গাংনীর কাজিপুর ইউনিয়নে শ্রমিকের তালিকায় গ্রাম পুলিশের নাম

গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নে ইজিপিপি প্রকল্পে নানা অনিয়মসহ অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান আলম হুসাইনের বিরুদ্ধে।

শ্রমিকদের মোবাইলে পাওয়া পারিশ্রমিকের টাকার ভাগ দিতে হয় চেয়ারম্যানকে। তার অনুগতদের কাজ না করিয়ে হাজিরা প্রদান করছেন তিনি। অন্যদিকে কাজ করেও পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক শ্রমিক। যারা টাকা পায়নি তাদেরকে দেওয়া হয়েছে অন্যদের টাকা। এমনটা জানালেন চেয়ারম্যান আলম হুসাইন।

গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের কর্ম সংস্থান সৃষ্টির লক্ষে (ইজিপিপি) প্রকল্পে বাস্তবায়িত হচ্ছে গাংনীর কাজিপুর ইউনিয়নে। প্রথম ধাপে ৩৩৫ জন শ্রমিক নিয়ে ৪০ দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এ কাজে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ, স্বচ্ছল ব্যাক্তিদের কাজে অর্ন্তভুক্তির ব্যাপারে নিষেধ রয়েছে। সেই সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ শেষে অত্র অফিসে প্রকল্প প্রদাণ সাপেক্ষে কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী ৫টি প্রকল্পে ৫জন ইউপি সদস্যকে প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

একটি সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান আলম হুসাইন প্রকল্প প্রদাণ ও শ্রমিক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি তার আধিনস্থ গ্রাম পুলিশ হেলাল উদ্দিনকেও শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও অনেক শ্রমিক রয়েছে তার অনুগত ও নিকট আত্মীয়। এরা কাজ না করলেও তাদের হাজিরা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে অন্তত অর্ধশত শ্রমিক কাজ করলেও তাদের মজুরি আসেনি এখনও। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেধে উঠেছে।

সরেজমিনে কাজিপুর ইউনিয়নের প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ। আলাপকালে শ্রমিকরা তাদের দূর্দশার কথা জানালেন। শ্রমিক সরদার আরিফুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান সাহেবের লোকজন শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে নিয়েছে। এ থেকে তিনিও রেহায় পাননি। প্রথমে ইউপি সদস্যরা ভেবেছিলেন এই টাকা তাদেরকে দেওয়া হবে। কিন্তু পরে কাউকে না দিয়ে চেয়ারম্যান সবটাই নিজের পকেটস্থ করেছেন।

একজন নারী জানান, তার স্বামীর জন্য তিনি প্রথমে ১৬শ টাকা চেয়ারম্যানের লোক হিসেবে পরিচিত হান্নানকে পরিশোধ করেন। পরে আরো ৪শ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। টাকা না দিলে নাম কেটে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিলে আরো ৪শ টাকা দেওয়া হয়।

শ্রমিকদের অনেকেই জানান, এভাবে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চেয়াম্যানের অনুগত শ্রমিক যাদের মজুরী আসেনি তাদের দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেছেন চেয়ারম্যান আলম হুসাইন যা সম্পুর্ণ নিয়ম বর্হিভুত। এছাড়াও অনেকেই দিন ভর কাজ করে যে মজুরী পান, চেয়ারম্যানের লোকজন কাজ না করেও সেই মজুরী পান। অন্যদিকে অন্তত পঞ্চাশ জন শ্রমিক প্রথম ধাপের কাজের মজুরী পায়নি। তারা চেয়ারম্যানের অনুগত নয় বলে মজুরী বঞ্চিত বলে মন্তব্য অনেকের।

প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের হাজিরা করা হচ্ছে না এবং কারো কাছে জবকার্ড নেই। আবার চেয়াম্যানেরও পরিদর্শন নেই। উপরন্ত শ্রমিকরা যেখানে কাজ করছেন সেখানে কাজের ধরণ সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়নি।

এবারে দ্বিতীয় ধাপে ৮০ দিনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পে নির্ধারিত স্থান ছাড়াও ইচ্ছামত বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় মাটি ভরাট করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। অথচ প্রকল্পে এই স্থানে মাটি ভরাটের নিদের্শনা নেই। এ ব্যাপারে প্রকল্প চেয়ারম্যান আজিজুল হক জানান, চেয়ারম্যানের নির্দেশেই তিনি এখানে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। তবে চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলছেন তিনি এবিষয়ে জানেন না।

এব্যাপারে কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম হুসাইন টাকা নেওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যারা মজুরী পায়নি তাদেরকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রাম পুলিশকে কেন শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার জবাব মেলেনি।

এসকল বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকার্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তী।