জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব সবখানে

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যর সাথে সমন্বয় করার নামে দেশেও তেলের দাম বাড়ানো হলো। বিপিসির এই হঠকারি সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েতে শুরু করেছে সবখানে। অন্তত তিন মাস পর্যবেক্ষণ করার পর দাম বাড়াতে পারতো বিপিসি এমনটি বলছেন বিশ্লেষকরা।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টার পর ডিজেল ও কেরোসিন লিটার প্রতি ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮০ টাকা। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করায় সারাদেশে পরিবহন লঞ্চ মালিকরা ধর্মঘট পালন করেছেন। এ ধর্মঘট তেলের দাম কমানো, নাকি পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো তানিয়ে কোন দাবি তোলা হয়নি। তারা বলছে দাম কমিয়ে ভাড়া সমন্বয় করার কথা। অথচ ধর্মঘট চলছে, জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েই চলছে। গত সাতবছর তেলের দাম বিশ্ববাজারে কম থাকায় সরকার ৪০ হাজার কোটি লাভ করেছে। অথচ গেল পাচ মাসে তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় সরকার একলাফে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে প্রতিটি ক্ষেত্রে।
ইতোমধ্যে পণ্যবাহী পরিবহনগুলো ১০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল মেহেরপুর থেকে সিলেটের ভাড়া ছিলো ৩০ হাজার টাকা , এখন ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। আসন্ন বোরো মৌসুমে ধানের আবাদে প্রচুর সেচ লাগে সেখানেও মাত্রাতিরিক্ত হারে খরচ বেড়ে যাবে। তবে অকটেনের দাম ৮৯ টাকা ও পেট্রলের দাম আগের মতোই প্রতি লিটার ৮৬ টাকা থাকছে।
দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পাশের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজারমূল্য প্রতি লিটার ১০১.৫৬ রুপি বা ১২৪ টাকা ৪১ পয়সা ছিল, অথচ বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য গতকাল পর্যন্ত প্রতি লিটার ৬৫ টাকা ছিল, অর্থাৎ ভারতের তুলনায় লিটারপ্রতি ৫৯ টাকা ৪১ পয়সা কমে বিক্রি হচ্ছিল।

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ডিজেল লিটারপ্রতি ১৩.০১ এবং ফার্নেস অয়েল লিটারপ্রতি ৬.২১ টাকা কমে বিক্রি করায় প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় সংস্থার মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। সেই সময় ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা, কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা, অকটেনের দাম ৮৯ টাকা ও পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের সময় বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তখন প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা এবং পেট্রল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সাথে সাথেই দেশে দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। অন্তত তিন মাস সময় সেই দাওম প্রভাব দেশে আসতে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন কমবে তখন সাথে সাথেই দাম কমানো উচিৎ হবে। কিন্তু আমাদের কখনোই দাম কমানো হয়না। ফলে জনগণের বড় একটি অংশ এ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকেন। সরকারের উচিত হবে আন্তর্জাতিক বাজার মনিটরিং করা এবং একই সঙ্গে দেশের তেলের দাম যেটা ছিল তা অপরিবর্তিত রাখা।