ঠিকাদারি ব্যবসা ছেড়ে মাছ আর ফলবাগানে বাজিমাৎ হযরত আলীর

ষাটোর্ধ হযরত আলী। ছিলেন ঠিকাদার। বয়স বাড়ায় ছাড়তে হয়েছে ঠিকাদারি ব্যবসা। তবে নিজেকে আবার বেকার মনে হচ্ছিল তাই দুই ছেলের অনুপ্রেরণায় বাড়ীর পাশে নিজের কিছু জমি ও কিছু জমি লিজ নিয়ে গড়ে তুলেছেন পুকুর, গরুর খামার আর মিশ্র ফলবাগান। এতে করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে তিনি।

বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের আহম্মেদপুর এলাকার হযরত আলীর কথা।

হযরত আলী প্রায় তিন একর জমিতে খণ্ড খণ্ড করে পুকুর, গবাদীপশুর খামার এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফলের বাগান করে সারা জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, খণ্ড খণ্ড করে ২৪ টি পুকুরে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষের ব্যবস্থা, কাটিমন আম, পেয়ারা, লেবু, কমলা, মাল্টা, পেঁপেসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমন্বয়ে ফলবাগান। পাশেই আরেকটি শেডে ৬ টি দুগ্ধবতী গাভীর দেখা মিললো।

এই মিশ্র ফল বাগান ও খামার থেকে তিনি বছরে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় করছেন।

তার এই মাছচাষ ও ফলবাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওই গ্রামসহ আশপাশের আনেক গ্রামে বেকার তরুণরা মাছচাষ বা বাগান তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তার বাগান দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন বহু মানুষ।

হযরত আলী জানান, কুষ্টিয়ায় তার বাড়ী হলেও সাতক্ষীরায় ব্যবসা ছিলো তার। পেপার্স প্রিন্টিং প্রেস ও ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন সেখানে। কিন্তু এখন বয়স হওয়ায় সেখান থেকে আবার নিজ গ্রাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের আহম্মদপুর এলাকায় ফিরে আসেন তিনি।

তবে কোন কিছু করতে না পেরে নিজেকে বেকারত্ব মনে হচ্ছিল। এসময় দুই ছেলের পরামর্শে কিছু একটা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। ইউটিউব চ্যানেল আর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে দুই ছেলে তাকে একটি বাগান ও পুকুরে মাছ চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। নিজের দুইবিঘা জমির পাশে অন্যের ৬ বিঘা জমি বাৎসরিক ১০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন। আর পুকুর পাড়ে, কলা, পেঁপে, বেগুন, লাউ,শিম, লেবুর আবাদ করেও বাড়তি আয় করেন।

পাশের তিন বিঘা জমিতে থাই জাতের পেয়ারা, কমলা, চায়না লেবু ও কাশ্মীরি কুল চাষ করেছেন।

তার খামার থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০ কেজি করে দুধ সংগ্রহ করা হয়। সেটি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে শহরের বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। গেল দুই বছরের মধ্যেই অনেক সাফল্য এসেছে তার তিনি এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ পুকুরপাড় ও এর পুরো বাগানটি দেখাশোনা করেন।

তার বাগানে দেখাশোনার জন্য মাসিক বেতনে ২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সার্বক্ষণিক কাজ করে এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শ্রমিক প্রয়োজন হয় তার এই খামারে।
এই খামার করে ইতোমধ্যে তিনি বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন।

তিনি এই এলাকার কৃষিতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ফল চাষে এবং ফল বাগানে উদ্বুদ্ধ করে স্বাবলম্বী করে তুলতে চান। তাই যুবকদের এই কৃষি ক্ষেত্রে এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বেকার হয়ে বসে না থেকে কৃষিখাতকে গুরুত্ব দিয়ে এভাবে পুকুরে পুকুরে মাছ চাষ গবাদিপশু পালন এমনকি বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান গড়ে তুলে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার তাগিদ দেন তিনি।

সেখানকার শ্রমিক মওলা বক্স জানান, এই খামার দেখাশোনা করতে মাসিক ১০ হাজার টাকায় কাজ করি। এতে করে আমার পরিবার বেশ ভালোভাবে চলছে। ছেলে মেয়েকে পড়ালেখা করানোসহ বেশ সুখেই আছি আমি।

উপজেলা কৃষি অফিসার রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, বৃদ্ধ বয়সেও যে কিছু করতে পারেন তার দৃষ্টান্ত উদাহরণ হযরত আলী। এই বয়সেও বেকার না থেকে কিছু একটা করবেন এই লক্ষ্যে তিনি এই মিশ্র ফলের বাগান, গরুর খামার এবং মাছের চাষ শুরু করেছেন তা সত্যি অসাধারণ।

আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে বাগানের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। তার দেখাদেখি যদি আরো অনেক বেকার তরুণ কিংবা বেকার জনগোষ্ঠী এগিয়ে আসে তবেই আমাদের মঙ্গল।