কোভিড-১৯ পরবর্তি শিশুদের ক্ষতি ও করণীয়

কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর এবং দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়াসহ এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটি শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েেেছ বলে ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ১৯ অক্টোবর ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো এশিয়ায় শিক্ষা খাতের ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও মোকাবিলা কার্যক্রম বিষয়ক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ (সিটিএন রিপোর্ট) প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনের বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর উপর এ পর্যালোচনা করে তা এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনটিতে শিশুদের পড়াশোনার ওপর কোভিডের প্রভাব ও তা মোকাবিলায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারের গৃহিত কর্মসূচী ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়। দির্ঘ সময় ধরে স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় বেশকিছু ভয়াবহ পরিণতি লক্ষ্য করা গেছে সে বিষয়গুলো প্রতিবেদনে গুরত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কি কি করণীয় সে বিষয়েও প্রতিবেনটিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভয়াবহ পরিণতি গুলোর মধ্যে রয়েছে-পড়াশোনার ক্ষতি, মানসিক দুর্দশা, স্কুলের খাবার ও নিয়মিত টিকা না পাওয়া, কাঠামোগত শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি, শিশুশ্রম ও বাল্য বিয়ে বৃদ্ধি। এই ভয়াবহ পরিণতিগুলোর মধ্যে অনেকগুলো ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অসংখ্য শিশুকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং আগামী বছরগুলোতে তা ভুগিয়ে তুলবে।

ইউনিসেফের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতি তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দু’জনের কাছে দূরশিক্ষণ সেবা পৌঁছানো যায়নি। বস্তুগত সম্পদ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তার অভাব ছাড়াও এই কঠিন সময়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশু এবং অনেক কন্যাশিশুর দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণে উল্লেখযোগ্য আরও যেসব বিষয় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশের অভাব, গৃহস্থালীর কাজ করার চাপ বৃদ্ধি এবং বাড়ির বাইরে কাজ করতে বাধ্য হওয়া।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেছেন, “১৮ মাস বন্ধ রাখার পর বাংলাদেশে এখন যখন স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে, তখন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ রেখে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিশুদের সাহায্য করার জন্য দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণে আমাদের প্রচেষ্টায় কোনো ঘাটতি রাখা উচিত নয়। শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে বিনিয়োগ করার এখনই সময়।”

বিদ্যমান তথ্য-প্রমাণ বলছে, একটি সংকটের মুহূর্তে পড়াশোনার ক্ষতি সামাল দিতে শুরুতেই ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা অনেক সাশ্রয়ী ও কার্যকর হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার পেছনে বিনিয়োগ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিকে সহায়তা করবে।
মহামারিজনিত কারণে স্কুল থেকে শিশুদের, বিশেষ করে মেয়ে শিশু এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের, ঝরে পড়ার বর্ধিত ঝুঁকি সাম্প্রতিক দশকগুলোতে স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতিকে উল্টে দিতে পারে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) হিসাব অনুযায়ী, সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এশিয়া অঞ্চলে ১ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, যা এই অঞ্চলের ২০২০ সালের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫.৪ শতাংশের সমান।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘের ২০৩০ সালের এজেন্ডার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্য অর্জন করতে চায় তাহলে এ ধরনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এশিয়ার দেশুগুলোকে শিক্ষা বাজেট গড়ে ১০ শতাংশ বাড়াতে হবে।
ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্য অর্জন করতে এখনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের পথ তৈরি করতে হবে।
তথ্যসূত্র: ইউনিসেফ