
জমির খাজনা ও নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা নিতে আসা ভূমি মালিকদের দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে। কাজ করে নিতে হাতে পায়ে ধরতে হচ্ছে তহশিলদারের। অনিয়মিত অফিসে আসা-যাওয়া ও সরকারের নির্ধারিত সময়ে অফিস না করা তহশিলদারের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগ নিত্যদিনের। স্থানীয় এসিল্যান্ড ও ইউএনওকে বলেও কোন সুরাহা না পাওয়া ভুক্তভোগীরা ফুঁসে উঠলে অফিস ছেড়ে পালালেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা তহশিলদার। গোপনে মাইক্রোবাস ডেকে লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় এলাকায় চরম চাঞ্চল্য ও হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ঘটনার পর থেকে অফিস করছেন না এই কর্মকর্তা।
আতিকুরকে সরিয়ে দক্ষ একজন তহশিলদারকে এ অফিসে যোগদান করানোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার জাকির হোসেনের মৃত্যুর পর অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। ১৫ দিন পরে চুয়াডাঙ্গার আতিকুর রহমান নামের একজন যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় ভূমি মালিকদের হয়রানি ও দুর্ভোগ। জেলার সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন খ্যাত সাহারবাটীতে এসে ভূমি সেবা দিতে হিমশিম খেয়ে ওঠেন আতিকুর রহমান।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষকে ভূমি সংক্রান্ত কাজে নানা অজুহাতে হয়রানি করে আসছিলেন। ভূমি উন্নয়ন করের অনুমোদন কিংবা নামজারি কেসের রিপোর্ট দিতে গড়িমসি করতেন তিনি।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর একাধিক ভূমি মালিক জমি-জমা সংক্রান্ত কাজে অফিসে গেলে তিনি নামজারি কেসের রিপোর্টসহ অন্যান্য সেবা দিতে ব্যর্থ হন। এ সময় সাধারণ মানুষ তার কাছে কাজ সম্পন্ন না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
এ সময় উপস্থিতরা তাকে প্রশ্ন করেন এটা সরকারি অফিস, আমরা যদি না আসি তাহলে আপনারা অফিস খুলে বসে আছেন কেন? আপনারা তো আছেন জনগণের সেবার জন্য। জবাবে আতিকুর রহমান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, না, আমি জনগণের সেবার জন্য নই, আমি আছি সরকারি অফিস রক্ষা করার জন্য।
এমন পরিস্থিতির পর কাজের চাপে ও জনগণের তোপের মুখে তিনি হঠাৎ অফিস ছেড়ে পালিয়ে যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এখনো অফিসে আসেননি।
ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন, ইয়ারুল ইসলাম, আলী হোসেন, লিয়াকত, আব্দুল হামিদ, আনিসুর রহমান, শহিদুল, মুকুল মহরী, নজরুল মাস্টার, আনিস মাস্টার, তোফাজ্জেল, সাইফুল ইসলাম, শামসুল ইসলাম ও এনায়েত আলীসহ অসংখ্য সেবাপ্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান যোগদানের পর থেকেই ভূমি মালিকরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জমির হোল্ডিং খোলা, নামজারি কেসের রিপোর্ট প্রদান, খাজনা পরিশোধসহ প্রতিটি কাজে ইউনিয়নবাসীকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে দক্ষ একজন তহশিলদারকে এ অফিসে যোগদান করানোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাবিদ হোসেন বলেন, অফিসে একটু ঝামেলা হয়েছিল এমন কথা শুনেছি। তিনি মৌখিকভাবে অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। যদি তিনি আর সেখানে যোগদান না করেন, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি কেন অফিসে আসছেন না, সে বিষয়ে আমি জানি না। তবে বিষয়টি আমাদের কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেছি।