গ্রীষ্মেও মরবে না করোনাভাইরাস

গ্রীষ্মের খরতাপে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবার শক্তি হারিয়ে ফেলবে বলে বিভিন্ন মহলে যে ধারণা করা হচ্ছিল তা থামিয়ে দিলেন ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অব এক্সি-মারসিলে ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।

গবেষণায় গতকাল রবিবার (১৯ এপ্রিল) তারা জানিয়েছেন যে, মৌসুমী ফ্লু’র মতো করোনাভাইরাস গ্রীষ্মকালে বিদায় নেবে না। এই গবেষণা কর্মের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্টরা না দিলেও গ্রীষ্মেও করোনা সংক্রমিত হতেই থাকবে এ নিয়ে নিশ্চিত প্রাথমিক পর্যায়ের এই গবেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ হাজারসহ বিশ্বের এক লাখ ৬৫ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই ভাইরাস শক্তিহীন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ১৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় অন্তত ১৫ মিনিট তাকে দগ্ধ না করা হবে। ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায়ও করোনা ভাইরাস মরেনি কিংবা তাকে নির্জীব করা সম্ভব হয়নি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে গবেষক টিমের সদস্য রিমি চ্যারেল এবং বরিস প্যাস্টেরিনো।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রকে সচল করতে এন্টিবডি টেস্ট ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির জন্যে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটনসহ আক্রান্ত রাজসমূহের গভর্নরদের আহ্বানে বিন্দুমাত্র সাড়া না দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উষ্কে দিচ্ছেন অবরোধ উঠয়ে নেয়ার দাবিতে বিভিন্ন স্থানের বিক্ষোভকে।

গতকাল রবিবার হোয়াইট হাউজে করোনা সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের নিয়মিত ব্রিফিংকালে সাংবাদিকে প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন যে, যারা অবরোধ অবস্থার দ্রুত অবসানে বিক্ষোভ করছেন তাদের সাথেও তিনি আছেন। সকল আমেরিকানের সাথেই তিনি রয়েছেন।

উল্লেখ্য, এন্টিবডি টেস্ট করার মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব কারা করোনায় আক্রান্ত নন। সেটি করা সম্ভব হলেই আক্রান্তদের চিকিৎসা পুরোদমে শুরু করা যাবে এবং যারা সুস্থ তারা বিদ্যমান রীতি অনুসরণ করে কাজে যোগদান করতে পারবেন। তাহলে কর্মস্থলের পরিবেশ নির্বিঘ্ন হবে।

উপরোক্ত স্টেট গভর্নররা অভিযোগ করেছেন যে, ট্রাম্পের মাধ্যমে ফেডারেল অনুদান অথবা এন্টিবটি টেস্টিং সামগ্রি না পেলে পুনরায় আামেরিকা সচল করার পরিক্রমায় নিযুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।

স্টেট গভর্নররা আরও অভিযোগ করেন যে, বর্তমানে দৈনিক গড়ে দেড় লাখ লোকের টেস্ট করা হচ্ছে। অথচ এই হার তিনগুণ বাড়ানো না হলে ১ মে’র পর কোনভাবেই অবরুদ্ধ অবস্থার অবসানের প্রথম স্তরে যাওয়া সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, সারা আমেরিকায় বিশেষ জরুরী অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট নিজেই। সে অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবার অনুমতি নেই। যারা বিশেষ জরুরী কাজে বাইরে যাবেন তাদেরকেও মাস্ক পরে যেতে হবে এবং একেকজনকে অবশ্যই ৬ ফুট দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।

ট্রাম্পের এই নির্দেশ অমান্য করে মিশিগান, ওয়াশিংটন, কলরাডো, মিনেসোটা, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড স্টেটের প্রধান প্রধান শহরে গত দু’দিনে বেশ কটি বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। তারা অবরুদ্ধ অবস্থা অবিলম্বে উঠিয়ে নেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। এর ফলে করোনা আরও বেশি সংক্রমিত হবার আশংকা প্রবল হচ্ছে বলে স্টেট গভর্ণররা উল্লেখ করলে ট্রাম্প আরও বেপরোয়া হয়ে বলেছেন, আমেরিকার ব্যবসা-বাণিজ্য সচল করতে যারা মাঠে নেমেছেন তারা সঠিক কাজটি করছেন। অর্থনীতিকে সরব করতে সকলকেই কর্মস্থলে যেতে হবে।

এদিকে, সবচেয়ে বেশী নাজুক অবস্থায় পতিত নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো গতকাল রবিবার এক ঘোষণায় বলেছেন যে, বাইরে মাস্ক পরে বের না হলে অথবা একেকজন ৬ ফুট দূরত্বে অবস্থান না করলে জরিমানা করা হবে এক হাজার ডলার করে।

উল্লেখ্য, স্টেট গভর্নর এ্যান্ড্রু ক্যুমোর নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী গত শুক্রবার থেকে মাস্ক পরা ব্যতিত কাউকে বাসার বাইরে বের হবার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব অবলম্বনেরও নির্দেশও রয়েছে এই আদেশে। ১৫ মে পর্যন্ত বহাল করা হয়েছে নিউইয়র্ক স্টেটের লকডাউনের মেয়াদ। এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি চলতি শিক্ষাবর্ষের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন