তেলের পর অসাধুদের নজর চিনিতে

মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৩.৭৭ শতাংশ *

বেসরকারি পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে -বিএইচএফআইসি

 

ভোজ্যতেলের পর ভোক্তার অতি প্রয়োজনীয় পণ্য চিনির ওপর অসাধু ব্যবসায়ীদের নজর পড়েছে। কারসাজি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম।সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা চিনিতে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া বাজারে নতুন করে সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজ-মরিচ, আদা, ব্রয়লার মুরগিসহ ১১ পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দ্রব্যমূল্যে নিয়ে বৃহস্পতিবারের পর্যালোচনা বলছে, সাত দিনে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

এছাড়া গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রতিকেজি চিনির দাম বেড়েছে ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। রাজধানীর খুচরাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও সর্বনিম্ন ৭২ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতিকেজি প্যাকেটজাত চিনি ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা সাত দিন আগে ছিল ৭৮ টাকা। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন-বিএইচএফআইসি সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীরা বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেখাচ্ছে। বিশ্ববাজারে কিছুটা দাম বেড়েছে। এর প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে সময় লাগবে। বেসরকারি পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। এই সিন্ডিকেটই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে।

পাইকারি পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য বিক্রেতাদের সংগঠন মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা যুগান্তরকে বলেন, দেশে এখন চিনির কোনো ঘাটতি নেই। তবুও বাড়তি উৎপাদন খরচ ও বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে হঠাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমণ চিনি ১৭০-১৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে মিলগুলো। এক সপ্তাহ আগে যে চিনি প্রতিমণ বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৫৪০ টাকা, তা দুই হাজার ৭২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা স্পষ্ট, মিল মালিকদের কারসাজিতে এমন হয়েছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এতে সব শ্রেণির ক্রেতা বিপাকে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তিনি জানান, করোনাকালে আমরা যারা ভোক্তা, তাদের আয় কমেছে ব্যয় বাড়ছে। এতে সঞ্চয় যা ছিল তাও শেষের পথে। অনেকেই ধারদেনা করে চলছেন। এতে সব মিলে নাভিশ্বাস উঠছে। তাই নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি যে সব পণ্য আমদানি করে সরবরাহ ঠিক রাখতে হয়, সেগুলো আগে আমদানি করে দাম সমন্বয় করতে হবে। এছাড়া কেউ যদি দাম নিয়ে কারসাজি করে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, অনেক পণ্য আমদানিনির্ভর, তাই আমদানি মূল্যবৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যাতে স্থানীয়ভাবে মূল্যবৃদ্ধি ও মজুত করা না হয় সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে আমরা টিসিবির অপারেশন গত বছরের তুলনায় আড়াইগুণ বাড়িয়েছি। টিসিবি আরও কয়েকটি পণ্য বিক্রি করছে।

আগামী মাস থেকে পেঁয়াজসহ আরও পণ্য বিক্রি শুরু হবে। আমরা সেখানেও আমদানি করছি। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাতে দেশের বাজারে আমদানি পণ্য বেচাকেনা হয়, সেজন্য মনিটরিং জোরদার করা হবে।

কেউ অন্যায়ভাবে বেশি দাম নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিনির দামের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে চিনির খুচরা মূল্য ৮০ টাকা। সরকার ৭৫-৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। টিসিবিতে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

 

সূত্র-যুগান্তর