নির্বাচনী সহিংসতা রুখতে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়াতে হবে

২য় ধাপে মেহেরপুরের ৯টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো গেল ১১ নভেম্বর। নির্বাচনের আগে ও পরে কয়েকটি ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সহিংসতায় গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের লক্ষিনারায়ণপুর ধলা গ্রামে ২জনের প্রাণহানিসহ আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন।

এসকল সহিংসতায় ব্যবহার করা হয়েছে দেশীয় অস্ত্র। তার মধ্যে রয়েছে হাসুয়া, লাঠি, বল্লম, রামদা, মাথাল, গিয়ার,টেটাসহ কয়েক প্রকারের অস্ত্র।

মেহেরপুরে নির্বাচনের দিন পুলিশ প্রশাসনের যে তৎপরতা লক্ষ্যে করা গেছে একই তৎপরতা তফসিল ঘোষনার পর থেকে শুরু হলে সহিংসতা এড়ানো যেত। নির্বাচন পূর্ব সময়ে বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের অভিযানও দেখা যায়নি। তবে নির্বাচন পূববর্তী সময়ে র‌্যাবের অভিযানে দুজন আটক হয়েছে দুটি অস্ত্র সহ।

গত ৩ নভেম্বর কাথুলী ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়াতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মীসভায় গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। ওই মঞ্চে প্রধান অতিথির সফরসঙ্গী হয়ে শর্টগান নিয়ে মঞ্চে প্রদর্শণ করেন হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে পরদিন গাংনী থানা অস্ত্রটি জমা নেয়।

৮ নভেম্বর কাথুলী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড লক্ষিনারায়ণপুর ধলা গ্রামে ইউপি সদস্য প্রার্থী আজমাইন হোসেন ভোট চাইতে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আতিয়ার রহমানের কর্মী তার উপর হামলা চালায়। এসময় সে গুরতর আহত হয়। তার চিৎকারে মামাত দুই ভাই জাহাদুল ইসলাম ও সাহাদুল ইসলাম বাঁচাতে গেলে তাদেরকে দেশী অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ ও র‌্যাবের পৃথক দুটি টিম আতিয়ারের ভাইয়ের বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা কয়েক প্রকার দেশী অস্ত্র উদ্ধার করে। এ দুটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়।

নির্বাচনের দিন দুটি সেন্টারে প্রার্থীদের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। এছাড়া তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি।

অস্ত্র উদ্ধারে যেমন পুলিশের তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। অপরদিকে জেলা প্রশাসনও বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ জুলফিকার আলী বলেন, নির্বাচনী পূর্ববর্তী এক মাস আগে জেলা পুলিশের কোন অস্ত্র উদ্ধার নেই। পুলিশ সুপারের নির্দেশ ছিলো নির্বাচনি সহিংসতা এড়াতে সকল ধরণের অভিযান পরিচালনা করতে এবং বিশেষভাবে নজরদারি করতে।

সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) মেহেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেছেন, নিবাচনে সহিংসতা মোটেও কাম্য নয়। কাথুলীতে সহিংসতার কারণে যে দুটি প্রাণহাণি হয়েছে অত্যন্ত দু:খজনক। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল। অস্ত্র প্রদর্শণের কথা শুনেছি সেখানেও আরো একটু নজরদারির দরকার ছিল।
মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মো: রাফিউল আলম বলেছেন, নির্বাচন পূর্ববর্তী এক মাসের মেহেরপুরে কোন অস্ত্র উদ্ধার নেই এটা ঠিক। তবে পুলিশ বিভাগের তৎপরতা অব্যাহত ছিলো নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা যাতে না হয়। কাথুলীর সহিংসতা দীর্ঘদিনের একটি দ্বন্দ্বের জেরে ঘটেছে। নির্বাচনের প্রচারণাকে বিরোধী পক্ষ সুযোগ নিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। এরপর আমরা অনেকগুলো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছি।

তিনি আরো বলেছেন, কাথুলীর গাড়াবাড়িয়াতে যে ব্যক্তি অস্ত্র প্রদর্শণ করেছিলেন আমরা জানার পর সেটি থানা হেফাজতে নিয়েছে। তার লাইসেন্সের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তবে এ ধাপের নির্বাচন সহিংসতার বিষয়টি নিয়ে সামনে নিয়ে ২৮ নভেম্বরের নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে পুলিশে আরো সজাগ হবে।

সহিংসতা, প্রাণহানির মধ্যে আতঙ্ক ছাপিয়ে দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই মেহেরপুরের ৯টি ইউপিতে নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে। এমন নির্বাচন করতে সহায়তা করায় প্রশাসনকে সাধুবাদও জানিয়েছেন ভোটাররা। আমরা প্রত্যাশা করবো আগামি সকল নির্বাচন সুষ্ঠ হোক, সহিংস মুক্ত হোক। গণতন্ত্রের এ ধারা অব্যাহত থাকুক।