গাংনীতে ব্যবসায়ীদের হালখাতায় মন্দাভাব

মেহেরপুরের গাংনীর বামন্দী বাজারের ঔতিহ্যবাহী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আমজাদ গ্লাস হাউজ। নগদ বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়িদের কাছে বাকিতে বিক্রি করেন মালামাল। গেল বছরে তিন সহস্রাধিক খুচরা ব্যবসায়ি ও ব্যাক্তির কাছে বাকি পড়েছে অন্ততঃ সাড়ে তিন কোটি টাকা। হালখাতার দিন ধার্য করার পর করোনা ও লকডাউনের কারণে কোন ব্যবসায়ি আসেনি হালখাতায়। গেল বছরেও একই অবস্থা ছিল তার। গত বারের মতো এবার ও হালখাতায় টাকা না ওঠায় মহাজনদের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন না তিনি। ফলে ব্যবসায়ীক লেনদেনে ভাটা পড়বে। একই সাথে হালখাতা উৎসব এবার ম্লান হতে চলেছে। শুধু আমজাদ গ্লাস হাউজ নয়, তার মতো বহু ব্যবসায়ির কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। নিজেদের হালখাতা মন্দা হওয়ায় মহাজনদের দেয়া হালখাতার বাকি পরিশোধ করতে পারবেন না তারা। বকেয়াকারিরা বকেয়া পরিশোধ না করতে পারাই ব্যাবসায়ীরা নিচ্ছেন নানা কৌশল। হালখাতার দিন সকাল থেকে শুরু করছেন মাইকিং,বাড়ি বাড়ি পৌছে দিচ্ছেন মিস্টির প্যাকেট।

পাবনা শাড়ি হাউজের স্বত্তাধিকারী আব্দুস সাত্তার জানান, বিভিন্ন ব্যবসায়ি ও সাধারণ খরিদ্দারের কাছে নগদ ও বাকিতে বিক্রি করেন। পাঁচ শতাধিক লোকের কাছে অন্ততঃ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ইতোমধ্যে কার্ড বিতরণ করা হয়। লকডাউনের অজুহাতে কেউ আসেনি। মাত্র ২৫ জন হালখাতায় অংশ নিয়েছেন।

গাংনীর পাত্র জুয়েলার্সের মালিক শুসান্ত পাত্র জানান, প্রায় কোটি টাকা বাকি পড়েছে। গত সোমবার ও মঙ্গলবার হালখাতায় মাত্র দেড় লাখ টাকা উঠেছে। করোনা আর লকডাউনের অজুহাতে কেউ আসতে চাইছে না। মহাজনদের কাছে কি জবাব দিতে হবে তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।

হেমায়েতপুর গ্রামের হযরত আলী জানান, তার কাছে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ি হালখাতার কার্ড দিয়েছেন। কিন্তু ফসল নিয়ে কোন জায়গায় যেতে পারছেন না তিনি। বেচা বিক্রিও নেই। তাই এবার হালখাতা পরিশোধ করতে পারবেন না। একই কথা জানান মাছ চাষি যুগির গোফা গ্রামের আবু বকর। তিনি আরো জানান, মাছ বিক্রি করেন ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা এলাকায়। করোনা ও লকডাউনের কারণে মাছ নিয়ে আড়তে যেতে পারছেন না। মাছ বিক্রি করতে না পারায় এবার সবার হালখাতা করতে পারবেন না তিনি।

গাংনীর নওপাড়া বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী মওলুদের দোকানে গেলে তিনি জানান, খরিদ্দাররা বাকি নিয়ে যায়। বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা দিতে চাইনা। এজন্য আমরা প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখে হাল খাতা করি। এবারও করবো। হালখাতার কার্ড বাড়ি বাড়ি এক সপ্তাহ আগে পৌছে দিয়ে আসি। অনেকেই বলে মনে নেই। তাই বিকল্প হিসেবে মাইকিং এর ব্যাবস্থা রয়েছে। তাতেও না হলে বাড়ি বাড়ি মিস্টির প্যাকেট পৌছে দিয়ে আসলে কিছু টাকা আদায় হয়।
গাংনী মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক রমজান আলী জানান, হালখাতা হচ্ছে পুরোনো হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। বছরের প্রথমে ব্যবসায়ীরা তাদের দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে এদিন হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এ উপলক্ষ্যে গ্রাহকদের মিস্টিমুখ করান ও নতুন করে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করেন। গ্রাহকরাও তাদের সামর্থ অনুযায়ী পুরোনো দেনা শোধ করে দেন। মোঘল সম্রাটের আমল থেকে এ প্রথার প্রচলন।

গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি মাহাবুর রহমান স্বপন জানান, ঐতিহ্য রক্ষার জন্যই মূলত বাংলা বছরের ১ বৈশাখ হালখাতা উদযাপন করা হয়। কিন্তু করোনা ও রমজান মাস আগেই শুরু হওয়ায় ব্যবসায়িরা আগেভাগেই হালখাতার তারিখ নির্ধারণ করেন। ইতোমধ্যেই সিংহভাগ ব্যবসায়ি তাদের ফড়িয়া ও বিশেষ খরিদ্দারদের কাছে কার্ড বিতরণ করেছেন। অনেকেই করোনা ও লকডাউনের অজুহাতে হালখাতামুখি হবেন না। এতে ব্যবসায়িরা ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।