কলাইডাঙ্গা-শিশির মাঠ সড়ক নির্মাণে নিম্মমানের সামগ্রী

সিরাজুদ্দোজা পাভেল,

ঠিকাদার সাংবাদিককে বলেন, ‘চোর পুলিশ না খেলে, কিছু লাগলে সরাসরি দেখা করেন’

মেহেরপুর সদর উপজেলার কলাইডাঙ্গা-শিশির মাঠ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। লকডাউনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও বালু দিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ করছেন ঠিকাদার শাহাবাজ উদ্দিন। নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্প এলাকায় কাজের তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগানোর কথা থাকলেও তা লাগানো হয়নি। ফলে সড়কটির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এনিয়ে অনুসন্ধানে গিয়ে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। একই ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও ম্যানেজ করে তিনি নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ করছেন এমন প্রশ্ন উঠে আসে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ বলছেন, নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণের কোন সুযোগ নেই।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে এবং সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার কলাইডাঙ্গা চৌধুরী বাড়ি থেকে শিশির মাঠ পযর্ন্ত সড়ক উন্নয়ন জিকে আর আইডিপি প্রকল্পের এক কোটি বিশ লক্ষ সাতাশ হাজার তিনশত সাতচল্লিশ টাকা ব্যয়ে ১৫২০ মিটার সড়ক পাকাকরণের কাজটি পায় মেসার্স জনি এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ঠিকাদার সাহাবাজ উদ্দিন।

ঠিকাদার সাহাবাজ উদ্দিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লকডাউননের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এভাবেই নিন্মমানের কাজ করে চলেছেন বলে অভিযোগ অনেকের।
সড়কে গিয়ে দেখা যায় তদারকি কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে।

প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা নুরল হক, জামেদুল ইসলাম, আরিফুর রহমান সহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সড়কটির কাজে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। তদারকি কর্মকর্তা না থাকায় ঠিকাদার নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করছে। নিন্মমানের ইটের সাথে মাটি পর্যন্ত রোলিং করা হয়েছে এই রাস্তায়। উন্নয়নের নামে এখানে দুর্বল ইট দিয়ে কাজ করা হয়েছে। এ ধরনের ইট দিয়ে কাজ করার চেয়ে মাটির রাস্তায় চলাচল করা অনেক ভালো।

এলাকার মুক্তার হোসেন বলেন, আমাদের বলার কিছু নেই। আমাদের মতো মানুষের কথা তো তারা শোনে না। দুই নম্বর আর তিন নম্বর ইট দিলে কি আর করার। বলে যখন লাভ নেই তখন রাস্তা যেমন হচ্ছে তেমনই ভালো। পায়ে কাঁদা তো লাগবে না। দু’দিন পর উঠে যাবে এই আর কি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়কে কাজ করা এক শ্রমিক বলেন, আমরা এখানে কাজ করি। ঠিকাদার যে ধরনের ইট আমাদের এনে দেয় আমাদের সেই ইট দিয়ে কাজ করতে হয়। তবে রাস্তা তৈরিতে অধিকাংশ নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

সড়ক নির্মাণ কাজের বিষয়ে টিপু মিয়া বলেন, নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার এবং সঠিকভাবে মজবুতিকরণ না করেই রাস্তার কাজ চলছে। গতকালকে (৩ মে) দু’গাড়ি নিন্মমানের ইট ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সড়ক নির্মাণ কাজের ঠিকাদার সাহাবাজ উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিন্মমানের কিছু ইট ছিলো। গতকালকে (৩ মে) ইঞ্জিনিয়ার এসে ইটগুলো সাইট থেকে সরিয়ে নিতে বললে সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, গোপনে কাজের সাইটে এসে এভাবে চোর পুলিশ খেলার দরকার নেই, কিছু দরকার হলে সরাসরি দেখা করবেন। কিছু লাগলে এসে বলবেন।

সদর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের জন্য রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেওয়া সহ সেই সাথে সকল নিন্মমানের উপকরণ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মেহেরপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কোন কাজ করার সুযোগ নেই। এবিষয়ে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।