গ্রাম পুলিশ আনোয়ারসহ বাকি আসামি অধরা

মেহেরপুরের বুড়িপোতায় প্রেমিক তপনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও মুল আসামিসহ কোনও আসামিকেই আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে প্রেমিকা রোমনা খাতুনকে প্রথমে হেফাজতে নিলেও পরে এই মামলার আসামি দেখিয়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানা হয়েছে। বাকি ৯ আসামি আত্মগোপনে রয়েছে।

মামলার মূল আসামি গ্রাম পুলিশ আনোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্তের প্রক্রিয়া চলছে।
তবে পুলিশ অভিযান চালিয়েও কোন আসামীকে আটক করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিহত তপনের পরিবার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবুল খায়ের বলেন, আসামীদের দ্রুত আটক করার চেষ্টা চলছে। আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যহত রেখেছি। আশা করছি দ্রুত আসমীদের আটক করে আইনের আওতায় আনতে পারবো।

তিনি আরো জানান, প্রেমিকা রোমানা খাতুনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। এই মামলায় তাকে আসামি করায় আটক দেখিয়ে আদালতে প্রেরন করে সদর থানা পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি  রাতে গণপিটুনির ঘটনা ঘটলেও তপন মারা যায় ১ মার্চ দুপুরে। পরদিন তপনের মা বুলুয়ারা খাতুন বাদি হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় ১০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আসামীরা হলেন, মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে গ্রাম পুলিশ আনোয়ার হোসেন, আবুল হোসেনের ছেলে আনারুল ইসলাম, আনারুল ইসলামের ছেলে খোরশেদ আলম, টুটুলের ছেলে রকি, রশিদুল ইসলাম তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুন ও তার মেয়ে প্রেমিকা রোমানা খাতুন, আনারুল ইসলামের ছেলে নুর আলম, মিয়ারুলের মেয়ে রিনা খাতুন।

খোজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার দিন থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে আসামীরা। হত্যা কান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। তপনকে পেটানোর রাত থেকেই তারা এলাকা ছেড়েছে বলে জানায় এলাকাবাসী।

তপন হত্যাকান্ডের ঘটনায় মেহেরপুর প্রতিদিনের বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরিকল্পিতভাবে তপনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। তবে পুলিশি তদন্তের পর আসল সত্য উদঘাটন হবে।

বুড়িপোতা গ্রামের খোকন, বাছির, রাজ্জাক সহ আরও কয়েকজন বলেন, রোমানার সাথে বিয়ের কথা বলে তপনকে ডেকে নিয়ে আসে রোমানার দু:সম্পর্কের ফুফু রিনা খাতুন ও মামলার ১ নং আসামী আনোয়ার হোসেন। রোমানার বয়স কম থাকায় সামাজিক রীতিতে বিয়ে দিতে সমস্যা হবে ভেবে ঐ রাতে তপনের হাতে মেয়েকে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কথা মত তপনসহ পাঁচজন একটি ইজিবাইক ভাড়া করে বুড়িপোতা গ্রামে যায়। পরে সেখান থেকে বাজিতপুর তার এক আত্মীয়র বাড়িতে যায়। সেখান থেকে ফিরে এসে বাড়িবাকা গ্রামে বেড়াতে যায়। পরে বুড়িপোতা গ্রামে ঢোকার সময় আনোয়ার তাদের রাস্তা অবরোধ করে। এসময় তপনসহ তার সঙ্গিদের উদ্দেশ্য করে আনোয়ার বলে, তোরা ফেন্সিডিলের ব্যবসা করিস। সেই সাথে আমি পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে তপনকে বেধড়ক পেটাতে থাকে।

পরে ইউপি সদস্য শরিফ রেজাকে আনোয়ার জানায় পাঁচজন ছাগল চোর ধরা হয়েছে। ইউপি সদস্য শরিফ সেখানে গিয়ে মূল ঘটনা জানতে পেরে তপনের পরিবারকে খবর দেয়। সদর উপজেলার রামনগর কলনী পাড়া থেকে তপনের পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেলারেল হাসপালে নিয়ে যায়। পরদিন রাজশাহী নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এলাকাবাসী জানান, হত্যাকান্ডের মূল নায়ক আনোয়ার বছর দশেক আগে বাজিতপুর গ্রাম থেকে বুড়িপোতায় চলে আসে। ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজনকে ম্যানেজ করে গ্রাম পুলিশের চাকরি নেয়।

রোমানার মা সুফিয়া খাতুনের সাথে আনোয়ারের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এমন গুঞ্জন রয়েছে এলাকায়। রোমানার পিতা পেশায় রাজমিস্ত্রি। বেশির ভাগ সময়ই সে বাইরে থাকতো। এই সুযোগে বাড়ির কতৃত্ব চালাতো আনোয়ার।

এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী ইঙ্গিত দিয়ে জানান, মায়ের সাথে সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি রোমানার দিকেও আনোয়ারের ছিল লোলুপ দৃষ্টি। ধারনা করা হচ্ছে এ কারনেই তপনকে আনোয়ার সহ্য করতে পারতো না।

মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান জানান, তপন হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও ১ নং আসামি আনোয়ারকে গ্রাম পুলিশ থেকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর সুপারিশ পত্র পাঠানো হবে। তারপর জেলা প্রশাসক আইনগত সিদ্ধান্ত নেবেন।

উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে মেহেরপুর সদর উপজেলার রামনগর কলনী পাড়ার আনছার আলীর ছেলে তপন বুড়িপোতা গ্রামে গনপিটুনির শিকার হন। পর দিন দুপুরে তার মৃত্যু হয়। তার একদিন পর ময়না দদন্ত শেষে তপনের দাফন করা হয়।