কক্সবাজার উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

কক্সবাজার উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

বাংলাদেশের উপকূলের দিকে অতিপ্রবল রূপ ধারণ করে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

শনিবার (১৩ মে) সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এক সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, বাতাসের গতিবেগ কমে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড় মোখা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে না। এটি অতিপ্রবল (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন) ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হানবে।

তিনি আরও বলেন, রোববার (১৪ মে) সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৬টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার ও মায়ানমারে আঘাত হানবে। এর প্রভাবে কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিনে ৬ থেকে ৯ ফুট এবং ভোলা, বরগুনায় ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

মোখা মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজারের ১৬০০ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখানে ১৪ টন শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে সব বাহিনীর সাথে সেনাবাহিনী কাজ করবে।

এদিকে আজ শনিবার সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে ১৪ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বলা হয়, আজ রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শুরু হতে পারে।

এ অবস্থায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে।

অপরদিকে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। অতিভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে ১৪ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ শনিবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিলো।

এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে আগামীকাল রোববার (১৪ মে) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

সূত্র: ইত্তেফাক