চুয়াডাঙ্গায় সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি

চুয়াডাঙ্গার সারের ডিলাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সুযোগে বাড়তি দাম নেয়ারও অভিযোগ কৃষকদের। ডিলারদের এমন সিন্ডিকেটের কারণে এবার জেলার সবজি ও ভুট্টার আবাদে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন চাষীরা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য, সরকার নির্ধারিত দামে ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি সার বিক্রি করা হয়। প্রতিকেজি ইউরিয়া ১৬ টাকা, টিএসপি ২২ টাকা, এমওপি ১৫ টাকা এবং ডিএপি ১৬ টাকায় কৃষকদের কাছে বিক্রি করার কথা। তবে মাঠ পর্যায়ের তথ্য, এর চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করা হচ্ছে।

এবার চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় এ মৌসুমে ৩২ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করছেন কৃষকরা। আগাম সবজি চাষ হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। ভুট্টার আবাদ হচ্ছে ৪৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এ জেলাতেই দেশের সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ করা হয়। এছাড়া কৃষকরা ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, করোলা, লাউসহ আগাম বিভিন্ন সবজি আবাদ করছেন। সার সংকট বা সারের বাড়তি দামের কারণে এসব আবাদের ফলনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

যদিও চুয়াডাঙ্গার ডিলারদের কাছে ইউরিয়া সার মজুত রয়েছে ১ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ৪৫১ মেট্রিক টন, এমওপি ৪৮৮ মেট্রিক টন ও ডিএপি ৫৩৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আবার চলতি মাসে ডিলারদের জন্য ৩ হাজার ১০৩ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৫৮০ মেট্রিক টন টিএসপি, ৮৩৯ মেট্রিক টন এমওপি ও ১ হাজার ৩৭৪ মেট্রিক টন ডিএপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে ১০ সেপ্টে¤॥^র পর্যন্ত সার উত্তোলনে ডিলারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। ওই সময়ের মধ্যে শুধু ৮৩৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উত্তোলন করেছেন তারা। অন্য সার তারা উত্তোলন করেননি।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন অনুমোদিত ডিলার রয়েছেন ৫০ জন ও বিএডিসির ডিলার রয়েছেন ৫৯ জন। বিএডিসির ২ জন ডিলার লাইসেন্স নবায়ন না করায় তাদের বিক্রি কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে।

সারের সংকট ও বাড়িত দামের ব্যাপারে কথা বলা হয় সদর উপজেলা ও আলমডাঙ্গার কৃষক সোহেল, স্বপন, রবিউল, রতন, আজমত আলি, জমির শেখের সঙ্গে। তাদের দাবি, ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।

কৃষকদের বলা হচ্ছে, সার কম, তাই দাম বেশি। কারণ অন্য জায়গা থেকে সার এনে দিতে হবে। সার বিক্রির কোনো ভাউচারও কৃষকদের দেয়া হচ্ছে না।

কারণ দাম বেশি রাখা হচ্ছে। কৃষকদের কাছ থেকে দাম বেশি রাখলেও ডিলাররা নিজেদের খাতায় সরকার নির্ধারিত দামই লিখে রাখেন। সার সংকটে জিম্মি হয়ে পড়া কৃষকরা প্রতিবাদ করলেই তাদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে তারা আর সার পাবেন না। এমনকি হুমকি দেয়া হচ্ছে কোথা থেকে সার পান তাও দেখব। সব সারেই প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। অনৈতিক সুবিধা নেয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান তারা।

দামুড়হুদা উপজেলার পোতারপাড়া গ্রামের কৃষক উজ্জল হক জানান, তিনি ধান ও শিমের আবাদ করেছেন। সার কিনতে গেলে প্রতি কেজিতে ২ টাকা করে বেশি নেয়ার অভিযোগ তার। এ ব্যাপারে দেখার কেউ নেই বলেও অভিযোগ তার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলারের ম্যানেজার জানান, মালিক যেভাবে তাদের নির্দেশ দেন সেভাবেই তারা সার বিক্রি করেন। তাদের কিছুই করার নেই।

কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দাম রাখা হলেও খাতায় ঠিকই সরকার নির্ধারিত দাম লিখে রাখা হয়; এমন অভিযোগেরও সত্যতা স্বীকার করেন তিনি।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদহ বাজারের বিসিআইসি সার ডিলার আনছার আলী জানান, সারের কোনো সংকট নেই। এমনকি নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি করা হচ্ছে। সারের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি তার।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী বলেন, সারের সংকট নেই। এবার ভুট্টার আবাদ বেশি হবে বলে আমরা অতিরিক্ত সার বরাদ্দ চেয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কোনো ডিলার যদি সারের দাম বেশি নেয় বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলি হাসান জানান, তাদের কাছেও অভিযোগ এসেছে সারের দাম বেশি নেয়া রাখা হচ্ছে। মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কৃষকদের সার নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সরকারি নির্ধারিত মূল্যেই সার বিক্রি হবে। বেশি দাম রাখার সত্যতা পেলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, সরকার কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে। সারের কোন সংকট নেই। অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির অভিযোগ পেলে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।