জীবননগরে অর্ধ কোটি টাকার গাছ কেটে সাবাড়!

জীবননগর উপজেলার হাসাদহ-রায়পুর সড়ক প্রস্তুতকরণের অজুহাতে সড়কের দু’ধারে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির গাছ টেন্ডার ছাড়াই কাটার অভিযোগ উঠেছে।

ক্ষমতাসিন দলের একটি মহল ও উপজেলা বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সামাজিক বনায়ন সমিতির নেতাদের ম্যানেজ করে এ গাছগুলি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।

সামাজিক বনায়ন কর্তৃক সৃজন করা বাগানের বাইরেও সড়কের দু’ধারের বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাস্তার দু’ধারের গাছ কেটে সাবাড় করার ফলে এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। এ ভাবে গাছ কেটে সাবাড় করার কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিনে দেখা গেছে, জীবননগর উপজেলা হাসাদহ-রায়পুর সড়কের মাধবপুর সাগরঘাটা ব্রিজ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার দু’ধারে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

উপজেলা বন সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মচারি মাহবুুবুর রহমান কাটা গাছের কিছু দুরে অবস্থান করছে। গাছগুলো কাটার পর গাছের ডালপালা সাথে সাথেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে গাছের বড় বড় লগগুলো নেয়া হচ্ছে সামাজিক বনায়ন সমিতির সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবির বাড়ী সংলগ্ন স্থানে।

সামাজিক বনায়ন সমিতির সৃজন করা বাগানের বাইরে সরকারি রাস্তায় থাকায় বিগত ২৫-৩০ বছর আগে সৃজন করা কিংবা তার আগে বেড়ে ওঠা মূল্যবান গাছ কেটে নেয়া হচ্ছে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব গাছের মধ্যে কিছু গাছ চলে যাচ্ছে প্রভাবশালী মহলের বাড়ীর আসবাবপত্র তৈরীর জন্য নির্দিষ্ট স্থানে।

এলাকার একাধিক ব্যাক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসাদহ-রায়পুর সড়কে কয়েক যুগ ধরে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মাঝে সামাজিক বনায়নের বাগান সৃজন করা হয়।

সামাজিক বনায়ন কর্তৃক সৃজন করা বাগান সঠিক ভাবে রক্ষনাবেক্ষণ না হওয়ায় অধিকাংশ গাছ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এখন সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার নামে রাস্তার সমস্ত গাছপালা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। রাস্তা প্রস্তুকরনের অজুহাতে রাস্তার দু”ধারের গাছপালা কেটে এলাকাকে মরুভ’মি বানানো হচ্ছে।

এতে করে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা থাকলেও লাভবান হচ্ছে কতিপয় প্রভাবশালী নেতা। সেই সাথে লাভবান হচ্ছেন সংশি¬ষ্ট সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

সামাজিক বনায়নের সৃজন করা গাছের পাশাপাশি বড় বড় মেহগুনি, চটকা, শিষু, নিম ইত্যাদি মূল্যবান গাছ কেটে নেয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর ধারণা হাসাদহ বাজার থেকে মাধবপুর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দু”ধারে যে গাছ আছে তা প্রায় অর্ধ কোটি দাম হবে।

হাসাদহ-রায়পুর সড়কে সামাজিক বনায়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবি বলেন, রাস্তা প্রস্তত্বকরণের কারণে ঠিকাদার ভেক্যু মেশিন দিয়ে প্রথমে কয়েকটি গাছ তুলে ফেলে দেয়। গাছ কাটার ব্যাপারে কোন টেন্ডার হয়নি। বনবিভাগ রেঞ্জার সব ক্ষমতার মালিক। ইউএনও স্যারের সাথে বনবিভাগের মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে আমাদেরকে ডাকা হয়নি।

তবে মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গাছ কাটা হচ্ছে এবং কাটা শেষ হলে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করা হবে। দু’একটি ছাড়া কোন গাছ মরা নয়। গাছের গুড়িগুলো আমার বাড়ীর কাছে রাখা হচ্ছে আর ডালপালা বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি মাধবপুর ব্রিজ সংলগ্ন স্থান থেকে গাছ কেটে নেয়ার সময় জনতার বাঁধার মুখে পড়া শহিদুল ইসলাম উপস্থিত সবার সামনে বলেন, শুধু আমিই কি একা গাছ কাটছি, এর আগে হাসাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাই গাছ কেটে নিয়ে গেল তাকে তো কেউ কিছু বলল না। এ ভাবেই রাস্তার গাছের একটি অংশ প্রভাবশালী মহলের বাড়ী চলে যাচ্ছে।

উপজেলা বন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম কাজল বলেন, সামাজিক বনায়নের গাছগুলো বাধ্য হয়ে কাটা হচ্ছে। রাস্তা প্রস্তুত্বকরনে ঠিকাদার গাছগুলো ভেক্যু মেশিন দিয়ে উপড়ে ফেলছিল। তা ছাড়া যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে তা অধিকাংশ মরা গাছ। সমিতির লোকজন গাছ কাটছে আর আমাদের লোকজন সেগুলো দেখভাল করছেন। সমিতির লাগানো গাছই কাটা হচ্ছে। টেন্ডার হয়নি ঠিক, তবে বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানানো হয়েছে। কাটা গাছগুলো সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হবির বাড়ীতে রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে টেন্ডার দেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাসাদহ-রাফপুর সড়কে গাছ কাটার বিষয়টি আমার এই মুহুর্তে আমার কিছু জানা নেই। তবে আগে কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা আমার মনে পড়ছে না। কারণ সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার জন্য চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছাতে অনেক সময় লাগে এবং তারপর তা কাটার সিদ্ধান্ত হয়।

মেপ্র/আরপি