
আলমডাঙ্গার বিভিন্ন ইউনিয়নে সারের মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং কৃষকদের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক সময়ে সার সরবরাহে প্রশাসনের তৎপরতা নিশ্চিত করেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গতকাল রোববার সকাল থেকে সারের মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন উপজেলা কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তারা। চলতি খরিপ-২ মৌসুমে কৃষকদের নিরবচ্ছিন্ন কৃষিকাজ নিশ্চিত করতে এবং সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় সার সরবরাহে স্বচ্ছতা আনতেই এই মাঠপর্যায়ের মনিটরিং কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
পরিদর্শনে নেতৃত্ব দেন আলমডাঙ্গা উপজেলার সুযোগ্য উপজেলা কৃষি অফিসার জনাবা রেহানা পারভীন। তিনি প্রত্যন্ত ইউনিয়নগুলোর সরকার অনুমোদিত সার ডিলারদের গুদাম ঘর ঘুরে দেখেন এবং সরবরাহের হালচাল সম্পর্কে খোঁজ নেন। তার সঙ্গে ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার জনাব উদয় রহমান এবং উপজেলা কৃষি অফিসের আওতাধীন বিভিন্ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ।
পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কর্মকর্তারা। কৃষকরা যাতে নির্ধারিত মূল্যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সার সংগ্রহ করতে পারেন সে বিষয়ে তারা সরাসরি খোঁজখবর নেন। কোনো কৃষক সার সংকটে রয়েছেন কি না, অথবা কোথাও অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগ আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার রেহানা পারভীন জানান, সরকার কৃষকদের উৎপাদন খরচ সহনীয় রাখতে ভর্তুকি মূল্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি এবং এমওপি সার সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু এই সার যেন কেউ মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে বা নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য নিয়মিতভাবে ডিলার মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোথাও কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিদর্শনে দেখা যায়, অধিকাংশ ডিলারদের গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার মজুদ রয়েছে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, চলতি মৌসুমে তারা তুলনামূলকভাবে সঠিক সময়ে সার পাচ্ছেন এবং কোনো বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে না। আলমডাঙ্গার হাপানিয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, “এবার এখনো পর্যন্ত সময়মতো সার পেয়েছি। আগে কখনো কখনো লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ফিরে আসতে হতো। এবার তেমন সমস্যা হয়নি।”
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার উদয় রহমান জানান, মাঠপর্যায়ে তদারকি কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। সার বিতরণে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। প্রতিটি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে বাজার ও গুদাম ঘুরে সরবরাহের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন।
জানা গেছে, চলতি খরিপ-২ মৌসুমে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি এবং এমওপি সারের চাহিদা অনুযায়ী মজুদ রাখা হয়েছে। এই মৌসুমে উপজেলার কৃষকদের জন্য প্রায় ১২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৫০০ মেট্রিক টন ডিএপি, ৪৫০ মেট্রিক টন টিএসপি এবং ৪৩০ মেট্রিক টন এমওপি সার সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বড় একটি অংশ কৃষকদের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ইউরিয়া ১৬ টাকা, ডিএপি ১৬ টাকা, টিএসপি ২২ টাকা এবং এমওপি ১৫ টাকা কেজি দরে সরবরাহ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে উপজেলা পর্যায়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি নিয়মিতভাবে সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। কৃষকদের যাতে প্রতারণার শিকার হতে না হয় এবং কোনো অবস্থাতেই যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয়, সেটিই হচ্ছে প্রশাসনের মূল লক্ষ্য।
কৃষি কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন, চলতি মৌসুমে কৃষকরা সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার পেয়ে তাদের কৃষি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারবেন। এতে করে এলাকার ধান ও অন্যান্য খরিপ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মাঠপর্যায়ের এই মনিটরিং ও নজরদারি কার্যক্রম সারা মৌসুমজুড়ে অব্যাহত থাকবে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।