গাজীপুরে সাত মাসেও মেয়রের প্যানেল নির্বাচন হয়নি

নির্ধারিত সময়ের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের প্যানেল নির্বাচন করা হয়নি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও প্যানেল ঠিক করে দেয়নি। মেয়রের অনুপস্থিতিতে কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা সুনির্দিষ্ট নেই।

একাধিক কাউন্সিলরের অভিযোগ, মেয়র জাহাঙ্গীর আলম চান না, এ কারণে মেয়রের প্যানেল নির্বাচন করা হয়নি। তবে মেয়র দাবি করেছেন, কাউন্সিলরদের কেউ এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাব করেননি। যে কারণে এই নির্বাচন করা হয়নি। তা ছাড়া, কোনো কাউন্সিলর মেয়র পদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না বলেও তিনি মনে করেন।

মেয়রের অনুপস্থিতিতে মেয়র পদের দায়িত্ব পালন করার জন্য মেয়রের প্যানেল নির্বাচন করে রাখা হয়। এই প্যানেলটি তিন সদস্যের। এই প্যানেল নির্বাচনের আইনি বাধ্যবাধকতা আছে।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত প্রথম সভার এক মাসের মধ্যে কাউন্সিলররা অগ্রাধিকারক্রমে নিজেদের মধ্য থেকে তিন সদস্যের একটি মেয়রের প্যানেল নির্বাচন করবেন। এর মধ্যে একজন অবশ্যই সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরকে রাখতে হবে। মেয়রের প্যানেল নির্বাচিত না হলে সরকার মেয়রের প্যানেল মনোনীত করবে। অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে মেয়র দায়িত্ব পালন করতে না পারলে বা অনুপস্থিত থাকলে মেয়রের প্যানেল থেকে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে একজন সদস্য মেয়রের সব দায়িত্ব পালন করবেন। পদত্যাগ, অপসারণ বা মৃত্যুজনিত কারণে মেয়রের পদ শূন্য হলে নতুন মেয়র নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত মেয়রের প্যানেলের কোনো সদস্য মেয়রের সব দায়িত্ব পালন করবেন।

তবে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন, মেয়রের সাময়িক অনুপস্থিতিতে স্থানীয় সরকার যাঁকে দায়িত্ব দেবে, তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করবেন, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওই দায়িত্ব পালন করবেন। কাউন্সিলররা মেয়র পদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

 গত বছরের ২৭ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। আইন অনুযায়ী, এর পরবর্তী এক মাস অর্থাৎ ৮ অক্টোবরের মধ্যে মেয়রের প্যানেল নির্বাচন করার কথা ছিল।

৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল নাসির উদ্দীন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, এখনো প্যানেল নির্বাচন হয়নি। কেন হয়নি, তা তিনি বলতে পারছেন না। এই নির্বাচন নিয়ে পরিষদে কোনো আলোচনাও হয়নি। প্রায় একই কথা বলেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তানভীর আহমদও। তিনি বলেন, ‘কেন প্যানেল নির্বাচন হয়নি, তা মেয়র মহোদয় বলতে পারবেন। আমরা এর সদুত্তর দিতে পারব না। মেয়র এই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।’

একাধিক কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, পরিষদের বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিজে এককভাবে নেন। কাউন্সিলরদের তেমন কিছু বলার থাকে না। অনেকে ইচ্ছা করেই চুপ থাকেন।

মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম মাসে প্যানেল করার কথা। কিন্তু যেদিন করপোরেশনের বৈঠক হয়েছে সেদিন বা এরপর কাউন্সিলরদের কেউ এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেননি। এ কারণে এটা হয়নি। কাউন্সিলরদের অভিযোগের বিষয়ে মেয়র বলেন, কাউন্সিলরদের কেউ কেউ নানা ধরনের অবৈধ সুবিধা চান। সেসব না পেয়ে বাইরে অপপ্রচার চালান। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে নেন না, সবাই কার্যবিবরণীতে সই করেন।

অবশ্য মেয়রের প্যানেল নিয়ে মেয়রের ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার আইন করার সময় তাঁরাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মেয়র নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিলে তা হবে না। মেয়রের অবর্তমানে দায়িত্ব পালন করার জন্য কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে তিন সদস্যের একটি প্যানেল নির্বাচন করতে হবে। জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে তাঁরা মেয়রের দায়িত্ব পালন করবেন। শপথ নেওয়ার পর একজন মেয়রকে অবশ্যই আইন অনুসরণ করতে হবে। প্যানেল নির্বাচন না করে আইন অমান্য করা কাম্য নয়।