২০০৪ সালে মেহেরপুরের নতুন মদনাডাঙ্গা গ্রামে স্থাপিত ‘মেহেরপুর টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠানটি কাগজে কলমে চালু আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ জন শিক্ষক ৬ জন কর্মচারী এবং শতাধিক শিক্ষার্থীও আছে কাগজে কলমে।
প্রতিষ্ঠানটিতে বজলুর রহমান নামের একজন শ্রমজীবী বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পতাকা উত্তোলন করে মাঠে কাজে যান। কাজ থেকে ফিরে আসার সময় দুপুরে পতাকা নামিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন। বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটিতে কোন কর্মচারী ও কোন শিক্ষার্থী নাই। প্রতিষ্ঠানটিকে এলাকার মানুষ মাঠে উৎপাদিত আলু পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও জানেন না প্রতিষ্ঠানটি কাগজে কলমে থাকলেও সেখানে কোন শিক্ষক শিক্ষার্থী না থাকার বিষয়টি।
গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে বিদ্যলিয়টির বারান্দায় প্রায় ১শ বস্তা আলু রাখা দেখা যায়। মাঠে কর্মরত লোকজন জানান- জেলা শহরের জামাল হোসেন নামের একজন আলু ব্যবসায়ী কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনে হিমঘরে রাখার জন্য বিদ্যালয়টির বারান্দা ও ঘরে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। বিদ্যালয় চত্বর বিভিন্ন ধরণের গাছ-পালাতে ঝোপ-ঝাড়ে পরিণত হওয়া দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নতুন মদনাডাঙ্গা গ্রামের একজন বলেন- প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিকভাবে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। বিএনপির শাসনামলের ওই সময় বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত না হওয়াতে দায়ীত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রতিষ্ঠানমুখো হওয়া বন্ধ করে দেন। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর ফের বিদ্যালয়টি চালু করার উদ্যোগ নেয়া হলেও কোন শিক্ষার্থী না পাওয়াতে কোন শিক্ষকও আর এমুখো হন না। কলেজ চত্বর থেকে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ রায়হান মুজিবের নম্বরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তার অবস্থান জানতে চাইলে বলেন- কলেজেই আছেন। আমরাও কলেজে জানালে তিনি বলেন বিশেষ প্রয়োজনে জেলা শহরে আছেন।
পরে স্বীকার করেন কাগজে কলমে প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২৭ জন শিক্ষার্থী আছে। এমপিওভুক্ত না হওয়া ও শিক্ষার্থী সংকটে কাগজে কলমে চালু রাখা হয়েছে। খোজ নিয়ে জানাগেছে, এই অধ্যক্ষ মেহেরপুর জেলা শহরে কাপড়ের ব্যবসা করেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস মো. হযরত আলী বলেছেন “মেহেরপুর টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠানটির চালু আছে বলে দাবি করেন। তবে একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত ‘বদরুণ নাহার টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট’ বন্ধ হয়েগেছে।
“মেহেরপুর টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট’ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও যেহেতু এখনো ইআইআইএন নম্বর আছে, মানে বোর্ডের অনুমোদন বাতিল হয়নি। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে কাগজপত্রে এখনো বন্ধের তালিকাভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নেই।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এমপিওভুক্তির আমায়। কিন্তু দির্ঘদিনেও যখন তা হয় না, তখন অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। অবার যথাযথ চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা না করেই অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু পরে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তেমন শিক্ষার্থী পায় না।