
মেহেরপুর, বাংলাদেশের এক প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ, যার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস ও সংস্কৃতি। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই অঞ্চলের সংবাদচর্চার ঐতিহ্য বিদ্যমান।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের সম্পাদনায় ১৯৪৮ বঙ্গাব্দে ‘ইসলাম প্রচারক’ এবং ১৯১২ বঙ্গাব্দে ‘সুলতান’ নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার তথ্য এর ঐতিহাসিক গুরুত্বকেই তুলে ধরে। অথচ, বর্তমানে জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “মেহেরপুর একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এলাকা হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে এখানে কোন দৈনিক বা পাক্ষিক পত্রিকা চালু নেই।”
এই বাক্যটির ঠিক নিচেই আবার ‘দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিন’ এবং ‘দৈনিক আমাদের সূর্যোদয়’ নামের দুটি পত্রিকার তালিকা, তাদের সম্পাদক, ঠিকানা এবং যোগাযোগ নম্বরসহ দেওয়া আছে, যা বর্তমানে সক্রিয় হিসেবে প্রতীয়মান। এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য কেবল বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করে না, বরং স্থানীয় সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের গুরুত্বকে খাটো করে।
জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট, সরকারি তথ্যের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত। এমন একটি স্থানে পরস্পরবিরোধী তথ্য থাকা পেশাদারিত্বের অভাব এবং তথ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে নির্দেশ করে। একদিকে বলা হচ্ছে, কোনো দৈনিক বা পাক্ষিক পত্রিকা চালু নেই, অন্যদিকে দুটি সক্রিয় দৈনিকের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দেওয়া হচ্ছে। এই অসঙ্গতি থেকে দুটি প্রশ্ন উঠে আসে: প্রথমত, উল্লেখিত পত্রিকা দুটি কি সত্যিই চালু আছে নাকি নেই? দ্বিতীয়ত, যদি চালু থাকে, তবে কেন ওয়েবসাইটে এমন ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে?
সংবাদপত্র একটি সমাজের দর্পণ। এটি স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং জনজীবনের প্রতিচ্ছবি বহন করে। মেহেরপুর জেলায় বর্তমানে দুটি দৈনিক পত্রিকা চালু আছে, যা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এর একটি ‘দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিন’ এবং অপরটি ‘দৈনিক আমাদের সূর্য়োদয়’। পত্রিকা দুটি নিয়মিত প্রকাশিত হয় এবং মানুষের তথ্য চাহিদা পূরণ করে চলেছে, অথচ তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা বা ভুলভাবে উপস্থাপন করা গুরুতর ত্রুটি।
এই ধরনের তথ্যের অসামঞ্জস্যতা কেবলমাত্র স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের হতাশ করে না, বরং সাধারণ মানুষ, গবেষক এবং জেলার বাইরে যারা মেহেরপুর সম্পর্কে জানতে চান, তাদের মধ্যেও ভুল ধারণা তৈরি করে। এটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গুরুত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। একটি জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব হলো তার আওতাধীন সকল তথ্য নির্ভুল ও হালনাগাদ রাখা, বিশেষ করে যখন তা জনগুরুত্বপূর্ণ হয়।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই অসামঞ্জস্যতা দূর করা। ওয়েবপেজের প্রথম বাক্যটি সংশোধন করে সত্য তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। এর ফলে তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং সরকারি ওয়েবসাইটের প্রতি জন আস্থা বাড়বে।
প্রশাসনিক দুর্বলতা, তথ্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটি অথবা অসাবধানতা – যে কারণেই এই অসামঞ্জস্যতা থাকুক না কেন, এটি দ্রুত নিরসন হওয়া জরুরি। মেহেরপুরের গণমাধ্যম ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতে এবং বর্তমানের সংবাদমাধ্যমগুলোকে সঠিক মূল্যায়ন করতে নির্ভুল তথ্যের কোনো বিকল্প নেই।
এই ছোট অসঙ্গতি হয়তো অনেকের চোখে নাও পড়তে পারে, কিন্তু এটি একটি বৃহত্তর চিত্রের অংশ যা তথ্যের সঠিকতা ও স্বচ্ছতার গুরুত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই বিষয়ে নজর দেবেন এবং মেহেরপুরের সংবাদপত্রের সঠিক চিত্র জনসম্মুখে তুলে ধরবেন।


