহরের কবরস্থান, ভাটপাড়া ও আমঝুপি নীলকুঠি, ভবানন্দপুর মন্দির, বল্লভপুর চার্চ, ভবরপাড়া রোমান ক্যাথলিক চার্চ, নায়েব বাড়ি মন্দির, বাঘুয়াল পীরের দরগা ইত্যাদি।

আমাদের মেহেরপুরে রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে জড়িত বহু মুক্তিযোদ্বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব লেখক কবি সাহিত্যিক ধর্মসংস্কারক এবং ক্রীড়াঙ্গনে বহুলোক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তাদের ভিতরে উল্লেখযোগ্য এম. এ. হান্নান – মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সংসদ সদস্য মরহুম ছহিউদ্দীন আহম্মদ, সাবেক সাংসদ ভাষাসৈনিক মরহুম আহমদ আলী, এমএনএ মরহুম নুরুল হক। ছাত্রনেতা আব্দুল মান্নান, এম এ এস ইমন ‍যিনি মেহেরপুর প্রতিদিন নামে একমাত্র পত্রিকার একজন সফল প্রকাশক। শাহ আলম – ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত; ইমরুল কায়েস- ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় দল।আশরাফ মাহমুদ বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী। সিলন সুপার সিংগার প্রথম রানার্স আপ সুমনা রহমান। সফটওয়্যার আবিষ্কারক সাদ্দাম হোসেন।দীনেন্দ্রকুমার রায় – লেখক; কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক রফিকুর রশিদ, আব্দুল্লাহ আল আমিন, অধ্যাপক আনিসুর রহমান, মোজাফ্ফর হোসেন, সাংবাদিক কবি রফিকুল আলম যার লেখা কবিতা আমাজন ডট কমেও পাওয়া যায়। স্বামী নিগমানন্দ – ধর্মসংস্কারক; আবদুল মোমিন – বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের নেতা; ওয়ালিল হোসেন – বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। অরো অনেক গুনীজন আছেন এই আমার প্রিয় মেহেরপুর জেলায়।

বর্তমানে স্বাধীনতার পর এই প্রথম আমরা পেয়েছি জনাব ফরহাদ হোসেনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে। অনেক কৃতি সন্তানের মধ্যে আমরা পেয়েছি একজন রাষ্ট্রদূত জনাব জাহাঙ্গীর আলমকে। যিনি এখন উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্ব্বল দৃষ্টান্ত হলো আমাদের জেলা যেখানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনপ্রতিনিধি সহ সমস্ত জনগণ সুস্থ সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করে। আমাদের এই গৌরবগাঁথা মেহেরপুরের সুন্দর স্মৃতি ও অহংকার নিয়ে বাস করি আমেরিকাতে আর মন পড়ে থাকে মেহেরপুরে। এই কারলেই আমি গর্বিত আমি মেহেরপুরের।