গাংনী সাব রেজিষ্টারের বিরুদ্ধে নানা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা সাব রেজিষ্টার মাহফুজ রানা যোগদানের পর থেকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে গাংনী সাব রেজিষ্ট্রি অফিস।

কয়েকজন দলিল লেখক জানান, সাব রেজিষ্টার মাহফুজ রানা যোগদানের পর থেকে গাংনী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে কর্মরত কতিপয় অফিস সহকারী ও দলিল লেখকদের মাধ্যমে ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পকেটস্থ করছেন।

এছাড়া হাতে লেখা দলিল দিয়েই এখানে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম চলছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাব-রেজিস্টার মাহফুজ রানা জানান, অফিসের ভিতরে যথা নিয়মেই কাজ কর্ম চলছে। সরকারী ফিস রিসিভের মাধ্যমে জমা নেওয়া হয়। তবে অফিসের বাহিরে দলিল লেখকরা কে, কি করছেন সেটা তার জানা নয়।

সরেজমিনে আজ মঙ্গলবার সাকালে গিয়ে জানা গেছে সাব রেজিষ্ট্রিার আজ সকালে তিনি মহুরীদের ডেকে দলিল প্রতি আরও ১ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের জন্য নিদের্শ প্রদান করেছেন।

কয়েকজন মহুরী জানান, আমাদের লাইন্সি নবায়ন বাবদ হাসনা হেনা বকুল আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ২৩শত টাকা নিয়েছে আজ পর্যন্ত নবায়ন করা হয়নি।সরকারী নিয়ম অনুযায়ী হেবা দলিলে ৫০০শত টাকার স্ট্যাম্প ও ফিস বাবদ ৭০০শত টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলে ও অফিসে অতিরিক্ত ৭০০শত টাকার পরির্বতে ১২শত টাকা ও ফালিং বাবদ ৩৫০ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের জন্য বাধ্য করেছে।এই টাকার কোন রশিদ দেওয়া হয়না।

জানা গেছে, গাংনী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে অডিট ব্যয়, নজরানা ও দলিল ফাইলিংয়ের নামে দলিল প্রতি ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, মসজিদ উন্নয়ন বাবদ ৫০ টাকা ও নকল সরবরাহের জন্য এক হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা, হেবা দলিল প্রতি ৫০০ টাকা সাব রেজিষ্টারসহ অফিসের কর্মচারীরা নিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় দলিল লেখকসহ ভূক্তভোগীরা।

আরো জানা যায়, নাম্বার রিং দলিল প্রতি ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এসব টাকা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছে অফিস সহকারী হাসনা হেনা বকুল, স্টাফ রতন, অফিসের পিয়ন মহিবুল ইসলাম, বশির আহমেদ। ওই টাকাগুলো সাব-রেজিষ্টার সহ সকল কর্মচারীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে থাকেন বলে জানা গেছে।

গাংনী সাব রেজিষ্ট্রী অফিসের সরকারী নিয়মানুযায়ী ইউনিয়নের কৃষি জমি ৭%, অকৃষি জমি ৮%, পৌর সভার মধ্যে ২%, প্রিন্টসহ হলফনামা বাবদ ৩০০ টাকা, ই-এ-এন বাবদ ২২৫ টাকা, পে- অর্ডার , নোটিশ বোর্ড ফিস বাবদ ২০০ টাকা ও দলিল লেখকদের লেখা খরচ বাবদ ৮২৫ টাকা উল্লেখ থাকলেও দলিল লেখক সমিতি নানা কারণ দেখিয়ে অলিখিত সিন্ডিকেট তৈরী করে ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন।

ভবানিপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম জানান, আমার জামায়ের জমি রেজিস্ট্রি করার সময় ফাইলিং বাবদ ৫০০টাকা অতিরিক্ত নিয়েছে মহুরী। অফিস স্টাফ বশির আহমেদ মসজিদ উন্নয়নের নামে ৫০টাকা নিয়েই তবে টিপসই নিয়ে থাকেন।

সমপ্রতি ধর্মচাকী গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান,আমার স্ত্রীকে তার মায়ের জমি হেবা দলিলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করার সময় মহুরী আমার কাছ থেকে অতিরিক্ত অফিস খরচ বাবদ ১হাজার টাকা বেশি নিয়েছে মোট ৬ হাজার টাকা নিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে গাংনী উপজেলার ষোলটাকা গ্রামের বেক্রা ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার জমি হেবা দলিলের মাধ্যমে আমার ভাইকে দিতে গেলে মহুরী আমার কাছ থেকে ৩হাজার ৫০০টাকা গ্রহন করেন।জানতে চাইল তিনি বলেন,অফিসের খরচ ২হাজার ৫০০টাকা দিতে হয়।আমারা লেখা খরচ থাকে মাত্র ১হাজার টাকা। এক প্রশ্নেনের জাবাবে মহুরী বলেন,আমারা চাকুরী করি সাব রেজিষ্ট্রারের অনুকুলে তাদের টাকা না দিলে লাইন্সি বাতিল করে দেওয়ার ভয়দেখান।

কুঞ্জনগর গ্রামের মকলেছুর রহমান জানান, জমি রেজিস্ট্রি করার সময় ফাইলিং বাবদ ৪০০ টাকা ও ঘোষণাপত্র বাবদ ৬০০ টাকা নেয়া হয়েছে। একই সাথে নকল সরবরাহের জন্য মহুরী এক হাজার টাকা নেন। এ টাকার কোন রশিদ দেননি তিনি। একই কথা জানালেন হোগলবাড়িয়া গ্রামের শামীম।

এব্যাপারে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন পিন্টু জানান, সাব রেজিষ্টার মাহফুজ রানা যোগদানের পর থেকে দলিল লেখকদের কাছ থেকে অফিস খরচ বাবাদ সাব রেজিস্ট্রি অফিস কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ৩৫০ টাকা করে গ্রহণ করেন। এই টাকার কোন রশিদ আমাদেরকে দেওয়া হয়না। হেবা দলিলে ৫০০টাকা নিয়ে থাকেন। এই টাকারও কোন রশিদ দেওয়া হয়না। আমরা এর বাইরে ক্রেতা-বিক্রেতার নিকট থেকে টাকা আদায় করিনা।মুজিববর্ষ পালনে স্যারের ফকেটের টাকা খরচ হওয়ায় স্যার আবারও দলিল প্রতি ১টাকা আদায় করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, আমরা অফিসের বাইরে কোন টাকা আদায় করিনা। অফিস খরচ বাবদ ৩৫০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়। হেবা দলিল প্রতি ৫০০টাকা অফিস নিয়ে থাকে।এ টাকার সরকারী কোন রশিদ আমাদেরকে দেয় না। তিনি বলেন, টাকা নেয় অফিস, আর নাম হয় দলিল লেখকদের। আমাদের নিকট থেকে টাকা না নিলে আমারা ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে আরো কম টাকা নিতে পারতাম।

গাংনী উপজেলা সাব রেজিষ্টার মাহফুজ রানা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি যত দিন আছি কোন অনিয়ম হবে না। সরকারি রশিদ ছাড়া কোন টাকা নেওয়া হয়না। মহুরীরা আমার নাম ব্যাবহার করলে আমার কিছু করার নেই। তবে আমি আসার পার দেখি এখানে ভুয়া সাংবাদিক ও কিছু নেতা,গাঁজা খোর অফিসে মাসুয়ারা নিতো আমি আসার পর সেটি বন্ধ করে দিয়েছি।আমি আগে এটিএন বাংলা টিভি তে সাংবাদিকগতা করতাম মুন্নিশাহার সাথে আমার পরিচয় আছে।

আপনারা কে আমার কথা রেকর্ড করার কী ভাবে সংবাদ নিতে হয় আমার কাছ থেকে জেনে যাবেন।আমার নামে কোন নিউজ হলে আপনারদের বিরুদ্ধে অনেক পত্রিকায় আমি নিউজ করবো।আমার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়।আমার বাবা আওয়ামীলীগের লেডার।আমি বাহিরাগতদের এখানে প্রবেশ করতে দেবনা।তিনি আরও বলেন আমার অফিসে অনিয়ম হলে সাংবাদিকদের কী তারা আমার অফিসের তদন্ত করার কে আমার অফিসের ব্যাপার অমি বুঝবো।