গাংনীতে বেড়েছে স্টেরয়েডের ব্যবহার

মেহেরপুরের গাংনীর কুঞ্জনগরের রিজাবুল হকের ছেলে সাহিবুল। দিন পনের আগে হঠাৎ জ¦র ও কাশি দেখা দেয় তার। হেমায়েতপুর বাজারের গ্রাম্য চিকিৎসক সামশুল হকের কাছে আসলে তিনি স্টেরয়েড ব্যবস্থাপত্র দেন। শারিরীক কোন পরিবর্তন না হলে তাকে দ্রুত কুষ্টিয়া ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাহিবুল।

এদিকে বাথান পাড়া গ্রামের বিল্লালের স্ত্রী কুলসুম ঠান্ডা জ¦রে আক্রান্ত হলে রায়পুর বাজারের একটি ফার্মেসী থেকে স্টেরয়েড ওষুধ কিনে এবং সেই সাথে দুটি ইঞ্জেকশন পুশ করেন। কোন পরীক্ষা ছাড়াই রোগীকে এ ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয়। এতে জ¦র কিছুটা নিরাময় হলেও শারিরীক না সমস্যা দেখা দেখা দিলে তাকে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে সাহেবুলের মৃত্যু ঘটেছে ও কুলসুমের অবস্থা গুরুতর। কুলসুম বেঁচে গেলেও সুস্থ হতে অন্ততঃ ছয় মাস সময় লাগবে।

শুধু সাহিবুল কিংবা কুলসুম নয়, গ্রামাঞ্চলের রোগী সাধারণ প্রতিনিয়ত এমনি অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন সেকমো এমন অপচিকিৎসা প্রদান করেন। এতে একজনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। বালিয়াঘাট গ্রামের কাজি সোহেল রানা জানান, গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মর্তুজা জ¦র ও সর্দিকাশিতে আক্রান্ত হলে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেকমো মকলেছুর রহমানের শরণাপন্ন হলে তিনি স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। সেবনের কয়েকদিন পর মর্তুজার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ হয় মর্তুজার। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরেও অবস্থার পরিবর্তন না হলে তার মৃত্যু ঘটে। প্রশাসনিক কোন পদক্ষেপ না থাকায় এমন অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এমনি মন্তব্য করেছেন খোদ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎিসক সজীব উদ্দীন স্বাধীন জানান, স্টেরয়েড একটি জীবন রক্ষাকারী জরুরি ড্রাগ, এই ড্রাগের বহুরকম ব্যবহার আছে এবং প্রতিটি রোগেই এই নির্ধারিত প্রটোকল আছে কত পরিমানে দিতে হবে, কতদিন দিতে হবে। কিন্তু অস্বাভাবিক মাত্রা কিংবা ফল্টি ডোজ শরীর স্টেরইড ব্যালেন্স নষ্ট করে দেয়, শরীর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে বিভিন্ন জীবনঘাতি এটিপিক্যাল ইনফেকশন যেমন, নিউমোনিয়া ব্লাক ফাংগাস, সাইটোমেগালোর মত ইনফেকশনের কারন হতে পারে, এতে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মর্টালিটি বেড়ে যাবার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান শাওন জানান, গ্রামাঞ্চলেই শুধু নয় সবখানেই এই স্টেরয়েড ব্যবহার হচ্ছে যেটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বিভিন্ন সময়ে গ্রাম্য চিকিৎসকদের নিয়ে সেমিনার সিম্পোজিয়াম করা হয়েছে। আবারো জরুরী পদক্ষেপ নেয়া হবে স্টেরয়েড যাতে ব্যবহার ও বিক্রি না করা হয়।

এ ব্যাপারে ড্রাগ সুপার কেএম মহসিন মাহবুব জানান, লোকবলের সংকটের কারণে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো ও পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। তবে অদ্য থেকে সকল ফার্মেসীর মালিকদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে।