চুয়াডাঙ্গায় ভাঙ্গা পরিবার জুড়া লাগালেন সদর থানার ওসি

চুয়াডাঙ্গা সদর থানাধীন গাইঘাটা গ্রামের মাসুদ রানার ভাঙ্গা পরিবার জুড়া লাগিয়ে দিলেন ওসি আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান।

তাদের শিশু সন্তান তাসনিম (০৫) আর্তচিৎকার করে বলে আমি বাবা মা দু’জনকেই চাই”। বিগত সাত বছর আগে গাইঘাটা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মোঃ মাসুদ রানা(১৯) এবং একই এলাকার মিম আক্তার(১৮) এর বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের বছরে বর কনের বয়স ছিল ১২/১৩ বছর অর্থাৎ বাল্যবিবাহ। তখন এলাকার সচেতন কিছু ব্যক্তি তাদের এই বিয়ের বিষয়ে অভিভাবকদের নিষেধ করেছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। যাইহোক বিয়ে হয়েছে। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি কন্যা সন্তান তাসনিম(০৫) এর জন্ম হয়।

তাসনিমের চোখের সামনেই বাবা-মার ক্রমাগত ঝগড়াঝাঁটি মারামারি ঘটে চলেছে। এককথায় একটি অসুস্থ পরিবার যেমনটি হওয়ার কথা ঠিক তেমনটিই। এরপর এই দম্পতি সিদ্ধান্ত নেয় তারা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে অর্থাৎ তালাক নিয়ে নেবে।

পারিবারিক এ অস্থিরতা নিয়ে আমার নিকট অভিযোগ হলে, এসআই ভবতোষ এর মাধ্যমে এই পরিবারের সাথে জড়িত সকল অভিভাবককে থানায় ডেকে নিয়ে এসে পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান, এক পর্যায়ে ছোট্ট মেয়ে শিশু তাসনিম কে জিজ্ঞাসা করলে সে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জানায় সে বাবা-মা দু’জনকেই চাই অর্থাৎ সে চায় না কেউ কারো থেকে আলাদা থাক। আমাদের আলোচনা ও অবশেষে মেয়েটির আর্তনাদ এর কাছে বাবা-মার অভাব- অভিযোগ, মান -অভিমান ভেঙে যায়। তারা পুনরায় ঘর করবার সিদ্ধান্ত নেয়।

ওসি আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান উভয় পরিবারের অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন এবং তারা যাতে ভবিষ্যতে ভালোমতো বসবাস করতে পারে সে ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য বললেন। ওসি আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান তাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে দেন। তারা উভয়েই মেনে নেয় এবং ভবিষ্যতে আর কোনো ধরনের গন্ডগোল, মারামারি, ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে না মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়।

গল্পটা এজন্য বলা হলো যে, এটি আসলে বাল্যবিবাহের প্রতিফল হিসেবে একটি জীবন্ত দৃষ্টান্ত। এই দম্পতির বর্তমান যে বয়স এটিই আসলে তাদের বিয়ের বয়স যা আরও সাত বছর আগে সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে সমাজ থেকে, পরিবার থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাল্যবিবাহ কখনো সমাজে সুস্থ কোন পরিবার তৈরি করে না বা করতে পারে না।

বাল্যবিবাহ একজন শিশুর শারীরিক-মানসিক ও আর্থসামাজিক বিকাশ সাধনের অন্যতম অন্তরায়। তাসনিমের চেহারা দেখলে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, শিশুটি পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এটিও বাল্যবিবাহের সরাসরি কুফল। আসুন, সম্মানিত চুয়াডাঙ্গা বাসী, আমরা আমাদের সন্তানদের, আমাদের পরিবারের সদস্যদের, আমাদের এলাকার মানুষ কে বাল্যবিবাহের কুফল কতটা ভয়ানক হতে পারে সে বিষয়ে সচেতন করে তুলি।