এবার মেহেরপুর শহর থেকে আটক অনলাইন জুয়ার আরও চার এজেন্ট

এবার মেহেরপুর শহরে অভিযান চালিয়ে অনলাইন জুয়ার আর চার এজেন্টকে চ্যানেল বিক্রয় করার সময় সময় হাতে নাতে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

আটক অনলাইন জুয়ার এজেন্টরা হলেন- মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের সাইদুর ইসলাম (২২), জাহাঙ্গীর আলম (২৫),রফিকুল ইসলাম (৪১) এবং সদও উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের সুমন খন্দকার (৩৬)। আটকরা যতারপুর গ্রামের কটা বিশ্বাসের চ্যানেল পরিচালনা করেন বলে মেহেরপুর প্রতিদিনের কাছে খবর রয়েছে।

শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে শহরের কাথুলী সড়কের এবি ক্যাফে রেস্টুরেন্ট অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদেও কাছে থেকে ৫টি মোবাইল ফোন, অনলাইন জুয়ার সাইট পরিচালিত ২টি নগদ ও বিকাশের এজেন্ট সিম, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং ১০টি সিম উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এদিকে, একের পর এক অনলাইন জুয়ার দূর্গে হানা দিয়ে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে পুলিশকে বাহবা দিচ্ছে জনগণ। পুলিশের এ তৎপরতা অব্যহত থাকলে অনলাইন জুয়ার লাগাম টেনে ধরা যাবে বলে মনে সচেতনমহল।

আরও পড়ুন ধরাছোঁয়ার বাইরে অনলাইন জুয়ার অন্যতম চার হোতা মুকুল-জামান-নুরুল-মাদার

পুলিশ জানায়, মেহেরপুর শহরের কাথুলী সড়কের এবি ক্যাফে রেস্টুরেন্টে অনলাইন জুয়ার চ্যানেল ক্রয়-বিক্রয়ের মিটিং চলছে। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবির ওসি সাইফুল আলমের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম সেখানে অভিযান চালায়। অভিযানে চালিয়ে যতারপুর গ্রামের সাইদুর ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, রফিকুল ইসলাম ও সুমন খন্দকারকে আটক করে।এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন পালিয়ে যায়। আটক সাইদুরের কাছে থেকে একটি পোসো সি৩১, একটি রেডমি নোট ১০এস মোবাইল, সুমন খন্দকারের কাছে থেকে একটি ওয়ান প্লাস নাইন আর মোবাইল, জাহাঙ্গীর আলমের কাছে থেকে একটি ভিভো ওয়াই টুয়েন্টিজি মোবাইল, রফিকুল ইসলামের কাছে থেকে স্যামসাং গ্যালাক্সি সেভেন প্রো মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এসময় সাইদুর পুলিশকে জানায়, তার মোবাইলে রেড্ডি নামের অ্যাপস ব্যবহার করে অনলাইন জুয়ার সাইট লাইনবেটের সাব এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে তার মোবাইলে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬১ টাকা রয়েছে।

গতকাল রবিবার বিকালে তাদের আদালাতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আটক সাইদুরসহ অন্যরা যতারপুর গ্রামের কটা বিশ্বাসের চ্যানেল পরিচালনা করে। যে কটা বিশ্বাস অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর রাতে মুজিবনগরের মহাজনপুর গ্রামের মাঠাপাড়া এলাকার খয়রুদ্দিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চার অনলাইন এজেন্টকে আটক করে। তারা হলেন- মোনাখালি গ্রামের দক্ষিণপাড়া বাসিন্দা ও সাবেক চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমানের ছেলে মাহফুজুর রহমান জয় (২৪), রশিকপুর গ্রামের খানপাড়ার রকিব শেখের ছেলে তরিকুল ইসলাম (২৬), মহাজনপুর গ্রামের মাঠপাড়ার মনিরুল ইসলামের ছেলে আক্তারুজ্জামান আক্তার (২২) ও মহাজনপুর খাঁ পাড়ার আবুল বাশারের ছেলে রুবেল হোসেন (২৩) কে আট করে মুজিবনগর থানা ও ডিবি পুলিশ। এসময় তাদের অপর সহযোগী মহাজনপুর গ্রামের মিনারুল ইসলামের ছেলে শাহিন (৩০), খয়রুদ্দিনের ছেলে আরিফুল ইসলাম (২৫), জাকের আলীর ছেলে হেলাল (২৮), উজ্জল হোসেনের ছেলে মাহফুজ (২০) পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় মুজিবনগর থানায় এস আই উত্তম কুমার বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ৩০(২)/৩৫ ধারায় গতকাল বৃহস্পতিবার একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তদন্তভার দেওয়া হয়েছে ডিবি ওসি সাইফুল আলমকে।

মামলার এজাহারে জানা গেছে, আসামি মাহফুজুর রহমান জয়ের কাছ থেকে একটি অপপো ব্রান্ডের মোবাইল ফোনসহ ০১৯১১৯০৮৪৭৪ ও ০১৫৮১-৩৮৬৯৭৪, আসামি আক্তারুজ্জামানের কাছে স্যামস্যাং গ্যালাক্সি কোম্পানীর মোবাইল ফোন এবং সিম নং ০১৮৪১০৬৫১৩০ এবং ০১৮৮৮০৮৯৬০৩, তরিকুল ইসলামের কাছে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে রিয়েল মি জিটি মাষ্টার মডেলের একটি ফোন। মোবাইলে সিম রয়েছে ০১৯৪৫ ১৫৬৬৭৩ এবং ০১৬৫০-১১৫১৮৮, রুবেল হোসেনের কাছ থেকে রেডমি নাইন মডেলের মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ০১৯৭৩৯৫৮০৩০ এবং ০১৩০৫-৪২৪৫৭৩। এছাড়া একটি বিকাশ এজেন্ট সিম যার নং ০১৭৫৩৫৮৮২৪১, ও একটি রকেট এজেন্ট সিম যার নং ০১৭৭৯৩৪৯৭৩৬, দুটি গ্রামীণ ফোন কোম্পানীর সিম দুটি সাদা কাগজে মোড়ানো। রকেট ১৩৫৭ ও বিকাশ ২২২৩৪ লেখা আছে। সিম দুটির আসামি তরিকুল ইসলামের নিকট থেকে জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়া ৫০ হাজার নগদ টাকাও জব্দ করা হয়েছে।পলাতক আসামি শাহীনের ফেলে যাওয়া ইনফিনিক্্র হট ১২ মডেলের ফোন থেকে ০১৬১২৬৯৪৫৭৩ ও ০১৮১৬৯৫৬৩৪২ সিম জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া সিম বাদেই একটি ভিভো ওয়াই৭৬ ফাইভজি মডেলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। পলাতক আসামি আরিফুল ইসলামের ফেলে যাওয়া রিয়েলমি ৮ মডেলের মোবাইল ফোন থেকে ০১৩১৬৯১৮৮৮৯ সিম পাওয়া গেছে। রবি কোম্পানীর এসএমই ৪.৫জি নতুন ১০ টি সিম, কার্ডযার প্রতিটি প্যাকেটের স্টীকারে আলাদা আলাদা নম্বর লেখা রয়েছে। সিম কার্ডগুলো পলাতক শাহীনের বলে জানা গেছে।

এই মামলার আসামীদের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গোয়েন্দা পুলিশ তাদের তদন্ত অব্যহত রাখে। শনিবার আটক আসামীদের ওই মামলায় আটক দেখিয়ে রবিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং আদালতে তাদেরকে রিমাণ্ডে নেওয়ার আবদেন করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে, পুলিশের পাশাপাশি মেহেরপুর প্রতিদিন অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করছে। মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানেও দুই শতাধিক অনলাইন জুয়ার নাম পরিচয় উঠে আসছে। ইতোমধ্যে মেহেরপুর প্রতিদিনে এনিয়ে ‘অনলাইন জুয়ার দূর্গ’ ক্যাটাগরি ভিত্তিক ধারাবাহিক ১১টি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত এজেন্টরা রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন। বিপরীত দিকে অনলাইন জুয়া খেলে নি:স্ব হচ্ছেন হাজার হাজার তরুণ। আর এসকল টাকা অবৈধভাবে ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে রাশিয়ায় পাচার করছেন এসকল অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত এজেন্টরা।
এসব এজেন্টদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, ছাত্র নেতা, শিক্ষক, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভসহ উঠতি বয়সের তরুণরা।

মেহেরপুর প্রতিদিন এসকল অনলাইন জুয়ার এজেন্টদের মুখোশ উন্মোচন করতে কাজ করছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। বাকিদেরও সংবাদ প্রকাশের জন্য অনুসন্ধান অব্যহত রয়েছে।

মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার দূর্গে হানা দিয়ে মেহেরপুরের ডিবি পুলিশ, মুজিবনগর থানা পুলিশ ও সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে এ নিয়ে ১৬ জন অনলাইন জুয়ার হোতাকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে মেহেরপুর প্রতিদিন ধারাবাহিক অনুসন্ধানি প্রতিদেবন প্রকাশ করায় অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতরা ভিন্ন কৌশল বেছে নিয়েছেন। অনেকে গা ঢাকা দিয়ে জেলার বাইরে গিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং জেলার বাইরে থেকে বিকাশ, রকেট, নগদসহ অন্যান্য কোম্পানীর এজেন্ট সংগ্রহ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রেফতার এড়ানোর জন্য। (চলবে..)

অনলাইন জুয়ার সকল সংবাদ পড়ুন

মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার আরেক মাস্টারমাইণ্ড সজিব আটক

মেহেরপুরের অনলাইন জুয়ার শীর্ষ এজেন্ট শামিম অধরা

অনলাইন জুয়ার এজেন্ট শামিমকে নিম্ম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

অনলাইন জুয়ার শীর্ষ এজেন্ট শামিম কারাগারে

মেহেরপুরে অনলাইন জুয়ার মাস্টারমাইণ্ড প্রসেনজিৎ সহযোগীসহ আটক

অনলাইন জুয়ার খপ্পরে মেহেরপুরের অর্ধশত তরুণ

ধরাছোঁয়ার বাইরে অনলাইন জুয়ার অন্যতম চার হোতা মুকুল-জামান-নুরুল-মাদার

অনলাইন জুয়ার হোতা নুরুল ও জামানকে শোকজ