গরমে ত্বক ও চুলের যত্ন

বসন্ত শুরু হয়েছে প্রকৃতিতে। রঙিন ফুলে সেজে উঠেছে চারপাশ। যান্ত্রিক শহরের অলিগলিতেও ব্যস্ততা উঁকি দিচ্ছে। ভোরের আলোর ফুটতেই চিরচেনা প্রকৃতিতেও দেখা দিচ্ছে বৈচিত্র্য। বাতাসে বইছে বসন্তের সুবাস আর মিলিয়ে যাচ্ছে কুয়াশার চাদর নরম রোদের আলোয়। ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে উষ্ণতা। গরমের শুরুর সেই পরিচিত রূপে ফিরতে শুরু করেছে আশপাশে।

শীত শেষে গরমের এ আগমনে ত্বকে এবং চুলের মাঝেও রেখে যাচ্ছে রুক্ষতা আর শুষ্কতার ছাপ। কাজেই গরমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কীভাবে আপনি চুল এবং ত্বক প্রাণবন্ত আর উজ্জ্বল রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী শাহীনা আফরিন মৌসুমী।

গরমের এ পুরোটা সময় সবচেয়ে বেশি চোখে পরে চুলের রুক্ষতার বিষয়টি। এর পাশাপাশি চুল পরে যাওয়া কিংবা খুশকির সমস্যা তো আছেই। তাই চুলের চাই প্রতিদিনের যত্নআত্তি। বাইরের ধুলাবালির কারণে চুলের রুক্ষতার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি চোখে পরে। এ ছাড়া এ সময়ে চুল আর্দ্রতাও হারায় খুব দ্রুত। তাই চুলের ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছনতার দিকে রাখতে হয় বাড়তি নজরদারি। প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত এ সময়ে। এতে চুল থাকবে পরিষ্কার আর সতেজ। শ্যাম্পুর পাশাপাশি গরমে চুলের যত্নে প্রয়োজন তেলের। নারিকেল তেলের ম্যাসাজ চুলের জন্য উপযোগী একটি পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে গোসলে যাওয়ার আগে চুলে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। যাদের চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা আছে তারা নারিকেল তেলের সঙ্গে কাস্টার ওয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এ তেলের ম্যাসাজ চুল পরা বন্ধেও বেশ সহায়তা করে।

এ ছাড়া ঘরোয়া কিছু প্যাক চুলে ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আপনার চুল যদি রুক্ষ হয়ে থাকে। তবে একটি পাকা কলার সঙ্গে একটি পেঁয়াজ, হাফ চা চামচ গ্লিসারিন আর এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে চুলে এ প্যাক ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়, এতে চুলকে রুক্ষতা থেকেও সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।

গরমের এ সময়ে চুলের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে খুশকি। এতে চুল যেমন রুক্ষ হয় তেমনি চুল পড়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। তাই গরমের এ সময়ে যাদের খুশকির সমস্যা দেখা দেয় তারা দুই টেবিল চামচ মৌরি সঙ্গে এক টেবিল চামচ মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পেস্ট করে তা চুলে এপ্লাই করতে পারেন। এর পর চুলে শ্যাম্পু করে নিলে খুব সহজেই খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

এ ছাড়া যাদের চুল পড়ার সমস্যা থাকে তারা দুই টেবিল চামচ আমলকী পাউডার সঙ্গে এক টেবিল চামচ মেথি আর এক টেবিল চামচ শিকাকাই পাউডার মিক্স করে চুলে এ প্যাক ব্যবহার করলে চুল পড়ার সমস্যা খুব দ্রুত দূর হবে।

এ প্যাক সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে হবে। এতে আপনার চুলে হারানো উজ্জ্বলতা যেমন ফিরে আসবে তেমনি চুল হবে সুন্দর আর এ গরমেও থাকবে প্রাণবন্ত চুলের যত্নের পাশাপাশি ত্বকের যত্নের বেলাতেও রাখতে হবে খেয়াল। যারা বাইরে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান তাদের সপ্তাহে অন্তত একটি দিন ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। তবে বাইরে থাকাকালীন যাতে ধুলাবালি মুখের ত্বকে বেশি সময় অবস্থান করতে না পারে তার জন্য পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে ভালো হয়। এ ছাড়া শুষ্ক ত্বকের জন্য ফেসওয়াস হিসাবে দুধের সঙ্গে বেসন ভালো করে মিক্স করে ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া সপ্তাহে একদিন চার থেকে পাঁচটি কাঠবাদাম দুধে কিছু সময় ভিজিয়ে রেখে ব্লেন্ড করে তাতে কয়েক ফোঁটা মধু এবং একটি ডিমের কুসুম মিক্স করে প্যাক আকারে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। মুখের থাকা প্যাক শুকিয়ে এলে তা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক আগের থেকেও উজ্জ্বল আর মসৃণ হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তিন টেবিল চামচ মুগ ডালের বেসন আর হাফ টেবিল চামচ মেথি মিক্স করে বোতলে রেখে দিতে পারি। মুখ ধোয়ার সময় পানির সঙ্গে মিক্স করে তা ফেসওয়াশ হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। এ ছাড়া দুই টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, হাফ টেবিল চামচ লেবুর খোসা পেস্ট, আট থেকে দশ ফোঁটা লেবুর রস আর তিন থেকে চার ফোঁটা মধু মিক্স করে সেই প্যাক মুখে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে মুখের তৈলাক্ত ভাব যেমন কমে আসবে তেমনি বলিরেখা কমাবে এবং ত্বক উজ্জ্বল আর সুস্থ রাখবে গরমের সম্পূর্ণ সময়জুড়ে।