
কুমিল্লা সীমান্তের ১০টি পয়েন্ট দিয়ে চাঁদপুরের ইলিশ পাচার হচ্ছে ত্রিপুরায়। এভাবে প্রতি রাতে বিপুল পরিমাণ ইলিশ যাচ্ছে ত্রিপুরার বিভিন্ন জেলায়। এতে একদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, অন্যদিকে স্থানীয় ভোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে, ভরা মৌসুমেও স্থানীয় বাজারে ন্যায্যমূল্যে মিলছে না ইলিশ। তবে কুমিল্লার বাজার থেকে কম দামে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ত্রিপুরার বিভিন্ন শহরের বাজারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও জেলার বাজারগুলো চাঁদপুরের মৌসুমি ইলিশে ভরপুর থাকত। কিন্তু সম্প্রতি চোরাকারবারি নেটওয়ার্কের কারণে ভরা মৌসুমেও বাজারে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। প্রতিদিনই চোরাকারবারি সিন্ডিকেটগুলো আড়ত থেকে বেশির ভাগ ইলিশ ওপারে পাচার করে দিচ্ছে। বাজারে ঢোকার আগেই অধিকাংশ ইলিশবাহী পিকআপ সীমান্তের দিকে চলে যাচ্ছে। বাজারে ইলিশের সংকটের কারণে ফড়িয়া বিক্রেতারা চড়ামূল্যে বিক্রি করছে। এতে জাতীয় মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার নিম্নআয়ের মানুষ।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন চাঁদপুরের বিভিন্ন ঘাট, একই জেলার হাইমচর এবং লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ইলিশ আসে কুমিল্লার আড়তগুলোতে। এর বেশির ভাগই চোরাকারবারি সিন্ডিকেটগুলো কিনে নেয়। সন্ধ্যার পর ইলিশবাহী বহু পিকআপ সরাসরি কুমিল্লার ভারত সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে চলে যায়। সদর দক্ষিণ উপজেলার মথুরাপুর, যশপুর, মুড়াপাড়া, দলকিয়া, আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, বড়জ্বালা, খাড়েরা, বুড়িচং উপজেলার তেলকুপি বাজার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল, সংকুচাইল, আশাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট এসব ইলিশ পাচার করছে। এতে জড়িতরা অধিকাংশই মাদককারবারি। ফলে তারা ইলিশের বিনিময়ে ওপার থেকে মাদক নিয়ে আসছে।
সরেজমিন সীমান্তের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্থানীয় বেলাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি রাতে ৪-৫টি পিকআপ এখানে আনলোড করা হয়। বরফে ঢাকা সাদা ককসিটে মোড়ানো ইলিশ কেরিং ম্যানরা নিয়ে যায় সীমানার ওপারে ত্রিপুরায়। তারা বর্ডার কন্টাক্ট করেই এসব মাছ পাচার করে থাকে।
বড়জ্বালা সীমান্ত এলাকার খলিলুর রহমান বলেন, যে পরিমাণ ইলিশ ভারতে পাচার হয় সেগুলো আমাদের বাজারে থাকলে ৫০০ থেকে হাজার টাকা কেজিতে ইলিশ পাওয়া যেত। শুনেছি সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরার বিভিন্ন বাজারে আমাদের কুমিল্লার চেয়ে কম দামে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সদর দক্ষিণ উপজেলার দলকিয়া সীমান্তের বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, সীমান্তের ওপারের লোকজনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়। তারা বলছে, তাদের ওখানে স্থানীয় বাজারে ৮-৯শ রুপি কেজি দরে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন প্রচুর ইলিশ ভারতে চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে আসছে গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ নানা চোরাই পণ্য। আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিতরা এর সবই জানে। এগুলো বলে আমরা বিপদে পড়তে চাই না।
এ বিষয়ে কুমিল্লা ডিবির ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, সীমান্ত দিয়ে ইলিশ পাচারের কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। এতে সীমান্তমুখী সড়কগুলোতে টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
কুমিল্লা-১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, সীমান্তের কোনো পয়েন্ট দিয়ে ইলিশ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমার কাছে নেই। আপনারা যদি তথ্য দেন তাহলে আমরা অভিযান পরিচালনা করব।