কোটচাঁদপুর বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংস্কার কাজে অনিয়ম

কোটচাঁদপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের কাজে অভিযোগ উঠেছে অনিয়মের। বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা কেটে নেয়া হয়েছে ভ্যাট আর আয়করের নাম করে, এমন অভিযোগ ও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এরপরও কাজ ভাল হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়,২০২১- ২২ অর্থ বছরে কোটচাঁদপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাইনর মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেন সরকার। এ বছর এর আওতায় উপজেলার ১৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ সব বিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে রঘুনাতপুর, কুল্লাগাছা, মানিকদিয়া, ছয়খাদা, শালকুপা, রাজাপুর, পারলাট, আব্দুররাজ্জাক, বাজেবামনদহ, হাড়াডাঙ্গা বিদ্যাধরপুর, বলাবাড়িয়া, চাঁদপাড়া, দূবাকুন্ড, কামারকুন্ড, চতুরপুর, ব্রক্ষপুর, হরিণদীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ইতোমধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের কাজ শেষ হয়েছে । বিলও তুলেছেন অনেকে। এর একটি হচ্ছে রঘুনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবেদ হাসান। আর প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন আবেদ হাসানের ভাই অমেদুল ইসলাম। এ দুই ভাই মিলে বিদ্যালয়ের মেরামত কাজের সিডিউল অনুযায়ী না করে তা ইচ্ছেমত সম্পন্ন করেছেন।

এমন অভিযোগ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য তাসলিমা খাতুনের। তিনি বলেন,থার্ড মাষ্টার যদি প্রধান শিক্ষক হন, তাহলে কাজ কেমন হবে। তিনি বলেন, কমিটি গঠনের পর মাত্র একটি মিটিংয়ে আমাকে ডেকে ছিল। আর কোন দিন ডাকেনি। আর বিদ্যালয়ে কখন কি হচ্ছে,তা আমি জানিনা। তবে অনিয়ম হচ্ছে এমন কথা শুনতে পাচ্ছি।

কাজ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন ওই গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ছাত্র সজিব আহম্মেদ। তিনি বলেন,বরাদ্দকৃত অর্থের একাংশও কাজ হয়নি এ বিদ্যালয়ে। জানা মতে বিদ্যালয়ের ভবন রং ও জল ছাদের কাজ করেছেন তারা। সজিব বলেন,দেখলাম ভবনের জল ছাদ করার জন্য ২ ট্রলি বালি আর কয়েক বস্তা সিমেন্ট আসতে। এতে করে সব মিলিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে ৭০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। বাকিটা যা হবার,তাই হয়েছে। একই অভিযোগ শালকুপা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সদস্য বৃথি ঘোষের। তিনি ও জানেন না বিদ্যালয়ের কাজের জন্য কত টাকা বরাদ্দ এসেছে । আর কি কাজ হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগে দুই একটা কাজের সময় আমাকে ডাকতো। এবার আমাকে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি। এ বিষয়ে শালকুপা গ্রামের বাবুল আহম্মেদ ও আবুল খায়ের বলেন,দৃশ্যমান কাজের মধ্যে ভবনে রং,গ্রীল,আর পাম্প। তারা বলেন,কোন দিন কোথাওৃ রাতে রংয়ের কাজ করতে দেখিনি। এই স্কুলে দেখলাম রাতে রংয়ের কাজ করতে। বিকাল ৫ টার সময় আসতো রং মিস্ত্রি আর রাত ১২ টা পর্যন্ত কাজ করতো। তাহলে কাজ কেমন হয়েছে, এটা আপনাদের কাছে প্রশ্ন আমাদের।

এমন অভিযোগ প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে কথা উঠেছে ওই কাজের ভ্যাট আর আয়করের টাকা নিয়ে। জানা গেছে,ভ্যাট আর আয়কর বাবদ কেটে নেয়া হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

যার প্রমান মিলেছে মানিক দিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন, মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। এর মধ্যে ৪০ হাজার টাকা কেটে বাকি টাকার কাজ করা হয়েছে। একই কথা বলেন, ছয়খাদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খাইরুল হোসেন।

তবে শালকুপা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেহেনা খাতুন বলেন,ভ্যাট আর আয়কর বাবদ আমাদের কাছ থেকে কেটেছেন ৩০ হাজার টাকা। তবে এ সব মানতে নারাজ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অসিত বরন পাল। তিনি দাবি করেছেন কাজ সিডিউল অনুযায়ী হয়েছে। আর ভ্যাট আর আয়করের যে টাকা টাকার অভিযোগ উঠেছে এটা সঠিক না। কারন তাদের টাকা চেকের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। টাকা কেটে নেয়ার কোন সুযোগই নাই। তিনি বলেন,আমার জানা মতে হিসাবরক্ষণ অফিস ১০ শতাংশ ভ্যাট আর ৩.৫০ শতাংশ ভ্যাট আর আয়কর কাটছেন।

তবে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ওই কাজের টাকা থেকে ৭ শতাংশ ভ্যাট আর ৩ শতাংশ আয়করের টাকা কাটা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর উপজেলা প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম বলেন, আমি ওই কাজের কারিগরি দিকটা দেখার দায়িত্বে রয়েছি। বিল দিবে শিক্ষা অফিস। কাজের মান ভাল হয়েছে বলে দেখে শুনে বিল দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা ছিল না। এখন জানলাম। শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে দেখি, ঘটনাটি কি ঘটেছে। এরপর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের আশুহস্ত কামনা করেছেন এলাকাবাসী।