দামুড়হুদায় ৫০ কেজি মরিচ বিক্রি করেও কেনা যাচ্ছে না এক কেজি চাউল

দামুড়হুদায় ৫০ কেজি মরিচ বিক্রি করেও কেনা যাচ্ছে না এক কেজি চাউল

দামুড়হুদা উপজেলায় মরিচের ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত কৃষকরা। ৫০ কেজি মরিচ বিক্রি করেও কেনা যাচ্ছে না এক কেজি চাউল। ফসলের জমি থেকে মরিচ চাষিরা তাদের মরিচ সংগ্রহ করতে কেজিতে খরচ হচ্ছে ১০-১২ টাকা। ক্ষেত থেকে কেজি প্রতি মরিচ তুলতে চাষিদেরকে শ্রমিকদের দেওয়া লাগছে ৮-১০ টাকা।

এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি গ্রামীণ নারী সহ শিশুরাও ক্ষেত থেকে মরিচ তুলছে। চাষির ক্ষেতে মরিচ তুলে অর্থ উপার্জনে অংশ গ্রহণ করে আসছেন।সেমতে গত সপ্তাহে মরিচের পাইকারি বাজার ছিল ১৫-১৬ টাকা।যা বর্তমান বাজার দরের চাইতে ৪-৫ টাকা কেজিতে বেশি। সেসময় ১’শ কেজি মরিচ বিক্রি করে চাষিরা পাচ্ছিলেন ১৫’শ থেকে ১৬’শ টাকা। এর মধ্যে ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ, পরিবহন ভাড়া ও হাটের ভাড়া মিটানোর পর চাষিদের পকেটে ডুকছিলেন কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা করে অর্থাৎ ১’শ কেজি মরিচ বিক্রি করে চাষিরা পাচ্ছিলেন ৩০০-৪০০ টাকা। তবে বর্তমানে মরিচের পাইকারি বাজারে আরো ধস নামেন ফলে এখন সে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০-১১ টাকা ধরে। আর মরিচের ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ করে তা বাজরে নেওয়া পর্যন্ত খরচ হচ্ছে ৯-১১ টাকা।

জেলার পাইকারি ও স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মরিচ চাষিদের কাছ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মরিচ সংগ্রহ করছেন ১০-১২ টাকা পর্যন্ত।এ মরিচ সংগ্রহের পর ট্রাক, মিনি ট্রাক, আলমসাধু সহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তা রাজধানী ঢাকা সহ৷ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

একই সময় চাল ও আটার বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি মোটা চাউল কিনতে ভোক্তা সাধারণের গুনতে হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকা আর আটা কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬০- ৬২ টাকা। সেমতে একজন কৃষক তার জমি থেকে ১’শ কেজি মরিচ সংগ্রহ ও বিক্রি করার পর সব খরচ মিটিয়ে বাজরের ১ কেজি সর্বনিম্ন চালও কিনা কঠিন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক মরিচ চাষিরা।চাষির স্বপ্নের কষ্টের মরিচ ক্ষেত থেকে ১-২’শ কেজি মরিচ বিক্রি করেও ৫২ টাকা মূল্যের ১ কেজি চাল কিনতে কষ্ট হচ্ছে।নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে মরিচের পাইকারি বাজারে ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিলেন।

ফলে চাষিরা তাদের ক্ষেতের ৫০ কেজি মরিচ বিক্রি করার পর বাজরের সর্বনিম্ন চাল কিনতে পারছিলেন।নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর পর এ পণ্যের বাজারে আবার নতুন করে ধস নামেন। ফলে মরিচের পাইকারি মূল্য এসে দাঁড়িয়েছেন ১০-১১ টাকা। সেক্ষেত্রে চাষির মরিচের ক্ষেতের মরিচ সংগ্রহ করে১’শ কেজি বিক্রি করার পরও সব খরচ মিটিয়ে ১ কেজি চাল কিনতে পারাটা হয়েছে কষ্টস্বাধ্য। মরিচের এমন দামে হতাশ প্রকাশ করেছেন দামুড়হুদা উপজেলার মরিচ চাষিরা। সেজন্য বিভিন্ন ফসলের মাঠের মরিচের ক্ষেত থেকে মরিচ তুলতে উন্মুক্ত করে দিতে দেখা গেছে চাষিদেরকে।

বর্তমান সময়ে একজন চাষির মরিচ ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ করে বাজারে নেওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে। ফলে এখন মরিচের ক্ষেত থেকে চাষিরা মরিচ সংগ্রহ না করে আশপাশ এলাকার নারী,পুরুষ, শিশুরা দলে দলে চাষির মরিচের ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ করছে।এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি যদি ১০ কেজি মরিচ তুলেন সেক্ষেত্রে জমির মালিককে ৫ কেজি দেওয়া লাগছে। মাঠ বাদেও চাষিরা তাদের জমি থেকে সব মরিচ গাছ তুলে নিয়ে গাড়ি যোগে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।এরপর ঐ চাষির বাড়ির আশপাশের প্রতিবেশিদের খবর দিচ্ছে মরিচ নেওয়ার জন্য।

দামুড়হুদা উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদীর তীরবর্তী৷ মরিচের ক্ষেতে মরিচ তুলছেন একাধিক নারী – পুরুষ সহ শিশুরা।এসময় তাদের সাথে কথা হলে তাদের সকলেই জানিয়েছেন, বাজারে মরিচের দাম খুবই কম। ফলে জমির মালিকরা মরিচ তুলছেন না। জমি থেকে মরিচ ছুড়াতে যা খরচ হচ্ছে তাতে করে চাষির পকেট থেকে টাকা যাচ্ছে।সে কারনে তারা মরিচ না তুলে, মরিচ গাছ কেটে ফেলছেন, আবার কোন কোন এলাকাতে জমিতেই রেখে দিচ্ছেন গাছ।

মুরাদ হোসেন নামের এক মরিচ চাষি বলেন, প্রতিবারের মতন এবার তার মরিচ গাছ ছিলেন।শুরুতেই তিনি ৬-৭ কেজি ঝাল ২১০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলেও গাছে ঝাল না আসার কারণে পরবর্তীতে আর দাম পাননি। চলতি মাসের প্রথম দিকে দর্শনা পাইকারি কাঁচা বাজারে ১৫ টাকা দরে ৫০ কেজি মরিচ বিক্রি করেিেছলেন তিনি। দাম পেয়েছিলেন ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে জমি থেকে ঝাল সংগ্রহ করতে শ্রমিক খরচ লাগছিলো ১০ টা কেজি অনুযায়ী ৫’শ টাকা, বাজার পর্যন্ত ঝাল বিক্রির জন্য নেওয়ার পরিবহন ভাড়া ৫০ টাকা, হাটের খাজনা মিটিয়ে ১’শ থেকে ২’ শ টাকা পকেটে আসছিলেন। কিন্তু এখন বাজারে ৫০ কেজি বাদেই দিলাম ১’শ কেজি মরিচ যদি বাজারে নেন তাহলে সব খরচ মিটিয়েও বাজের সর্বনিম্ন চালও ১ কেজি কেনা বড় দায় হবে।