ঝিনাইদহে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৫নং কালিচরণপুর ইউনিয়নের উত্তর কাষ্টসাগরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইদ্রীস আলীর পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, মিথ্যা মানববন্ধন করে অপপ্রচার, হয়রানী ও দায়েরকৃত মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি প্রদানের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী মুক্তযোদ্ধা পরিবার।

মঙ্গলবার (১৬আগস্ট) দুপুর ১২টায় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রীস আলী ও মেয়ে ইডেন কলেজের ছাত্রী রঞ্জনা খাতুন জানান, মোঃ ইদ্রিস আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালে ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর মনজুর রহমান এর নেতৃত্বে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। জেলার অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধারা তাকে চেনেন ও জানেন। মুল বাড়ী হরিণাকুন্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে হলেও তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৫ নং কালিচরণপুর ইউনিয়নে উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামে বসবাস করেন।

গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সমর্থন করায় বর্তমান স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ও ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বর মিজানুর রহমান মিজু’র ইন্ধোনে সম্পতি ও জায়গা জমি নিয়ে একই গ্রামের পাঞ্জু শাহ, ইউনুস ও সুরত আলীর সাথে পুরাতন বিরোধ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। জমিজমা সংক্রান্তে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। যার মামলা নং- অতিরিক্ত জেলা জজ (২) দেওয়ানী আপিল-৮৪/২০। এরই জের ধরে তাদের প্রতিপক্ষ তোয়াজ উদ্দিন এর পুত্র মনিরুল প্রায়ই ইদ্রীস আলী বড় কন্যা (ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজের মাষ্টার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী) রঞ্জনাকে উত্ত্যক্ত ও আপত্তিজনক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল।

জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় আদালতে বিচারাধীন থাকাবস্থায় গত ২২ জুলাই রাত ৮ টার সময় তুহিন ও মনিরুলের হুকুমে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে তার পরিবারের উপর অতর্কিত হামলা করে।

এতে শালিকা শিখা খাতুন ও তার পুত্র মোঃ নয়ন কে জখম করে। এ সময় তার কন্যা (রঞ্জনা খাতুন) প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে গেলে মনিরুল, রানা রঞ্জনার জামা কাপড় ছিড়ে শ্লীলতাহানি ঘটায় ও এলোপাতাড়ী মারপিট করে এমনকি প্রতিবন্ধী স্ত্রী রাশিদা খাতুনকে মারপিট করে, শ্যালকের ৫ মাসের অন্তসত্তা স্ত্রীর তলপেটে লাথি ও ঘুষি মারে মনিরুল, ওবায়দুল ও আসাদ।

তিনি গত ২৩ জুলাই হতে ৩০জুলাই পর্যন্ত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি এখনো শংকা মুক্ত নন।

বিষয়টি নিয়ে তার শালিকা ও তার পুত্র মোঃ নয়ন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ২৫জুলাই ঝিনাইদহ কোর্টে মামলা দায়ের করে তার শ্যালক মোঃ সাবান শাহ। মামলা নং- ২২৫/২২ এবং কন্যা রঞ্জনা খাতুন গত ২৯জুলাই তারিখে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। যার নং- ৫৮/৩২৫।

তিনি লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন এ ঘটনার পর থেকে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে খুনের হুমকি ধামকি দেয়। গত ১ আগস্ট আসামীদের জামিনের পরপরই আমার কন্যা রঞ্জনা খাতুন ও শ্যালক সাবান শাহ কে হত্যার হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করিতে থাকে। এ অবস্থায় রঞ্জনা খাতুন ২ আগস্ট ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে। ডায়েরী নং- ১১৯ এবং সাবান শাহ বাদী হয়ে গত ১আগস্ট ঝিনাইদহ কোর্টে একটি ৭ ধারা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং- ৪৩৪/২২।

উক্ত ঘঁটনা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে থানা প্রশাসন এবং পিবিআই দফায় দফায় তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এর পরেও তারা ক্ষ্যান্ত হয় নি। উক্ত বিষয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হবার পর থেকে গত ১২ আগস্ট সকালে সদর উপজেলার উত্তর কাষ্টসাগরা বাজারে একটি কথিত মানব বন্ধনের নামে আদিবাসীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন অশ্লীল ও আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করে ব্যানার, প্লেকার্ড, ফেস্টুন প্রদর্শন করে। আদৌও তারা কোন আদিবাসী নয়।

এ বিষয়ে তিনি ১৩ আগস্ট ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন যার নং- ৮৭৪। তাছাড়া দুই কন্যা ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজ ও সরকারি কে.সি. কলেজে পড়ুয়া মেয়ের বিরুদ্ধে অত্যন্ত আপত্তিকর পতিতা বিত্তি পেশার সাথে তুলনা করে। তাদের কুরুচি পূর্ণ বক্তব্য ও প্লেকার্ড প্রদর্শন করেছে। যা আমার পরিবার ও সন্তানদের জন্য লজ্জাজনক ও মানহানিকর। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি আবাসন প্রকল্পে দুই দফা ঋণ উত্তোলন করে উক্ত স্থানে স্থানীয় আনারুল ইসলাম তুফান মালিতার নিকট হইতে ৩ শতাংশ জমি নিয়ে একতালা বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করি। উক্ত ৩ শতাংশ জমি ব্যতিত আমার কোন সম্পত্তি নেই। আমি কখনোও আদিবাসি নামধারী কাহারও নিকট হইতে জমি ক্রয় বা ভোগদখল করি নাই। তথাপিও আমার ঋণের টাকায় নির্মানাধীন বাড়ি নিয়ে নানারকম কুরুচি পূর্ন বক্তব্য প্রদর্শন করে।

পরিবারটি এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রকৃত সত্য ঘটনা প্রকাশ করে প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষিদের শাস্তির দাবী জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা (সাবেক কমান্ডার) রেজাউল ইসলাম,বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দীন, শ্যালিকা শিখা খাতুন প্রমূখ।