করোনা পরিস্থিতি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেবার তৎপরতা

সম্প্রতি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেবার ব্যাপারে সরকারের মধ্যে এক ধরনের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিও প্রকাশ্যে এসেছে। যেটির বিষয় হচ্ছে “কোভিড- ১৯ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় পুনরায় চালুর নির্দেশিকা।” যেখানে কোভিড- ১৯ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় পুনরায় চালুর নির্দেশিকা স্কুল পর্যায়ে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহন এবং সে অনুসারে বিদ্যালয় পুনরায় চালুর আগে প্রস্তুতি গ্রহন করতে বলা হয়েছে। হঠাৎ করে এই চিঠি এবং এই উদ্যোগ নিয়ে জনমনে এক ধরনের আতংক তৈরি হয়েছে। কারন দেশে এখনও করোনা ভাইরাসের প্রকোপ একটুও কমেনি যদিও অর্থনীতির গতি অব্যাহত রাখতে পর্যায়ক্রমে অফিস আদালত, ব্যবসা বাণিজ্য খুলে দেয়া হয়েছে কিন্তু এখনও আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার কোনভাবেই কমেনি। তাহলে হঠাৎ করে স্কুল খুলে দেবার এই তৎপরতা কেন?
আমি জানি না সরকারের নীতি নির্ধারক মহল কেন এবং কি চিন্তা করে এই তৎপরতা শুরু করেছেন তবে যেটাই চিন্তা করেন না কেন আমি মনে করি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেবার সময় এখনও আসেনি। আমরা অর্থনীতি সচল রাখতে কিংবা নিজেদের জীবন জীবিকার প্রয়োজনে হয়তো বাইরে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে যাবার চেষ্টা করছি কিন্তু শংকা এখনও পুরোপুরি বিদ্যমান। এমতাবস্থায় স্কুল কলেজ খুলে দিয়ে আমাদের সন্তানদের জীবনের উপর ঝুঁকি নেবার এই সিদ্ধান্ত কি আত্মঘাতী হয়ে যাচ্ছে না? যদিও মন্ত্রণালয়ের লোকজন বলার চেষ্টা করছেন যে স্কুল কলেজ খুলে দেবার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি কিন্তু তাদের এই চিঠির বিষয়বস্তু খেয়াল করলে দেখা যায় যে সেই সিদ্ধান্ত নেবার জন্যই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আমরা খুব ভালভাবেই জানি আমরা নিজেরা বড়মানুষরা যেখানে চারিদিকে এত প্রচারণার পরেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি না সেখানে ছোট ছোট বাচ্চারা কি করে সেই বিধি মেনে চলবে? রাস্তায় বেরোলেই অর্ধেকের বেশি মানুষকে মুখে মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা যায়। প্রথমদিকে আমাদের সুরক্ষা তৎপরতা বেশ শক্ত থাকলেও সময়ের সাথে সাথে সেসবের ধার কমে এসেছে।

অন্যদিকে অনেকে হয়তো বলবেন এতোদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। সেটা হয়তো ঠিক তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ছাত্র ছাত্রীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলার চেয়ে শিক্ষা বিলম্বিত হলেও ভাল। তাছাড়া এখন বেশিরভাগ স্কুলে অনলাইনে ক্লাস নেয়া চলছে তাতে কোনরকমে হলেও কার্যক্রম তো চলমান রয়েছে সেটাও বা কম কি। স্কুল খুলে দেয়া মানে তো শুধু তো একটা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া নয় তার সাথে ওতপ্রোকভাবে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু বিষয় যেমন; বাচ্চারা স্কুলে আসলে তাদের মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে আসতে হবে। প্রায় ৭/৮ ঘন্টা মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে রাখলে নি:সন্দেহে সেটা তাদের শরীরের উপর খারাপ প্রভাব পড়বে। তাদের ফুসফুসের জন্য তা মারাত্বক ক্ষতিকর হবে। এছাড়াও আমাদের দেশের বেশিরভাগ স্কুলেই পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের জন্য ভেন্টিলেশন সিস্টেম যথেষ্ঠ নয়। করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন খোলামেলা জায়গা তুলনামূলক ভাবে বেশি নিরাপদ। সেক্ষেত্রে একটা ছোট কামরার মধ্যে অনেক ছাত্রছাত্রী বসে ক্লাস করলে করোনা ছড়ানোর হার অনেক বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আছে স্কুলে যাতায়াতের জন্য পরিবহন সমস্যা । অনেক স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের আনা নেয়ার জন্য স্কুল ভ্যান ব্যবহার করা হয় যেখানে ছোট একটু জায়গার মধ্যে অনেক ছাত্রছাত্রী বসে থাকে সেটাও বেশ ঝুঁকিপুর্ন। অনেকে বলেন কমবয়সীদের মধ্যে করোনা আক্রান্তের হার কম এবং মৃত্যুর হারও একেবারেই কম কিন্তু মনে রাখতে হবে করোনা ভাইরাস হয়তো কমবয়সীদের কম ক্ষতি করতে পারবে কিন্তু তাদের বাসায় আছেন অনেক বয়োজেষ্ঠ্য মানুষ তারা কিন্তু আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া আমরা জানি বাচ্চাদেরকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয় তাই স্কুলে গেলে তারা হয়তো সচেতনতার ব্যাপারটি ভুলেই বসে থাকবে।

সর্বোপরি আমি মনে করি শিক্ষা পরিস্থিতি খারাপ দিকে গেলেও বাচ্চাদের স্বস্থ্য ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে এবং বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের কথা মাথায় রেখে সরকারের উচিত স্কুল খোলার সিদ্ধান্তটি আরও পরে নেয়া। হয়তো যদি এবছরে না খোলা সম্ভব হয় তবুও অস্থিরতা পরিহার করে সবদিক বিবেচনা করে কারও হঠকারী পরামর্শ গ্রহন না করে যথেষ্ঠ সময় অপেক্ষা করে করোনা একেবাওে নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত অন্তত স্কুলগুলো না খোলা।