
ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় টিটু মালিথা নামে এক ভন্ড কবিরাজের উত্থান হয়েছে। সদর উপজেলার করাতিপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি কবিরাজি চেম্বার খুলে নিয়মিত অ্যালুপ্যাথিক ওষুধ লিখে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। বাত-ব্যথা থেকে শুরু করে এমন কোন রোগ নেই যার চিকিৎসা তিনি করেন না। অথচ তার নেই কোন একাডেমিক শিক্ষা।
জানাগেছে, কয়েক বছর আগেও নুন আনতে পান্তা ফুরাতো ভন্ড কবিরাজ কাম ডাক্তার টিটু মালিথার। কবিরাজি শুরু করে তিনি এবছর বাড়িতে করেছেন দুই তলা বিল্ডিং। গোয়ালে এক পাল গরু, মাঠে গড়েছেন সম্পত্তি। বাড়িতে রেখেছেন কাজের মহিলা। তার হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া নিয়ে গ্রামের বাসিন্দারও বিষ্মিত।
টিটু মালিথা এই করাতিপাড়া গ্রামের মৃত কটা মালিথার ছেলে। প্রতি সপ্তাহের শনিবার, মঙ্গলবার ও বৃহষ্পতিবার তিনি সিরিয়ালে রোগীদের তদবির দেন। জ্বিন তাড়াতে ৩ হাজার, জ্বিন বোতলে ভরতে ৫হাজার টাকা হাদিয়া নেন। তবে রোগী গেলেই প্রথম আসনে তাকে ৩৫০ টাকা হাদিয়া দিতে হয়। এরপর রোগের অবস্থা বুঝে ফিস নির্ধারণ করেন। প্রতিদিন তিনি ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী দেখেন। তিনি কবিরাজ হলেও রোগীদের ওষুধ দেন অ্যালুপ্যাথিক। তার বাড়িতে অবস্থিত বেনামী ফার্মেসি থেকেই রোগীদের ওষুধ নিতে হয়। ফার্মেসি পরিচালনা করেন তার স্ত্রী। তার কবিরাজি তদবির ও ঝাড়ফুকের জন্য রেখেছেন এসিসস্ট্যান্ট। তবে তাদের দাবি তাদের ড্রাগ লাইসেন্স রয়েছে। তার রয়েছে কবিরাজি সনদ।
কবিরাজি সনদে আপনি কিভাবে অ্যালুপ্যাথিক ওষুধ লিখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি ক্ষেপে যান। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, পার্শ্ববর্তী বিষয়খালী বাজারে তার ছেলের একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। সেই দোকানের ড্রাগ লাইসেন্স দিয়েই তিনি বাড়িতে এই ওষুধের দোকন চালাচ্ছেন।
সরজমিনে দেখা যায় তার ফার্মেসিতে ওষুধ দিতে গেছেন ইবনে সীনা কোম্পানির মেডিকেল প্রোমোটার রাশেদ হোসেন। বেনামী ফার্মেসিতে কিভাবে ওষুধ দিচ্ছেন জানতে চাইলে রাশেদ হোসেনও কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক ভুক্তভোগী রোগী বলেন, আমার ভাগ্নেকে নিয়ে গেছিলাম একটা তাবিজ করতে। তার সহকারী বলে তদবির নিতে ৫০০ টাকা লাগবে। এই লোক একটা ভন্ড। কোন কাজ নেই তার তদবিরে।
আসাদুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি বলেন, চিকিৎসকরা নিয়ে বছরের পর পর বছর মেডিকেল সাইন্স নিয়ে লেখাপড়া করে একটা রোগের চিকিৎসা দেয়। আর এই লোক জ্বিন তাড়ানো থেকে শুরু করে ক্যান্সার, স্ট্রোক সকল রোগের চিকিৎসা করছে। এটা ভন্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। স্বাস্থ্য বিভাগের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।
ঝিনাইদহ ড্রাগ এন্ড কেমিস্ট সমিতির সভাপতি আক্তারুজ্জামান বলেন, শহর বাজারে ওষুধের দোকান করে সকল নিময় মেনে অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট রেখেও ড্রাগ লাইসেন্স পেতে অনেক কষ্ট হয়। এই লোক ড্রাগ লাইসেন্স পেল কিভাবে?
ঝিনাইদহ জেলা ওষুধ তত্ত্ববধায়ক সিরাজুম মুনিরা বলেন, এই কবিরাজের বিষয়ে আমার জানা নেই। তার লাইসেন্সের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমকর্তা ডাঃ মিথিলা ইসলাম বলেন, মানুষ এদের কাছে কেন যায় বুঝিনা। সে একজন কবিরাজ হয়ে অ্যালুপ্যাথিক ওষুধের ব্যবস্থাপত্র লিখতে পারেনা। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।