কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত ৯ চিকিৎসক

কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে গত ২০ দিনে ৯ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাঁদের মনোবল ঠিক রাখতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে জরুরি সভা করেছে করোনা হাসপাতাল ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

রবিবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ দেলদার হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক সালেক মাসুদ, সহকারী অধ্যাপক নাসিমুল বারী, আকরামুজ্জামান, ডাঃ রতন কুমার পাল, ডা: ইকবাল কবির, হাসপাতালের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ডাঃ আরিফুল ইসলাম ও করোনা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আশরাফুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ সূত্র জানায়, গত ২৬ জুন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পঞ্চম ব্যাচের ৪৩ জন শিক্ষার্থী করোনা হাসপাতালে ইন্টার্ন শুরু করেন। তাঁরা বিভিন্ন পালায় কোভিড ও নন–কোভিড রোগীদের সেবা দিচ্ছিলেন। যোগদানের কয়েক দিনের মধ্যেই চলতি ৭ জুলাই দুজন করোনা পজিটিভ হন। এরপর ১২ জুলাই আরও দুজনের করোনা শনাক্ত হয়। সবারই কমবেশি উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। গত ২২ জুলাই তিনজনের নেগেটিভ আসে।

এরপর গতকাল শনিবার মামুনুর রশীদ নামের একজনের করোনা শনাক্ত হয়। আজ রোববার একযোগে চারজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ৬ জন চিকিৎসক পজিটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে একজন নারী চিকিৎসককে করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা তাঁদের হোস্টেলে আইসোলেশনে আছেন।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তাঁদের চিকিৎসা ব্যয় নিজেদেরই বহন করতে হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা, ওষুধ ও খাবার কিনতে নিজেদের টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠান বা সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
একযোগে এতজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আজ রোববার জরুরি সভায় তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। তাঁদের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে চিকিৎসা ব্যয় সরকারিভাবে দেওয়া, চিকিৎসাসেবা দিতে প্রয়োজনীয় মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষ দেলদার হোসেন বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবিগুলো মনোযোগসহকারে শোনা হয়েছে। তাঁদের দাবি পূরণে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মনোবল বাড়ানো হয়েছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মিফতাহ মালিহা বলেন, ‘আমি নিজে পজিটিভ হয়েছিলাম। গত ২২ জুলাই নেগেটিভ আসছে। আমি কাল সোমবার থেকে আবার করোনা ওয়ার্ডে কাজ শুরু করব। হাসপাতালের যে পরিস্থিতি, তাতে চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে ঘরে রাখতে পারছি না।

মিফতাহ মালিহা আরও বলেন, যাঁরা পজিটিভ হয়েছেন, তাঁরা সবাই মোটামুটি সুস্থ আছেন। কিছু দাবি তোলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আদেশে সবাই কাজ করে যাচ্ছেন।

করোনায় আক্রান্ত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ব্যক্তিগতভাবে মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলোজি বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক নাসিমুল বারী বাপ্পী খাবার, এন –৯৫ মাস্ক ও কিছু ওষুধ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।

পজিটিভ শনাক্ত হওয়া ইন্টার্ন চিকিৎসক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘নাসিমুল বারী স্যার সব সময় সাহস জোগাচ্ছেন। খাবারসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। তাঁর অনুপ্রেরণা পেয়ে নিজেরা সাহস পাচ্ছি।