কুল চাষে ভাগ্য বদল কৃষক আবদুল মালেকের

আবদুল মালেক। পরিবারের দারিদ্রতা এবং অসচ্ছলতা দূর করতে যান দেশের বাইরে। সেখানে বিভিন্ন ফলের বাগানের শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ৬ বছর সেখানে কাজ শেষ করে এমন কিছু বাগান করবেন এই চিন্তা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন ২০১৫ সালের দিকে।

এরপর অন্যের জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন ফলের বাগান। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন ৩০ বিঘা জমিতে তিনি কাশ্মীরি আপেল কুল, বল সুন্দরী সহ পেয়ারা এবং নানান ফলের বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বলছিলাম সফল চাষী আবদুল মালেকের কথা। তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চন্ডিপুর এলাকার বাসিন্দা।

সরেজমিনে শুক্রবার তার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কুল বাগান পরিচর্যার কাজে তিনি ব্যস্ত। বাগানে আরও কয়েকজন শ্রমিক ব্যাস্ত পরিচর্যা ও কুল সংগ্রহ করতে।
এই বাগান পরিদর্শন করতে আরও কিছু উৎসুক জনতাকেও দেখা গেলো।

আবদুল মালেক প্রথমে ৫ বিঘা কৃষি জমি লিজ নিয়ে পেয়ারা বাগান শুরু করেন। এরপর আস্তে আস্তে বাগানের আয়তন বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে তিনি ৩০ বিঘা জমিতে তার বিভিন্ন ফলের বাগান গড়ে তুলেছে। ৩০ বিঘা জমির ১৮ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের কুল (বল সুন্দরী, কাশ্মীরি আপেল কুল, থাই কুল) চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন তিনি। ফিরেছে সুদিন। পাশাপাশি তার কুল বাগানে কাজ করে খেয়ে পরে ভালো আছে আরও ১০টি পরিবার।

সেখানকার এক শ্রমিক রনি আলী। তিনি জানান, প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন তিনি। তিনি জানান, এই ফলের বাগানে কাজ করতে আমার বেশ ভালোই লাগে। মাস শেষে যে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকি তা দিয়ে আমার সংসার বেশ ভালোভাবেই চলে। আমি আমার সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছি। তবে আমারও ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে এমন সুন্দর বাগান গড়ে তোলার।

আবদুল মালেক বলেন, অভাব অনটনের সংসারে ধারদেনা করে বিদেশে গিয়েছিলাম। সেখানে বিভিন্ন ফলের বাগানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি।
৬ বছর সেখানে কাজ শেষ করে দায়দেনা পরিশোধ করে এবং আরও জমানো কিছু নগদ টাকা নিয়ে দেশেই এমন কিছু বাগান করবেন এই চিন্তা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন ২০১৫ সালের দিকে।

এরপর অন্যের জমি লিজ নিয়ে শুরু করি ফলের বাগান। তিনি বলেন, এখন আমার ৩০ বিঘা জমিতে তিনি বলসুন্দরী, কাশ্মিরি জাতের কুল ছাড়াও সিডলেস লেবু, পেয়ারা, কলা বাগান ও কচুর আবাদ করছি।

দুই বছর আগে ১০ বিঘা এবং গতবছরে আর ৮ বিঘা জমিতে কয়েক ধরনের উন্নত জাতের কুল আবাদ করেছি।

এসব কুল চাষ শুরুর পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাগানের ফল ধরতে শুরু করে আশাতীত ভাবে।

বছর শেষে সকল খরচ বাদ দিয়ে এখান থেকে ৮-১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করবেন বলে আশা করেন আবদুল মালেক।

তিনি বলপন, বিক্রিতেও তেমন কোন ঝামেলা নেই। পাইকাররা এসে বাগান থেকেই সংগ্রহ করে ওজন দিয়ে নিয়ে যায়। তবে সিন্ডিকেট বাজার ব্যবস্থার কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত বলেও জানান তিনি।

তার বাগানে এসব কুল খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু। বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। আবদুল মালেকের এ সাফল্যে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এলাকার অনেক যুবক কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

মিরপুর উপজেলার হাজরাহাটি এলাকার বিপুল হোসেন ও জামাল এসেছেন আবদুল মালেকের কুল ক্ষেত দেখতে। তারা বাগান দেখে অভিভূত। তারাও তাদের জমিতে এই ধরনের কুল বাগান করবেন বলে জানান। শতারা জানান, তারা এই বাগানের কথা শুনে দেখতে এসেছেন। আগামী বছর তারাও এখান থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে কুলের চাষ করবেন বলে জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস জানান, আব্দুল মালেক কৃষক হিসেবে রোল মডেল। ৩০ বিঘা জমিতে সে নিজেই বিভিন্ন ফলের বাগান গড়ে তুলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ফলজ বাগান গড়ে তুলতে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে থাকি। তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সহজ বাগান গড়ে তোলার জন্য বীজ সার সহায়তা করে থাকি।