জুনের আগে যাবে না করোনা

বিশ্বজুড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ভয়াবহ এ পরিস্থিতির মধ্যে ভাইরাসের প্রকোপ জুন মাসের আগে কমবে না বলে এক পূর্বাভাসে দাবি করেছেন চীনা এক চিকিৎসক।

শিগগিরই করোনার প্রকোপ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন চীনের অন্যতম রোগ বিশেষজ্ঞ ঝং নানশান। অর্থাৎ আরও তিন মাস বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাবে করোনাভাইরাস।

২০০২-২০০৩ সালের সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) ভাইরাসের আবিষ্কারক তিনি। রোববার চীনা গণমাধ্যম গুয়াংডং টেলিভশনকে এ বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, অন্তত আগামী জুন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলবে। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের।

ঝং নানশানের মতে, চীনের এখন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের চেয়ে বিদেশ থেকে ভাইরাস আক্রান্তদের প্রবেশ বন্ধ করায় বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিশেষ করে দেশটির অন্যতম প্রধান ভ্রমণকেন্দ্র গুয়াংডং প্রদেশে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা দরকার।

তিনি আরও বলেন, সীমান্তে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার এবং বিদেশের ভাইরাস সংক্রমিত অঞ্চল ভ্রমণকারীদের জন্য কোয়ারেন্টিন নীতিনির্ধারণ করা উচিত।

এছাড়া গুয়াংডংয়ের মতো বেশি সংক্রমিত অঞ্চলগুলোতে ভাইরাস প্রতিরোধের সরঞ্জাম, পরীক্ষার উপকরণ, চিকিৎসা সহায়তা পাঠানো যেতে পারে।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর দ্রুতই তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত ১০৯ দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে।

ভাইরাসটির উৎস চীনে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৮১ হাজার। এছাড়া দেশটিতে ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৫৮ হাজার ৬৭৭ জন।

এদিকে, উত্তর কোরিয়া ছেড়েছেন কোয়ারেন্টিনে থাকা ৮০ বিদেশি নাগরিক। তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। অবশেষে দীর্ঘদিন ধরে এ বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে যাচ্ছেন তারা।

এনকে নিউজ জানায়, সোমবার সকালে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় একটি শহরে ফ্লাইট কেওআর-২৭১ বিমানটি অবতরণ করেছে। উত্তর কোরিয়া ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি দেয়া এটাই প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট।

এর মধ্যে দূতাবাসের বেশ কয়েকজন কর্মীও রয়েছেন। উত্তর কোরিয়ায় রাশিয়ার দূতাবাস ফেসবুক পোস্টে জানায়, দেশের পথে পাড়ি জমানোদের মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, মঙ্গোলিয়া ও মিসরের কূটনীতিকরাও রয়েছেন।

করোনার ভয় এখন ভারতেও। মুখে যতই স্বস্তির বার্তা দিক দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আতঙ্কের রেশ কাটছে না কিছুতেই। সরকারি সূত্র বলছে, ভারতে ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩।

রোগীদের চিকিৎসায় যেন গাফিলতি না হয় সেজন্য ভারতের ৩৭টি জায়গায় ৫,৪৪০ বেডের কোয়ারেন্টিন সেন্টার বানানোর জন্য সিএপিএফকে (সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স) নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি।

হরিয়ানায় চারশ’ বেডের কোয়ারেন্টিন সেন্টার আগেই খোলা হয়েছিল। উহান ও মালদ্বীপ থেকে ফিরিয়ে আনা ছয়শ’রও বেশি ভারতীয়কে সেখানেই কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়।

গত সপ্তাহে তাদের মধ্যে আড়াইশ’ জনকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আইটিবিপির সেনা ক্যাম্পেও তৈরি হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। চীন, নেপাল, সৌদি আরব, ইতালি ফেরত অনেক পর্যটককেই রাখা হয়েছে সেখানে।

সোমবার দিল্লি, কেরালা, উত্তরপ্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরেও নতুন সংক্রমিতের খোঁজ মিলেছে। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি তিন বছরের শিশুও। সংক্রমণ সন্দেহে ভারতজুড়েই হাসপাতাল-নার্সিং হোমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর হিড়িক পড়ে গেছে।

সরকারি সূত্রে খবর, হাসপাতালগুলোর উপর থেকে চাপ কমাতেই দেশের নানা জায়গায় এই বিশাল কোয়ারেন্টিন সেন্টার তৈরি করা হবে।

তাছাড়াও সেন্টার রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স, সিআইএসএফ (সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স), ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ, সশস্ত্র সীমা বল ও এনএসজিকে (ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড) দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ৭৫টি আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সুত্র-যুগান্তর