গাংনীতে ভাতা বঞ্চিত হলেন এক হাজার ভাতাভোগী

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মচারী কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারনে ভাতা বঞ্চিত প্রায় এক হাজার ভাতাভোগী।
সরকারি নিয়মঅনুযায়ী বিভিন্ন ভাতাভোগীদের তালিকা অনলাইনভুক্ত (এমআইএস) করার নির্দেশনা আসে সকল উপজেলায়। কয়েকমাস আগ থেকেই এ নির্দেশনা দেয়া হয় গাংনী উপজেলাতেও।
কিন্তু গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দায়িত্বে অবহেলা করায় গতকাল মঙ্গলবারে প্রায় এক হাজার ভাতাভোগী ভাতার টাকা নিতে এসে হতাশা নিয়ে ফিরে যান।
সমাজ সেবা অফিসের দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের ইউডিসিদের মাথায় চাপিয়ে দেয়ায় কর্মকর্তা বলেছেন আমরা ইউনিয়ন পরিষদের ইউডিসিদের দায়িত্ব অনলাইন ভুক্ত হতে পারেনি অনেকেই। অনলাইন ভুক্ত না হওয়ায় ভাতাভোগীদের টাকা দেয়নি ব্যাংক।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিস সুত্রে জানা গেছে, গাংনী উপজেলায় ৯ টি ইউনিয়নে এবং ১ টি পৌর সভায় মোট ১০ টি ইউনিটে বয়স্ক ভাতা ভোগী রয়েছেন ৪০৮০ জন এদের মধ্যে প্রায় ২০০ জন অনলাইন (এমআইএস) এন্ট্রিভুক্ত না হওয়ায় ভাতা বঞ্চিত হয়েছেন। বয়স্ক ভাতাভোগী রয়েছেন ৯৩৭২ জন এদের মধ্যে এ মাসে ভাতা বঞ্চিত হয়ে ফিরে গেছেন ৪৭৫ জন। এবং প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী রয়েছেন ৪৮৯৯ জন। এদরে মধ্যে ১২০জন প্রতিবন্ধীকে (এমআই এস) অনলাইনে এন্ট্রিভুক্ত না করতে পারাই ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন।
(এমআইএস) করতে সরকারি ভাবে দায়িত্ব দেয়া হয় সমাজ সেবা অফিসকে। সে দায়িত্ব সমাজ সেবা অফিস বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউডিসি কে ভাগ করে দেয়া হয়। ইউডিসিরা দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হওয়ায় এ জটিলতা শুরু হয়েছে।
ভাতাভোগীরা জানান, আমরা অশিক্ষিত মানুষ। অনলাইন কি আমরা বুঝিনা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ব্যাংকে টাকা দেবার কথা বলে সংবাদ দিয়ে নিয়ে আসেন সমাজ সেবা অফিসার। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদে ব্যাংক বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা পেলামনা। এখন বলছে আমাদের ভাতার বই নাকি অনলাইন হয়নি।
অনলাইন করতে সাহারবাটি ইউনিয়নের নিযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষক আছিয়া বেগম কে অনুরোধ করতে গেলে তিনি ১০০ টাকা চান বলে অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগী। টাকা দিতে না পারাই অনেকেই ভাতা বঞ্চিত হয়েছেন।
কি কারনে ১০০ টাকা দেয়া লাগবে এমন কথা জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কারিগরি প্রশিক্ষক আছিয়া বেগম তাদের সাথে খারাপ অচরণ করেন। পরে অনেকেই দিশেহারা হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিধবা ভাতা ভোগী জানান, আমাদের বাড়িতে খাবার নেই। রমজান শুরু হয়েছে। সাথে এক সমপ্তাহের লকডাউন। ভাতার টাকা তুলে হাট বাজার করতাম। কিন্তু তা হলোনা। কি খেয়ে রোজা থাকবো তা জানিনা।
অন্য এক ভাতাভোগী জানান, আজকে টাকা নিয়ে ওষুধ কিনতাম। প্রতিদিন অষুধ লাগে কিন্তু আজ তা হবেনা। কবে অনলাইন করবো আর কবে টাকা পাবো তা জানিনা। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের বললে তারাও দায়িত্ব নিতে চাইছেনা।
সাহারবাটি ইউনিয়নের এক ভাতাভোগী জানান, সাহারবাটি ইউনিয়নে নিযুক্ত ইউডিসি অনেক বই হারিয়ে ফেলে বিদেশ চলে গেছে। এখানে বর্তমানে ইউডিসি শূন্য থাকায় এমআইএস করা হচ্ছেনা। উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকেও কোনো সহায়তা করা হয়নি। ফলে আমাদের টাকা এখন অনিশ্চিত। আমাদের নাম আপনারা সংবাদে লিখে দিলে আমাদের আর টাকা পেতে সহায়তা করবেনা সমাজসেবা অফিসের আছিয়া বেগম।
এমআইএস কাজে নিয়োজিত কারিগরি প্রশিক্ষক আছিয়া খাতুন অনেক ভাতা ভোগীর বই আটকিয়ে অর্থবানিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। যাদের সাথে কৌশলে টাকা নিতে পেরেছেন তাদের বই কেবলমাত্র এমআইএস অর্ন্তভুক্তি হয়েছে বাকীরা হয়েছে বঞ্চিত।
এবিষয়ে আছিয়া বেগম জানান, আমি বয়স্ক মানুষ এই অফিসে ২০ বছর চাকরি করছি। দু’বার বদলি হয়েছি কিন্তু সেখানে যোগদান করিনি। তদবীর করে গাংনীতেই রয়েগেছি। কারো কাছ থেকে আমি টাকা চাইনি। তবে আমি অসুস্থ হওয়ায় সব কাজ করতে পারিনি।
গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কাজি মুনসুর জানান, এমআইএস করার দায়িত্ব সরকারি ভাবে আমাদের। তবে কাজ দ্রত শেষ করে ভাতাভোগীদের কাছে ভাতার টাকা পৌঁছে দেবার জন্য ইউনিয়নের উইডিসিদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। অনেকেই সে দায়িত্ব অবহেলা করেছে। যার ফলে আজ টাকা পাইনি অনেকেই। তবে যারা টাকা পায়নি তারা অফিসে যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।