প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ যাবেন ১০৫ কর্মকর্তা

বৈদেশিক প্রশিক্ষণে ব্যয় হবে ৭৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা * একনেকের জন্য প্রস্তুত ৬৩৪ কোটি টাকার সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্প * অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে -পরিকল্পনামন্ত্রী

এবার সড়কের সাইন-সিম্বল-রোড মার্কিং দেখতে বিদেশ যাবেন ১০৫ কর্মকর্তা। এজন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

‘জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে এ আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত পরামর্শক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। বলা হয়েছে, পরামর্শক সেবা খাতের ব্যয় পর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে হ্রাস করতে হবে।

ইতোমধ্যেই প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) যে কোনো বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশ সফর প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফরকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর কারণে প্রধানমন্ত্রীসহ আমরা সবাই চাচ্ছি ব্যয় সাশ্রয় করতে।

গত একনেক বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকল্পটি আমার কাছে এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

সূত্র জানায়, ‘জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে নিরাপত্তা উন্নয়ন’ নামের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদন পেলে সরকারি তহবিলের অর্থে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)।

জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে যথাযথমানে সাইন-সিম্বল ও রো মার্কিং স্থাপনসহ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ করিডোরগুলো উন্নয়ন করাই এটির প্রধান উদ্দেশ্য। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।

ওই সভায় দেয়া বিভিন্ন সুপারিশ প্রতিপালন করায় এটি একনেকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে তিন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ২৫৭ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এতে খরচ হবে প্রায় ৩ কোটি টাকা।

এর মধ্যে ১০৫ কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ।

এছাড়া স্থানীয় প্রক্ষিণের জন্য এক হাজার ১৫২ জনের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৪৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে দুই হাজার জনের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (প্ল্যানিং অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স ইউনিট, ঢাকা) একেএম মনির হোসেন পাঠান বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা এখনো উন্নত বিশ্ব থেকে পিছিয়ে । দক্ষতা উন্নয়ন ছাড়াই প্রকল্পের টাকা খরচ হলেও সেভাবে কাজে লাগবে না। তাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন,এ প্রকল্পে এমন কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে সেগুলো দেশের প্রচলিত বা পরিচিত ব্যবস্থা নয়। সড়ক নিরাপত্তার জন্য নতুনভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। তাছাড়া আমরাদের চিন্তা ভবনা উন্নত করতেও বিদেশ সফর ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর থেকে প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এ অধিদফতরের অভিষ্ট লক্ষ্য হল মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, মেরামত ও সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ জাতীয় মহাসড়ক গড়ে তোলা। বর্তমানে সওজের অধিদফতরের আওতাধীন মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২২ হাজার ৩৭৫ কিলোমিটার।

এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক তিন হাজার ৮১৩ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক চার হাজার ৭০৩ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার ৮৩৫ কিলোমিটার। এর আগে জাতীয় মহাসড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলোতে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১২১টি স্পটে নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম (সড়ক প্রশস্তকরণ, ডিভাইডার নির্মাণ, ট্রাফিক সাইন-সিম্বল) বাস্তবায়ন করা হয়।

কিন্তু জাতীয় আঞ্চলিক মহাসড়কের পাঁচ হাজার ৫০০ কিলোমিটার অংশে নিরাপত্তা এখনো যথাযথমানে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি।

এর মধ্যে ঢাকায় ৭৩৩ কিলোমিটার, চট্টগ্রামে ৭২১ কিলোমিটার, খুলনায় ৯০০ কিলোমিটার, গোপালগঞ্জে ২৭৬ কিলোমিটার, রাজশাহীতে ৭৫০ কিলোমিটার, ময়মনসিংহে ৪৪১ কিলোমিটার, সিলেটে ৪৯১ কিলোমিটার, রংপুরে ৫৪৭ কিলোমিটার, কুমিল্লায় ৩১১ কিলোমিটার এবং বরিশালে ৩৩০ কিলোমিটার মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীত হয়নি। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, হাইওয়ে পুলিশের চিহ্নিত ৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া ৫০টি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ স্থান উন্নয়ন।

১৪৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার মারাতত্মক ঝুঁকিপূর্ণ করিডোর উন্নয়ন। ৪৮ হাজার ৩৩৩টি ট্রাফিক সাইন, ৪৯০টি বিশেষ সাইন, ছয় লাখ ৩১ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার রোড মার্কিং করা হবে। এছাড়া ৬৮ দশমিক ৭৫ সার্ফেসিংসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। সূত্র-যুগান্তর