কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে একদল সাংবাদিক

বাংলা ভাষায় গ্রামীণ সাংবাদিকদের ইতিহাস লিখতে যে কয়জন সাংবাদিকের নাম আসে তাদের মধ্যে কাঙাল হরিনাথ মজুমদার অন্যতম। তার স্বপ্ন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কুন্ডুপাড়ার মাটিতে পোঁতা।

এতদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অবহেলায় পড়েছিল তার স্মৃতি। তবে সেসব স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর। জাদুঘরে রাখা হয়েছে মিউজিয়াম, অডিটোরিয়াম ও লাইব্রেরী। এই জাদুঘর এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। ফলে আসতে শুরু করেছেন দর্শনার্থীরা।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভা সংলগ্নে গড়ে তোলা হয়েছে গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতি জাদুঘর।
দর্শনীয় নির্মাণ শৈলীর দুইতলা ভবনে কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরের গ্যালারিতে ১৬৬টি নিদর্শন রয়েছে। মনোরম নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত লাইব্রেরীতে বইয়ের সংখ্যা রয়েছে প্রায় পাঁচশ। এছাড়াও রয়েছে একটি আধুনিক মিলনায়তন, যার আসন সংখ্যা শতাধিক।

সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরের দুইতলা দৃষ্টিনন্দন ভবনে ছোট বড় ১৫টি কক্ষ রয়েছে। সামনে রয়েছে সান বাঁধানো মুক্তমঞ্চ, সেখানে সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ভাস্কর্য জাদুঘরের শোভা বাড়িয়েছে। এছাড়াও কাঙাল হরিনাথ মজমুদারের ঐতিহাসিক ছাপার যন্ত্র এমএন প্রেসের মডেল, কিছু যন্ত্রাংশ, বাংলা টাইপ অক্ষর, ছবি ও কিছু পাণ্ডুলিপিসহ বেশকিছু কালের সাক্ষী স্মৃতি জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো জাদুঘর সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়। তাছাড়া মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টরের সাহায্যে সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুদদারের ওপর ভিডিও দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন দর্শনার্থীরা জাদুঘর পরিদর্শন করতে আসেন।
গ্রেটার কুষ্টিয়া নিউজের সম্পাদক মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, ‘কুমারখালীর ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ গ্রামীণ সাংবাদিকতার প্রবাদপুরুষ। তাকে অনুসরণ করা প্রয়োজন। এই যুগে কাঙাল হরিনাথের মতো সাংবাদিক প্রয়োজন। এখানে যাতে আরও বেশি দর্শনার্থী আসতে পারে বেশি বেশি প্রচার প্রচারনা চালানো দরকার।

কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরের মিউজিয়ামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ এহসানুল হক বলেন, ‘এই স্মৃতি জাদুঘরটি দেখভাল করে জাতীয় জাদুঘর। বর্তমানে এখানে ১৫ জন কর্মী আছে। প্রতি দর্শনার্থীর জন্য ১০ টাকা প্রবেশ ফি নেওয়া হয়। প্রতিদিন অর্ধশত দর্শনার্থী পরিদর্শন করেন। মাঝে মাঝে কলকাতা থেকে পর্যটক আসেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কুমারখালীর শিলাইদহে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ী, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর মাজার ও সাহিত্যিক মীর মোশারফের বাস্তুভিটার মতো এই জাদুঘরেও দর্শনার্থী আসবেন।’

শনিবার পরিদর্শনে এসেছিলেন বার্তা২৪.কমের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট এসএম জামালসহ মেহেরপুরের সাংবাদিক মেহের আমজাদ ও স্থানীয় সাংবাদিক সহকর্মীরা। তারা বলেন, ‘সহকর্মীরা মিলে জাদুঘর দেখতে এসেছি। সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম।’ ‘কাঙাল হরিনাথ গ্রামীণ সাংবাদিকতার প্রবাদপুরুষ। এই যুগেও তার মতো সাংবাদিক প্রয়োজন।’ বলেও উল্লেখ করেন তারা।

প্রসঙ্গত, অভাব অনটনের মাঝে বড় হলেও অবহেলিত সমাজের বৈষম্য তুলে ধরতে এবং তৎকালীন জমিদারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সচেতন করতে ১৮৬৩ সালে ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন তিনি। সেই পত্রিকায় লেখনীর মাধ্যমেই অবহেলিত মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন কাঙাল হরিনাথ মজুমদার। কাঙাল হরিনাথ একাধারে সংবাদ সংগ্রহ, সম্পাদনা এবং পত্রিকা প্রকাশ করতেন। আবার নিজেই পত্রিকা পাঠকের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতেন।

মেপ্র/ আরপি