ধরাছোঁয়ার বাইরে মাদকের মূলহোতারা

মাদকের আন্ডরওয়ার্ল্ডে তারা ডন হিসেবে পরিচিত। বলা হয় মাদকের গডফাদার। মেহেরপুরের মাদকের এক গুচ্ছ নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই। ভালো মানুষের মুখোশ পরে সমাজপতির ভুমিকায় চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের ব্যবসা। এদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে আছে অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ। এইসব ব্যবসা করে রাতারাতিই বনে যাচ্ছে টাকার কুমির। কখনো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আবার কখনো শ্রমজীবী সংগঠনের ছত্রছায়ায় তারা দিনের পর দিন হয়ে উঠছে বেপরোয়া।

মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও মাদক বিরোধী অভিযানের জন্য পুলিশের বিশেষ টিম এই সব গড ফাদারদের আটকে অভিযান পরিচালনা করছে। কয়েক জনকে আটক করতে সক্ষম হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে অনেকেই। মাদক নির্মূলে তাদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে কাজের কাজ কিছুই হবে। নতুন নতুন ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা তৈরি করে শাষন করবে সমাজকে। আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে।

‘মেহেরপুর প্রতিদিন’ এর এবারের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু মাদকের গডফাদারদের নাম।

এদের মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলার দক্ষিন শালিকা গ্রামের হায়াত আলীর ছেলে মিঠু। এর বিরুদ্ধে ২টি মাদকের মামলা সহ ৫টি মামলা রয়েছে। এলাকায় মাদকের গডফাদার হিসেবে পরিচিত। সীমান্তবর্তী গ্রাম হওয়ায় খুব সহজেই ভারতীয় ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য মিঠু বাংলাদেশে নিয়ে আসে। বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে মেহেরপুর সহ বাংলাদেশের বেশ কয়েক জায়গায় মাদক সরবরাহ করে। পুলিশের হাতে বেশ কয়েকবার ধরা পড়লেও বন্ধ হয়নি তার মাদক ব্যবসা।

মেহেরপুর বাসস্ট্যান্ড পাড়ার মৃত শফিউদ্দিন এর ছেলে নজরুল ইসলাম ওরফে নজু। এর বিরুদ্ধে মাদক মামলাসহ ৪টি মামলা রয়েছে। নজু মেহেরপুর জেলা মটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক কার্যকরি সভাপতি।

নজরুল ইসলাম নজুর ছেলে রানা সেও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধেও ২টি মাদক মামলাসহ ৪টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি অবৈধভাবে যৌন উত্তেজক সিরাপ তৈরি ও বিক্রির দায়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে রানা আটক হয়। সেই সাথে তার পিতা নজরুল ইসলাম নজু পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করে। বর্তমানে রানা জেলা হাজতে আটক থাকলেও নজরুল ইসলাম নজু জামিনে মুক্ত আছে।

এছাড়াও নজুর ভাই মনিরুল ইসলামের ছেলে সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান পলেন। রাজনীতির আড়ালে দির্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩০ বোতল ফেন্সিডিল ও জাব্বারুল নামের তার এক সহযোগীসহ তাকে আটক করে সদর থানা পুলিশ। বর্তমানে পলেন জেল হাজতে রয়েছে।

গাংনী উপজেলার বামুন্দি নিশিপুর গ্রামের বিচার উদ্দিন ওরফে ভজার ছেলে হাবিবুর রহমান হবি। তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলাসহ ৬ টি মামলা রয়েছে। মেহেরপুর প্রতিদিন’র অনুসন্ধানে তারই নামটি বেশ জোরালো ভাবে উঠে এসেছে। হবি জেলা মটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সহ সভাপতি ও শ্রমিকলীগ নেতা।
মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে হবি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা ছির যা ইতিমধ্যে মিটে গেছে। আর মাত্র দুইটি মামলা আছে এর মধ্যে ১টি অস্ত্র মামলা। এটাও অল্পদিনের মধ্যে মিটে যাবে’।

গাংনী উপজেলার করমদি গ্রামের ফরমান আলী শেখ ওরফে ফেলার ছেলে জোহা। মাদক দ্রব্য সীমান্ত পার করে আনার নায়ক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদক সরবরাহ করে থাকে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রবিউল ইসলাম মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মাদক নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে অনেকটা সফল। প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। সেই সাথে সফলতার সাথে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে আমরা সক্ষম হয়েছি’।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী বলেন, ‘ইতিমধ্যে মেহেরপুর জেলার মাদক সম্্রাট বলে যারা পরিচিত তাদের আটক ও আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মাদক নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রতিটি থানা প্রাঙ্গনে মাদক বিরোধী সমাবেশ করা হচ্ছে। সেই সাথে পুলিশের একটি চৌকস দল মাদক নিয়ন্ত্রনে সব সময় কাজ করছে’।

তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা জানেন আগামী ১ মার্চ মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মেহেরপুরে আসবেন। এসময় তিনি মাদক ও জঙ্গি বিরোধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। আমরা আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে মেহেরপুর থেকে মাদক সম্পূর্ন ভাবে নির্মূল করতে আমরা সক্ষম হবো’।

(মেহেরপুর প্রতিদিন’ এর মাদক নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চলবে)…