গাংনীতে ঈদের আমেজে ক্লান্তিহীন কেনা কাটা

মেহেরপুরের গাংনীর নওয়াপাড়া গ্রামের গৃহবধু মৌসুমি খাতুন এসেছেন ঈদের পোশাক কেনাকাটা করতে। সাথে ননদ ও দু কন্যা, ননদ রুবিনা আর দেবর লালনকে নিয়ে। সকালে এসেছেন। দুপুর পর্যন্ত সবার জন্য পোশাক কিনেছেন। এখন ওই পোশাকের সাথে মিলিয়ে কিনবেন লীপস্টিক। ভীড় জমিয়েছেন প্রসাধনীর দোকানে। শুধু মৌসুমী নয় তার মতো অনেকেই স্বপরিবারে যুক্ত হয়েছেন ক্লান্তিহীন কেনা কাটায়। ভিড়, আর ধাক্কাধাক্কি সবকিছু ছাপিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সবার হাতেই ছিল একের অধিক ব্যাগ। বিভিন্ন বিপণি বিতানগুলোও যেন রয়েছে ক্রেতার দখলে।

বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে গিয়ে দেখা গেছে, ঘর্মাক্ত দেহ নিয়ে পছন্দের অনুসঙ্গ কেনার জন্য ছুটছেন এ দোকান থেকে ও দোকানে। বিভিন্ন রং আর ডিজাইনের কাপড় দেখে পছন্দ করার পর চলে দর কষাকষি। অবশেষে পছন্দের পোশাক কিনতে পেরে বেজায় খুশি ক্রেতা আর বিক্রেতা পোশাকটি বিক্রি করতে পেরে বেজায় লাভের মুখ দেখায় তার মুখেও মৃদু হাঁসি। এভাবে মায়ের হাত ধরে মেয়ে স্বামীর হাত ধরে স্ত্রী আর প্রেমিকের হাত ধরে প্রেমিকা ছুটছেন এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে।

বাংলা ও বাঙ্গালীয়ানায় নারীর ঐতিহ্যবাহী অনুসঙ্গ শাড়ী। শাড়ী ছাড়া বাঙ্গালী নারীর কোন অনুষ্ঠানই যেন বেমানান। সেই শাড়ীর সাথে রয়েছে নারীদের নাড়ীর টান বাঙ্গালীয়ানা। সেই টানেই তারা ছুটে চলেছেন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে শাড়ী কিনতে। দোকানে পাওয়া যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাতান, বালিচুরি, রাজশাহী সিল্ক। পাবনার তাঁতের শাড়ি যেমন নারীদের মন কাড়ছে তেমনি টাঙ্গাইলের গ্রামীণ চেকও নারীদের মন মাতিয়ে তুলেছে। তবে তুলনা মূলকভাবে শাড়ীর দাম নাগালের মধ্যে।

মার্কেটে অনুসঙ্গসহ ভিন্ন ভিন্ন জিনিষের মুল্য একটু চড়া বলে দাবী করলেও দোকানীরা বলেছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, ক্রেতাদেরকে প্রথমে একটু দাম বাড়িয়ে বলা হয়। পরে দামা দামি করে সহনীয় পর্যায়ে আসে। ক্রেতা সাধারণকে মালামাল না দিয়ে তাদের লাভ কোথায় ? লাভ না হলেও আসল তো উঠবে। এদিকে ক্রেতা সাধারণ জানালেন, গেল বছরের রং ও ডিজাইনের পোশাকের লেবেল লাগিয়ে নতুন বলে চালানোর চেষ্টা করছেন। দামও হাঁকছেন তেমন। সব নাগালের বাইরে। তার পরও পরিবারের লোকজনের বায়নার কারণে কিনতে হচ্ছে অনুসঙ্গ। তবে বাজারে ভারতীয় কোন নায়িকা বা মডেলের নামে পোশাক নেই। মহামারী করোনার কারণে ভারতীয় পোশাক আমদানী করা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন অনেক দোকানী।

ফুটপাথের মার্কেটও বেশ জমেছে। অভিজাত্য বিপনীর যাবার যাদের সামর্থ নেই তাদের ভরসা ফুটপাথ। বড়বড় শপিং মলে যে সকল অনুসঙ্গ রয়েছে, দেখতে একই রকম অনুসঙ্গ রয়েছে ফুটপাথে। শুধু কোয়ালিটি একটু আলাদা। গাংনী, রায়পুর, জোড়পুকুর ও বামন্দি বাজারের ফুটপাথে সেই চেনা চিত্র। কি নেই এখানে ? নিম্ন ও মধ্য বিত্তদেরকে ঈদের আনন্দ দেয়ার জন্য স্বল্প দামে হরেক রকম ডিজাইনের অনুসঙ্গ আমদানী করেছে ফুটপাথের দোকানীরা। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে শাড়ী। বাচ্চাদের পোশাক ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। ফুটপাথের ব্যবসায়িরা জানালেন, বেচা বিক্রি বেশ ভাল। এখানে যেসব পোশাক প্রসাধনী পাওয়া যায় তা একেবারই কোয়ালিটি সম্পন্ন না তা ঠিক না। ফুটপাথ হলো গরীব ও মধ্যবিত্তদের শেষ ভরসা।

গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, কোন ছিন্তাই রাহাজানি কিংবা ইভটিজিংয়ের মতো কোন ঘটনা না ঘটে সেজন্য পুলিশ টহলের ব্যবস্থা রয়েছে। এখনও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরএম সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ক্রেতারা যাতে না ঠকে সেজন্য প্রশাসন সব সময় মার্কেটগুলেঅ নজরদারীতে রেখেছে। তার পরও কারো কোন অভিযোগ থাকলে সেটি জানালে তাৎক্ষনিক আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।