গাংনীতে নৌকার গলার কাঁটা বিদ্রোহীরা

গাংনীতে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীরা এখন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের সবকয়টিতে রয়েছে একধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের হারাতে প্রতিপক্ষ হয়েছেন অর্ধশতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। জনপ্রিয় সমাজ সেবক এবং সক্রিয় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় সবকয়টি ইউনিয়নের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী সমর্থকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে আওয়ামীলীগ ঘরানার কর্মী-সমর্থকবৃন্দ নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছে। নৌকাকে হারাতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গণজোয়ারে নৌকার দলীয় প্রার্থীরা অনেকটাই কোণঠাসা অব্স্থা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পথ সভা, প্রচার প্রচারণায় ব্যাপক জনসমাগম দেখে নৌকার মাঝিরা হাল ছেড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গণজোয়ার দেখে প্রতিনিয়তই নৌকার প্রার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। অনেকেই বিজয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। কিছু কিছু ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ও নৌকা প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে জনমত যাচাইয়ে এমন অবস্থার কথা জানা গেছে।যোগ্য নেতাদের মনোনয়ন না দিয়ে আলোচিত ও অপাত্রে মনোনয়ন দেয়ায় তৃণমূল নেতা কর্মীদের মাঝে নির্বাচনের উৎসব মলিন হয়েছে। সে কারনে জনগণের মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে নেতা কর্মীরা নৌকার প্রাথীদের হারাতে ধড়ি মেরে মাঠে নেমেছেন।
উপজেলার কাথুলী ইউপিতে নৌকার প্রার্থী গোলজার হোসেনকে হারাতে ৩ জন আওয়ামীলীগ ঘরানার বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রানা, আবুল বাসার, শিহাব উদ্দন।
তেঁতুলবাড়ীয়া ইউপিতে নেীকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন এর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী নাজমুল হুদা বিশ্বাস, বিএনপি সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।
কাজীপুর ইউপিতে নৌকার প্রার্থী রেজাউল হক মাষ্টারের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে বিদ্রোহী প্রার্থী আলম হুসাইন, বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা আব্দুল আলীম গোলাম সরোয়ার আযম, আব্দুর রশীদ।
বামন্দী ইউপিতে নেীকার প্রার্থী ওবাইদুর রহমান কমলের প্রতিদ্বন্দ্বি আজিজুর রহমান, আব্দুল আওয়াল, সম্রাট বিশ্বাস,
মটমুড়া ইউপিতে নৌকার প্রার্থী আবুল হাশেমের প্রতিদ্বন্দ্বি বর্তমান চেয়ারম্যান জনপ্রিয় নেতা সোহেল আহমেদ,
ষোলটাকা ইউপির নৌকার প্রার্থী দেলবার হোসেনের বিপরীতে যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন পাশা, বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি।
সাহারবাটি ্ইউপিতে নৌকার মনোনীত প্রার্থী মশিউর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বি ছাত্রলীগ নেতা টুটুল, বাশিরুল আজিজ হাসান।
ধানখোলা ইউপিতে নেীকার প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাকের বিপরীতে বর্তমান চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান ও রাইপুর ইউপিতে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপুর বিরুদ্ধে অন্তরায় এখন ্ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী হাফিজুর রহমান মখলেচ। এছাড়াও প্রকাশ্যে বিরোধীতা না করলেও আওয়ামীলীগের জেলা উপজেলার শীর্ষ নেতারা নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করতে রহস্যমুলক ভুমিকা রেখে চলেছেন বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের তৃণমূলের নেতা কর্মী সমর্থকরা জানিয়েছেন, দলীয় মনোনয়ন অপাত্রে দেয়ার কারনে তারা জনগণের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে বিদ্রোহী প্রার্থীর আদলে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামীলীগ সমর্থিত নেতা কর্মীরা কেন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়তে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মটমুড়া ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহেল আহমেদ জানান, আমি বর্তমানে চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের একজন প্রতিনিধি হিসাবে আমার ইউনিয়নের স্কুল কলেজ, রাস্তা-ঘাটসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ, জনমানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহন,নাগরিক সেবা প্রদানসহ নানা উন্নয়ন করেছি। তাই জনগণের ভালবাসা ও জনপ্রিয়তা পেয়ে জনগণের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বি করছি।অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আমি ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবো।একই কথা জানিয়েছেন অন্যান্য ইউনিয়নের প্রার্থীরা।
নেতা কর্মী ও সমর্থকদের নিকট থেকে জানা গেছে, নেীকার মনোনয়ন অপাত্রে দেয়ায় গাংনী উপজেলায় দু একটি’ বাদে প্রায় সবকয়টি ্ইউনিয়নে নৌকার মাঝিদের ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে ভরাডবি হবে । শেষ পর্যন্ত নেীকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করে এখন জেলা উপজেলার শীর্ষ নেতা, এমপি, আওয়ামীলীগের সভাপতি-সম্পাদকদের মাধ্যমে বর্ধিত সভা, কর্মী সভার নামে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও গণজমায়েত করা হচ্ছে।
জয় পরাজয়ের মাধ্যমেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। ভোট যেন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়। সকলে যেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই দাবি তাদের।