করোনায় বন্ধ তাজমহলসহ হাজারো দর্শনীয় স্থান

ভারতে করোনা সংক্রমণের লাগাম টানতে গণজমায়েত এড়ানোর লক্ষ্যে ফের কয়েকটি কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। এক নির্দেশনায় আগ্রার তাজমহলসহ দেশের হাজারো দর্শনীয় স্থান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এই নির্দেশিকা জারি করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ হয়েছে দেশটির আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআইয়ের অধীনে থাকা কলকাতা শহরের একাধিক দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে রয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভারতীয় জাদুঘর, বিরলা প্লানেটোরিয়াম, সায়েন্স সিটির মতো দর্শনীয় স্থান।

করোনাভাইরাসে তাণ্ডবে দিশেহারা অবস্থা ভারতের। এরই মধ্যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশটি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশটিতে প্রতিদিন দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান সহস াধিক ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ১৭ হাজার ৩৫৩ জন। যা বৃহস্পতিবারের তুলনায় প্রায় হাজার বেশি।

মৃত্যু হয়েছে ১১৮৫ জনের। একদিনে করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন এক লাখ ১৮ হাজার ৩০২ জন। এই মুহূর্তে দেশে করোনা অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪৩। এখনো পর্যন্ত কোভিড টিকা পেয়েছেন দেশের ১১ কোটি ৭২ লাখেরও বেশি মানুষ। তবে সংক্রমণ তাতেও রোখা যাচ্ছে না।

খবরে বলা হয়েছে, করোনার নতুন একটি প্রজাতি (ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন) সংক্রমিত হয়েছে ভারতের ১০টি রাজ্যে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। তালিকায় থাকা অন্য রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাট, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ। এই প্রজাতির ভাইরাসে রয়েছে দুটি প্রজাতির করোনা ভাইরাসের মিশ্রণ। ই৪৮৪কিউ ও এল৪২৪আর ভাইরাসের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে এই তৃতীয় প্রজাতিটি। দিল্লিতে ব্রিটেনের করোনা প্রজাতি ও এই জাতীয় করোনা প্রজাতি যৌথভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ভারতের উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে চলছে কুম্ভমেলা। এতে অংশ নেওয়া ৩০ সাধুসহ গত পাঁচ দিনে দুই হাজার ১৬৭ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় সাধুদের সর্বোচ্চ সংগঠন অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদের সভাপতি মহান্ত নরেন্দ্র গিরি। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হরিদ্বারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ড. শম্ভু কুমার (এসকে) ঝাঁ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, কুম্ভমেলায় অংশ নেওয়া ভক্ত-দর্শনার্থীদের একাধিক আখড়ায় আরটি-পিসিআর ও র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। গত ১০ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে দুই হাজার ১৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

প্রতি ১২ বছরে একবার গঙ্গা নদীর পাড়ে কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়। হিমালয়ের কোলঘেঁষে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে এই আসর বসে। দেশ-বিদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ গঙ্গাস্নান করতে কুম্ভমেলায় আসেন। এবার হরিদ্বার, তেহরি, দেরাদুন জেলার ৬৭০ হেক্টরের বেশি এলাকাজুড়ে এই মেলা চলছে। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এই মলা আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এদিকে বেশ কয়েকজন সাধু করোনা আক্রান্ত হওয়ায় কুম্ভমেলা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিরঞ্জনী আখড়া ও তপোনিধি শ্রী আনন্দ আখড়া। বৃহস্পতিবার তারা জানিয়েছে, ১৭ এপ্রিল কুম্ভমেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করবেন ওই দুই আখড়ার সন্ত ও অনুগামীরা। কুম্ভমেলা চললেও করোনা ঠেকাতে দর্শনীয় স্থানগুলো বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদ

মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, গোটা দেশেই এএসআইর অধীনে থাকা সব মিউজিয়াম, স্মৃতিসৌধ আগামী ১৫ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতে এএসআইয়ের অধীনে রয়েছে ৩৬৯৩টি সৌধ এবং ৫০টি মিউজিয়াম। তাতে নাম রয়েছে তাজমহল, পুরীর জগন্নাথ মন্দির, সোমনাথ মন্দিরসহ দেশের একাধিক দর্শনীয় স্থানের। স্বভাবতই এই জায়গাগুলোতে ভিডিও হয়। করোনা সংক্রমণ রুখতে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত এসব জায়গা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে শুক্রবার থেকেই।